খুলনা জেনারেল হাসপাতালের
করোনা টেস্টের টাকা আত্মসাৎ

স্টাফ রিপোর্টার ঃ অতিবাহিত হয়েছে ১০দিন। এখনও খোঁজ মেলেনি খুলনা জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট প্রকাশ কুমার দাসের। আবার দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক থেকে তার বিরুদ্ধে মামলারও অনুমতি মেলেনি।
এদিকে, প্রকাশ দাসের স্ত্রী এবং খুলনা শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের ফার্মাসিষ্ট মাধবীলতা বিগত দু’দিন ধরে নগরীর খালিশপুর থানায় যোগাযোগ করেও জিডি করতে পারেননি।
সব মিলিয়ে অনেকটা ধু¤্রজালই সৃষ্টি হয়েছে সার্বিক বিষয়টি নিয়ে। যেহেতু এখন পর্যন্ত প্রকাশের বিরুদ্ধে করোনা টেষ্টের দুই কোটি ৫৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগটি সামনে রয়েছে সে ক্ষেত্রে তাকে উদ্ধার বা গ্রেফতারের পরই হয়তো আসল রহস্য বের হয়ে আসতে পারে। এজন্য পুলিশ, দুদক, গোয়েন্দা সংস্থা সকলেরই এখন একটাই চাওয়া ‘প্রকাশের উপস্থিতি’। এমনকি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক কাম সিভিল সার্জনও বলেছেন, দুর্নীতির সাথে আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে। কিন্তু তার আগে প্রকাশের উপস্থিতিটা জরুরি। এজন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলো হন্যে হয়ে খুঁজছে প্রকাশকে। তবে যেহেতু মোবাইল বন্ধ সে কারণে এখন পর্যন্ত তার কোন সন্ধান মেলাতে পারেনি কেউ।
খুলনা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট(ল্যাব:) প্রকাশ কুমার দাস গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে নিখোঁজ হন। খুলনার সিভিল সার্জন ডা: নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, তার বিরুদ্ধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে দেখা যায় বিদেশগামী যাত্রীদের করোনা পরীক্ষার ইউজার ফি বাবদ আদায়কৃত টাকা থেকে অন্তত: দু’কোটি ৫৮ লাখ টাকায় ঘাপলা পাওয়া যায়। যে টাকা তিনি সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। তাকে ওই টাকার জন্য চাপ দেয়া হলে তিনি ২৩ সেপ্টেম্বর দুপুর থেকে লাপাত্তা। এরপর ২৫ সেপ্টেম্বর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক কাম সিভিল সার্জন বাদী হয়ে কেএমপির খুলনা থানায় একটি জিডি করেছেন। এ বিষয়ে তিনি খুলনা দুদকে একটি লিখিত অভিেেযাগ দেন। দুদক ওই অভিযোগ ঢাকায় পাঠিয়ে কেন্দ্রীয় অনুমোদন চেয়েছে। কিন্তু বিগত এক সপ্তাহেও এ ব্যাপারে কোন অনুমতি আসেনি।
খুলনা দুদকের উপপরিচালক মো: নাজমুল হাসান গতকাল রাতে বলেন, গত ২৮ সেপ্টেম্বর সিভিল সার্জনের অভিযোগটি দুদকের ঢাকা অফিসে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু গতকাল রোববার পর্যন্ত এ ব্যাপারে মামলা করার কোন অনুমতি আসেনি। যে কারণে এখন পর্যন্ত মামলা দায়ের হয়নি দুদকের পক্ষ থেকে। তবে অনুমোদন আসলেই মামলা দায়ের করে গণমাধ্যমকর্মীদের জানানো হবে।
অপরদিকে, বিগত ১০দিন ধরে প্রকাশ নিখোঁজ থাকায় তার পরিবারেও দেখা দিয়েছে হতাশা। তার স্ত্রী মাধবীলতা খুলনা শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের ফার্মাসিষ্ট হিসেবে কর্মরত। গত শনিবার ও গতকাল রোববার তিনি খালিশপুর থানায় গিয়েছিলেন তার স্বামী নিখোঁজের বিষয়টি জানিয়ে জিডি করতে। কিন্তু পুলিশ বলছে, এটি নিয়ে দুদকসহ বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে, তাই জিডি হবে না। খালিশপুর থানার ওসি তাকে জানিয়েছেন প্রকাশের বিরুদ্ধে দুদকসহ একাধিক সংস্থা খোঁজ-খবর নিচ্ছে। তার সন্ধানের জন্য মোবাইল ট্র্র্যাকিং হচ্ছে। সুতরাং তার সন্ধান চেয়ে কোন জিডি নেয়া হবে না।
এ ব্যাপারে খালিশপুর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মো: কামাল হোসেন বলেন, যেহেতু বিষয়টি একটি স্পর্শকাতর সেহেতু জিডি হবে না। তাছাড়া তিনিতো খালিশপুর থানা এলাকা থেকে নিখোঁজ হননি। তিনি তার বোনের মৃত্যুর খবর পেয়ে বাড়িতে গিয়ে নিখোঁজ হন। সুতরাং জিডি হলে সংশ্লিষ্ট থানায় হবে, খালিশপুরে নয়।
অপরদিকে, খুলনা জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিষ্টের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের যে অভিযোগটি এখন পর্যন্ত রয়েছে সেটি অনেকটা এক তরফা। যে কারণে প্রকাশের উপস্থিতিই এখন মূল লক্ষ্য। এ নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। সিভিল সার্জন নিজেও এমনটা ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, আগে প্রকাশ উদ্ধার হোক, তারপর তিনি বলুক টাকা আত্মসাতের সাথে আর কারা কারা জড়িত। অর্থাৎ প্রকাশের উপস্থিত না হওয়া পর্যন্ত সার্বিক বিষয়টি ঘোলাটেই থেকে যাচ্ছে বলেও মনে করছেন সচেতন মহল।