ময়লাপোতা থেকে গল্লামারী পর্যন্ত শের-
এ-বাংলা রোড চার লেনে উন্নীতকরণ

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ বসানো হয়েছে ১১৬টি পোল। এখন চলছে ফিটিংস কাজ। বিগত ২২ দিনের অগ্রগতি এমনটি। নির্দিষ্ট সময় পার হতে আরও রয়েছে তিন মাসেরও বেশি সময়। এর মধ্যেই শের-এ-বাংলা রোডের মাঝে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বৈদ্যুতিক পোলগুলো সরিয়ে নেয়া হবে রাস্তার পাশে।
সড়ক ও জনপথের আওতায় পরিচালিত নগরীর ময়লাপোতা থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের অংশ হিসেবে বৈদ্যুতিক পোল সরানোর কার্যক্রমের এমন অগ্রগতির কথা জানালেন সংশ্লিষ্টরা।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ অর্থ দেয়ার পরই ওয়েষ্ট জোন পাওয়ার ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানী কর্তৃপক্ষ পোল সরানোর কাজটি শুরু করেন। তবে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকার মধ্যে মাত্র এক কোটি টাকার মতো প্রদান করা হয়েছে ওজোপাডিকোর এ্যাকাউন্টে। বাকী টাকা মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনের পরই দেয়া হবে। কিন্তু ওজোপাডিকোর অন্য প্রকল্পের মালামাল দিয়ে কাজটি শুরু করা হয়েছে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের অনুরোধক্রমে। পোলগুলো সরিয়ে নিতে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকার চাহিদা দেয়া হলেও শুধুমাত্র নতুন কিছু পোল বসিয়ে পুরাতনগুলোর মধ্য থেকে আরও কিছু সন্নিবেশিত করে যাবতীয় কাজের জন্য খরচ হবে ৯৭ লাখ টাকা। বাকী টাকা লাগবে মালামাল বাবদ।
খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আনিসুজ্জামান মাসুদ জানান, নগরীর ময়লাপোতা মোড় থেকে শুরু হয়ে নিরালা, গল্লামারী ও খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের সামনে থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। সড়কটি ২২ দশমিক ১ মিটার (৭৫ ফুট) চওড়া হবে। সড়কের মূল অংশটির কার্পেটিং হবে ১৮ দশমিক পাঁচ মিটার। পরে এক দশমিক পাঁচ মিটার করে দু’পাশে ড্রেন তৈরি হবে। ওই ড্রেনের উপর স্লাব বসিয়ে সেটি ফুটপাত হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
তবে রাস্তার কাজ করতে গিয়ে প্রথমেই যে বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল সেটি ইতোমধ্যে সমাধান হয়েছে। অর্থাৎ বেশকিছু স্থাপনা ভাঙতে হয়েছে। এজন্য তিনি খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ¦ তালুকদার আব্দুল খালেকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টাকে কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন। বর্তমানে যেটি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে সেটি হচ্ছে রাস্তার উপরের বৈদ্যুতিক পোল। রাস্তাটি বড় করার ফলে পোলগুলো রাস্তার মাঝখানে পড়ে গেছে। এজন্য সেগুলো সরাতে ওয়েষ্ট জোন পাওয়ার ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানীর দেয়া চাহিদা অনুযায়ী ইতোমধ্যে এক কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। বাকী প্রয়ে সাড়ে তিন কোটি টাকা আরডিপিপিতে অনুমোদন হওয়ার পর দেয়া হবে। তবে ইতোমধ্যেই ওজোপাডিকো ঠিকাদার নিয়োগের মধ্যদিয়ে কাজটি শুরু করেছে। আশা করা যাচ্ছে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের কাজ শেষ হলেই সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার কাজও যথাসময়ে শেষ হবে। আগামী বছর(২০২২ সাল) জুন মাসের মধ্যে সড়কের কাজটি শেষ হওয়ার কথা বলেও তিনি জানান।
ওজোপাডিকোর নির্বাহী পরিচালক(প্রকৌশল) মোঃ আবু হাসান বলেন, শের-এ-বাংলা রোডের চার লেনে উন্নীতকরণ কাজের জন্য বৈদ্যুতিক পোলগুলো সরাতে ঠিকাদারের মজুরি ও ভ্যাট বাবদ ওজোপাডিকোর দেয়া চাহিদা অনুযায়ী ইতোমধ্যেই সওজ কর্তৃপক্ষ ৯৭ লাখ টাকা দিয়েছেন। যার আলোকে কাজটি শুরু হয়েছে। সওজ কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে আরডিপিপি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। হয়তো অনুমোদন হয়ে আসলেই বাকী টাকা দেয়া হবে। তবে ওজোপাডিকোর অন্যান্য প্রকল্প থেকে আগের কেনা মালামাল দিয়েই কাজটি করা হচ্ছে। যাতে রাস্তার কাজটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সওজ শেষ করতে পারে।
ময়লাপোতা থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত বৈদ্যুতিক পোল ও ট্রান্সফরমারগুলো সরিয়ে পাশে নিতে চার কোটি ৩১ লাখ টাকা খরচ হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এর মধ্যে ঠিকাদারের মজুরি ৬৫ লাখ এবং ভ্যাটসহ মোট ৯৭ লাখ টাকা সওজ কর্তৃপক্ষ ওজোপাডিকোর ফান্ডে দিয়েছেন।
ওজোপাডিকোর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-৪এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মামুনুর রহমান বলেন, গত ৮ জুন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেয়ার পর তারা কার্যক্রম শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে শতভাগ পোল বসানো হয়েছে। এখন ফিটিংস কাজ চলছে। এরপর তার টেনে ও ট্রান্সফরমারগুলো সরিয়েই পুরাতন পোলগুলো তুলে ফেলা হবে।
বিবিবি-৪এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোর্শেদ আহমেদ বলেন, নতুন পোল বসিয়ে ফেব্রিকেশনের কাজ চলছে। এখন ফিটিংস শেষে তার টেনেই পুরাতন পোলগুলো সরিয়ে ফেলা হবে। ঠিকাদারকে চার মাসের সময় দেয়া হলেও নির্দিষ্ট সময়ের আগেই কাজটি শেষ হবে বলে তিনি আশা করছেন।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স তিতাস ব্রাদার্সের অংশীদার মো: রকিবুল ইসলাম বলেন, গত ৮ জুন কার্যাদেশ পেয়েই তারা কাজটি শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে ১৫ মিটারের ১১৬টি পোল বসানো হয়েছে। ময়লাপোতা থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত পোলগুলো বসিয়ে এখন ফেব্রিকেশন ও ফিটিংস কাজ একসাথে চলছে। আর সর্বোচ্চ দু’মাসের মধ্যেই কাজটি শেষ হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বিদ্যুৎ বিভাগের সূত্রটি বলছে, ময়লাপোতা থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ৩৩ কেভি, ১১ কেভি এবং ০.৪ কেভি এই তিন ধরনের লাইন রয়েছে। বর্তমানে সড়কটিতে ১২ মিটারের পোল থাকলেও নতুন করে ১৫ মিটার উঁ”ু পোল বসানো হয়েছে। তবে মাঝে মধ্যে ১২ মিটারের পোলগুলো তুলেও বসানো হবে বলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার জানিয়েছেন।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে শের-এ-বাংলা রোড চার লেনে উন্নীতকরণ জরুরী হয়ে পড়েছে। এজন্যই সরকার এটিকে গুরুত্বের সাথে দেখছে। এতে খুলনাবাসী বর্তমান সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে শহরের প্রবেশ মুখে যানজট ও দুর্ঘটনা কমে আসবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।