জলমা ইউনিয়ন
পরিষদ নির্বাচন

এ এইচ হিমালয় : শেষ ধাপে এসে বিভিন্ন ঘটনার সাক্ষী হলো জলমা ইউনিয়ন পরিষদের ভোটাররা। গত কয়েক রাত ধরে চলা ব্যাপক ধরপাকড় শহরতলীর বাসিন্দাদের কাছে ছিলো এক নতুন অভিজ্ঞতা। বৃহস্পতিবার রাতে অভিজ্ঞতার সেই ঝুলিতে যুক্ত হলো ভোটের আগে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ‘সরে দাঁড়ানোর’ ঘটনা।
প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন ইউনিয়নটির বর্তমান চেয়ারম্যান শেখ আশিকুজ্জামান আশিক ও সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল গফুর মোল্লা। অথচ দু’দিন আগেও তাদের সমর্থকদের প্রচার-প্রচারণায় উৎসবমুখর ছিলো পুরো ইউনিয়ন। ভোটযুদ্ধে তাদের দু’জনের মাঝে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দিচ্ছিলেন ভোটাররা। ইউনিয়নজুড়ে ব্যাপক ধরপাকড় এবং প্রধান দুই প্রার্থীর সরে যাওয়া পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াই নিষ্প্রাণ হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ভোটাররা। সেই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের অক্ষমতার নতুন আরেকটি উদাহরণ হয়ে দাঁড়ালো এই জলমার এই নির্বাচন।
নির্বাচন অফিস থেকে জানা গেছে, প্রথম ৩ ধাপে খুলনা জেলার ৬৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬৭টি ইউনিয়ন পরিষদের ভোট শেষ হয়েছে। এই তিন ধাপে বড় ধরনের অনিয়ম, ভোট কারচুপি বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হস্তক্ষেপের অভিযোগ শোনা যায়নি। নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন অধিকাংশ প্রার্থী ও ভোটাররা। আগামী ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জলমা ইউনিয়ন পরিষদের একই পরিবেশ থাকবে বলে আশা করেছিলেন তারা। কিন্তু ২০ ডিসেম্বর রাত থেকে পরিবেশ পাল্টে যেতে থাকে।
জানা গেছে, প্রথম রাতেই বটিয়াঘাটা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকসহ বিএনপির ১১ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। পরে দুই রাতে আটকের তালিকা লম্বা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বর্তমান চেয়ারম্যান ও প্রার্থী শেখ আশিকুজ্জামান পূর্বাঞ্চলকে বলেন, ‘বুধবার রাতে ইউনিয়নের প্রতিটি নেতার বাড়িতে পুলিশ গিয়েছে। আমার বাড়িতে কয়েকবার অভিযান চালানো হয়েছে। আমার ভাইরা ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে। অবশ্য রাতে পত্রিকা অফিসে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে শেখ আশিকুজ্জামান উল্লেখ করেছেন, ‘ব্যক্তিগত কারণে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালাম’।
বৃহস্পতিবার দুপুরে আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল গফুর মোল্লা পূর্বাঞ্চলকে বলেন, ‘২০ ডিসেম্বর রাত থেকে আমার নির্বাচনী ক্যাম্প, প্রচার মাইকের ওপর হামলা শুরু হয়’।
অবশ্য পত্রিকা অফিসে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে আবদুল গফুরও ‘ব্যক্তিগত কারণে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালাম’ বলে উল্লেখ করেছেন। দুই প্রার্থীর বিজ্ঞপ্তির ভাষা হুবুহু একই রকম।
বিজ্ঞপ্তি পাঠানোর পর রাত সাড়ে ৯টায় আবারও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। ভোটের বিষয়ে তারা কোনো মন্তব্য করবেন না বলে জানিয়েছেন।
জেলা নির্বাচন অফিস থেকে জানা গেছে, খুলনার ৬৮টি ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার জলমা ইউনিয়নে। আর এ কারণেই চতুর্থ ধাপে জেলার একটি মাত্র ইউপিতে ভোট হচ্ছে। বর্তমানে জলমা ইউনিয়নের ভোটার রয়েছেন ৫০ হাজার ১৭৯ জন। খুলনার ইউনিয়নে গড়ে ৯টি ভোট কেন্দ্র থাকলেও এই ইউনিয়নে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৮টি।
নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ এই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৫ জন। এছাড়া ৯টি সাধারণ ওয়ার্ডে সদস্য প্রার্থী ৫৬ জন। এদের সবাই কমবেশি প্রভাবশালী। এছাড়া ৩টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে প্রার্থী রয়েছেন আরও ১৩ জন নারী।
ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন বর্তমান চেয়ারম্যান শেখ আশিকুজ্জামান, সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল গফুর মোল্লা, আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিধান রায়, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মো. শফিউল ইসলাম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী দিদার শিকদার।
ইউনিয়ন ঘুরে প্রার্থী ও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়ায় নির্বাচনী উৎসবে মাতোয়ারা ছিলো পুরো এলাকা। কিন্তু হঠাৎ করে পরিবেশ পাল্টে যেতে থাকে। ২০ ডিসেম্বরের পর রাতে এলাকায় পুলিশের তৎপরতা বেড়েছে। যার কারণে আগে চায়ের দোকানগুলোতে গভীর রাত পর্যন্ত নির্বাচনী আড্ডা চললেও এখন সন্ধ্যার পর সেগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, প্রচারণার পর থেকে নির্বাচনে বর্তমান চেয়রম্যান শেখ আশিকুজ্জামান, সাবেক চেয়ারম্যান আঃ গফুর মোল্লা এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিধান রায়ের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছিলো।
সার্বিক বিষয় নিয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও জলমা ইউপি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার আঃ সাত্তার বলেন, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর নতুন করে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার সুযোগ নেই। ব্যালট পেপারে প্রার্থীর নাম ও প্রতীক থাকবে। কেউ পত্রিকায় কোনো বিজ্ঞপ্তি দিলে এটা তার বিষয়।
খুলনার সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ মাজহারুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ পেয়েছি। সেগুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।