করোনা ইউনিট বন্ধ না করায়
সাধারণ রোগীরা সেবা বঞ্চিত

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ খুলনার গুরুত্বপূর্ণ একটি হাসপাতাল শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল। রয়েছে ১০টি আইসিইউ বেড। এর বাইরে খুলনায় সরকারি হাসপাতালে আর কোন আইসিইউ বেড নেই। শুধুমাত্র খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পোষ্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে চারটি পৃথক বেডকে আইসিইউ সুবিধা দিয়ে সেখানে মূমূর্ষ রোগীদের রাখা হয়। ওই হাসপাতালের আইসিইউ ভবনটি এখন করোনা হাসপাতাল হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি একেবারেই শূন্যের কোটায় না আসা পর্যন্ত সেটি সাধারণ রোগীদের জন্য উম্মুক্ত করার কোন সুযোগ নেই। অর্থাৎ এই মুহূর্তে কোন সাধারণ রোগীর আইসিইউ’র প্রয়োজন হলে তাদেরকে গুনতে হবে বিপুল পরিমান অর্থ। যেতে হবে প্রাইভেট কোন হাসপাতালে। যে সঙ্গতি অনেকেরই নেই। এজন্য খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের আইসিইউ ওয়ার্ডটি সাধারণ রোগীদের জন্য উম্মুক্ত করা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
যদিও খুলনা জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো: মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, বিষয়টি নিয়ে আগামীকাল রোববার কথা বলা হবে। যেহেতু আগেই বলা হয়েছিল করোনা রোগী না থাকলে সাধারণ রোগীদের জন্য হাসপাতালটি উম্মুক্ত করা হবে। সুতরাং এটি গুরুত্বের সাথেই দেখা হবে বলেও তিনি জানান।
তবে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব ও খুলনার সিভিল সার্জন ডা: নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, আবু নাসের হাসপাতালে যে করোনা রোগী নেই সেটি লিখিত আকারে কমিটিকে জানাতে হবে। তা না হলে কমিটি বুঝবে কিভাবে যে, সেখানে রোগী নেই ?
যদিও এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট অপর সূত্রগুলো বলছে, প্রতিদিনই খুলনার চারটি হাসপাতালের করোনা ইউনিটের রিপোর্ট জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জনসহ সরকারি একাধিক দপ্তরে পাঠানো হয়। গত ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে যে করোনা রোগী নেই সেটি আবার লিখিত আকারে জানানোর প্রয়োজন আছে কি না সেটিও প্রশ্নের দাবি রাখে।
তাছাড়া গত ১৯ সেপ্টেম্বর জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভা থেকে আবু নাসের হাসপাতালের করোনা ইউনিটের একটি অংশ বন্ধের সিদ্ধান্তের সাথে সাথেই করোনার সাধারণ ওয়ার্ডের দু’জন রোগীকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। তখন আইসিইউ’র ১০টি বেডের মধ্যে মোট রোগী ছিলেন চারজন। এরপর ওই চারজনের একজনের মৃত্যু হলেও বাকী তিনজন সুস্থ্য হন। গত ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে হাসপাতালটি পুরোপুরি করোনামুক্ত হয়। গতকাল পর্যন্ত রোগীবিহীন অতিবাহিত হয় পাঁচদিন। কিন্তু এখনও সাধারণ রোগীদের জন্য উম্মুক্ত করা হয়নি সেটি।
১৯ সেপ্টেম্বরের সভা থেকে আবু নাসের হাসপাতালের করোনা ইউনিটের একাংশ বন্ধের পর মহানগর করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও সিটি মেয়র আলহাজ¦ তালুকদার আব্দুল খালেক বলেছিলেন, সেখানে অবস্থানরত বর্তমান রোগীরা সুস্থ হলেই আবু নাসের হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগটি আগের ন্যায় সাধারণ রোগীদের জন্য উম্মুক্ত করা হবে। অর্থাৎ নগর করোনা কমিটির সভাপতির সেই বক্তব্যেরও প্রতিফলন হয়নি বিগত পাঁচদিনেও।
আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা: প্রকাশ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, করোনার আর একটি ঢেউ এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের দিকে আসতে পারে এমন আশংকার কারনেই এখন পর্যন্ত পুরোপুরি করোনা ইউনিট বন্ধের প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে না। তাছাড়া হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা ডাকা হয়েছে আগামী ১২ অক্টোবর। ওই সভা থেকেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
অবশ্য অপর একটি সূত্র বলছে, আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে ৪৫ বেডের করোনা ইউনিট চালু হয় গত ৩ জুলাই থেকে। কিন্তু সেখানে করোনা ইউনিট চালু হলেও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটিকে আগে থেকে জানানো হয়নি। এজন্য করোনা কমিটির সাথে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির কিছুটা বিরোধেরও সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ অনেকটা সমন্বয়হীনতাও চলছে গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি নিয়ে।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, খুলনাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার যে লক্ষ্য নিয়ে শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালটি তৈরি হয়েছিল করোনা ইউনিট নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার ফলে সেটি ব্যহত হচ্ছে। অথচ আইসিইউ’র মতো একটি স্পর্শকাতর ইউনিট দিনের পর দিন বন্ধ থাকলেও তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের এমন উদাসীনতা সত্যিই দু:খজনক।
খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব এড. মো: বাবুল হাওলাদার বলেন, একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে আবু নাসের হাসপাতালের একটি অংশকে করোনা ইউনিট করা হয়েছিল। কিন্তু এখন আল্লাহর রহমতে করোনা পরিস্থিতি মোটামুটি উন্নতির দিকে। সুতরাং সকল প্রকার আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কাটিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেখানের আইসিইউ বিভাগকে সাধারণ রোগীদের জন্য উম্মুক্ত করা উচিত। তা’ না হলে গরীব, নি¤œ ও মধ্যবিত্ত মানুষগুলো আইসিইউ বেসা থেকে বঞ্চিত হবে।
খুলনার চার হাসপাতালে ৩৭৫ বেডের ৩০৮টিই খালি ঃ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আওতাধীন ২শ’ শয্যা বিশিষ্ট করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে গতকাল সকাল পর্যন্ত রোগী ছিলেন ৫১জন। অর্থাৎ বেড খালি রয়েছে ১৪৯টি। এর মধ্যে ২০টি আইসিইউ ও ২০টি এইচডিইউ ইউনিটে রোগীর সংখ্যা ১০জন। অর্থাৎ সেখানেও ৩০টি বেড ফাঁকা রয়েছে। এছাড়া বেসরকারি দু’টি হাসপাতাল যথাক্রমে গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ১৫০ বেডের স্থলে পাঁচজন এবং সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ১৫টি বেডের স্থলে ১১জন রোগী ছিলেন গতকাল সকাল পর্যন্ত। আর আবু নাসের হাসপাতালে পাঁচদিন ধরে কোন রোগী নেই। অর্থাৎ সরকারি-বেসরকারি এই চারটি হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ৩৭৫টি বেডের স্থলে ৬৭জন রোগী থাকায় বেড ফাঁকা রয়েছে ৩০৮টি।