সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিদ্যা ও জ্ঞানের দেবী সরস্বতীর চরণে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে বিদ্যা দেবীর আরাধনায় দিন কাটিয়েছে শিক্ষার্থীরা। প্রতিবারের মতো এবারও দেশের সবচেয়ে বড় আয়োজন করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে। অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করে আলোকিত মানুষ হওয়ায় প্রত্যাশায় দেবী বীণাপাণির কৃপা প্রার্থনা করেন শিক্ষার্থীরা। এদিন সকাল ৬টায় প্রতিমা স্থাপনের মাধ্যমে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।পরে নতুনদের হাতেখড়ি, বাণী অর্চনা, আরতি ও পুষ্পাঞ্জলি নিবেদনের বিদ্যা ও ললিতকলার দেবী সরস্বতীর আরাধনা করলেন দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।সরস্বতী পূজা উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল ছাড়াও ছাত্রীদের জন্য বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, রোকেয়া হল, শামসুন নাহার হল, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল এবং কবি সুফিয়া কামাল হলে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।পূজাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা জগন্নাথ হলের মাঠ জুড়ে বিভিন্ন ‘থিমের’ আদলে ৭৩টি মণ্ডপ তৈরি করে প্রার্থনা করেন। অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করে আলোকিত মানুষ হওয়ায় প্রত্যাশায় দেবী বীণাপাণির কৃপা প্রার্থনা করেন তারা।জগন্নাথ হলে সকাল সকাল সাড়ে ৬টায় প্রতিমা স্থাপনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে পূজার কার্যক্রম শুরু হবে। এরপর সাড়ে ৭টায় বাণী বন্দনা, ৮টা ১০মিনিটে পুষ্পাঞ্জলি, সাড়ে ১১টায় প্রসাদ বিতরণের মাধ্যমে পূজার কার্যক্রম শেষ হয়। ৯টায় বাণী অর্চনার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় পূজা। পুরোহিত ‘সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমল লোচনে/বিশ্বরূপে বিশালাক্ষী বিদ্যংদেহী নমোহস্তুতে’ মন্ত্রপাঠ করে দেবীর আশীর্বাদ কামনা করেন। এরপর ভক্তরা দেবীকে পুষ্পাঞ্জলি দেন।বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ নানা পেশার মানুষ সেখানে সরস্বতীর আরাধনা করেন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসেছিলেন সাবেক শিক্ষার্থীরাও।পূজাস্থলে আসা শিক্ষার্থী শিমু আক্তার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর এটা আমার প্রথম পূজা। সনাতন ধর্মবলম্বীদের পূজা হলেও সব ধরনের শ্রেণি-পেশার মানুষের উপস্থিতি রয়েছে পূজায়। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা আসছেন দেবীর আরাধনা করতে, অন্য ধর্মের মানুষদের কেউ আসছেন ঘুরতে, কেউবা পূজা দেখতে। এ পূজা থেকেই আমরা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের শিক্ষা নিতে পারি।জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থী রাজিব দাস বলেন, প্রতিবছরই বিদ্যার দেবীর আরাধনা করে থাকি। আড়ম্বরপূর্ণভাবে এ পূজার অনুষ্ঠানিকতা হয়। মাঝের করোনার দুই বছর বাদে এবারও আড়ম্বরপূর্ণভাবে আনুষ্ঠানিকতা হচ্ছে। সকাল থেকে পুণ্যার্থীরা এসেছেন। খুব ভালো লাগছে। মায়ের কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদের জ্ঞানের চক্ষু খুলে দেন। সুন্দর মন ও চিন্তাশক্তি দান করেন।প্রতিবছর মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে বিদ্যাদেবীর পূজা হয়। হাতে বীণা থাকে বলে সরস্বতীকে বীণাপাণিও বলা হয়। সাদা রাজহাঁস এই দেবীর বাহন। ঐতিহ্য অনুযায়ী এদিন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মন্দিরে সন্তানদের প্রথম বিদ্যার পাঠ হতেখড়ির আয়োজন করেন।সরস্বতী পূজা উপলক্ষে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মিহির লাল সাহা বলেন, সরস্বতী বিদ্যা, সংস্কৃতি ও সংগীতের দেবী। গত দুই বছর করোনার মধ্যে মানুষ বিষণ্ণতার মধ্যে ছিল। দেবীর কাছে আমাদের প্রার্থনা, করোনা পরবর্তী নতুন পৃথিবীতে জ্ঞানের আলোয় বিষণ্ণতা দূর করে একটি নতুন পৃথিবী গড়ে উঠুক। যে পৃথিবীতে সকল ধর্ম, বর্ণের মানুষের জন্য একটি শান্তির নিবাস গড়ে উঠুক। মায়ের কাছে প্রার্থনা, আমরা সব সময় শান্তি চাই। মানুষের মধ্যে ভালো ও মন্দ দু’টি দিক আছে। আমরা চাই ভালোর দিকটা ওপরে চলে আসুক। মানুষের মধ্যে বিবাদ দূর হোক।সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান এসব হলের পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করে হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ সকলকে শুভেচ্ছা জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার, হলসমূহের প্রাধ্যক্ষসহ আবাসিক শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।উপাচার্য বলেন, সরস্বতী বিদ্যা, জ্ঞান ও সুরের দেবী। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে সরস্বতী পূজা। বিদ্যা দেবীর আরাধনার মাধ্যমে অকল্যাণ ও অশুভ শক্তির বিনাশ হবে এবং মানুষের মধ্যে সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটবে। অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক মূল্যবোধ ধারণ করে সকল ধর্ম ও মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে সত্য, সুন্দর, সম্প্রীতি ও জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হওয়ার জন্য উপাচার্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান।