লকডাউনের মধ্যেও
থেমে নেই বদলী

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ অনেকটা নিরবেই বিদায় নেন ওয়েষ্ট জোন পাওয়ার ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানীর আলোচিত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: শফিক উদ্দিন। গত ২ মে তিনি কোন প্রকার আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই ওজোপাডিকো ভবন ত্যাগ করেন। রীতি অনুযায়ী সেই থেকে এমডি’র অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন শুরু করেন কোম্পানীর নির্বাহী পরিচালক(অর্থ) রতন কুমার দেবনাথ। কোম্পানীর পক্ষ থেকে ৩ মে এমডি নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ২৫ মে ছিল আবেদন জমা দেয়ার শেষ দিন। আবেদন জমা পড়ে বেশ কিছু। গত ২৬ জুন নিয়োগ পরীক্ষার পর মেধা তালিকায় স্থানও করে নেন কয়েকজন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এমডি নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হয়নি অজ্ঞাত কারণে।
এদিকে, এমডি নিয়োগে বিলম্বের সুযোগে পদ্মার এপারের একুশ জেলা নিয়ে গঠিত ওয়েষ্ট জোন পাওয়ার ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানীতে বর্তমানে চলছে বদলী ‘বাণিজ্য’। বিশেষ করে হিসাব বিভাগের কর্মীদের এক জেলা থেকে অন্য জেলায় বদলী করা হয় করোনা মহামারী এমনকি লকডাউনের মধ্যেও।
ওজোপাডিকোর সূত্রটি বলছে, এমডি নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকারীকে নিয়োগ দেয়া হবে এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু এ নিয়ে ওজোপাডিকো এবং বিদ্যুৎ, জ¦ালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে কিছুটা সমন্বয়হীনতার কারণে এখনও নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি। আর এমডি নিয়োগের দেরির সুযোগে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত এমডিও রুটিন কাজের বাইরেও বদলীসহ বিভিন্ন কর্মকান্ড করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বদলী বাণিজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে তা হলো লকডাউনের মধ্যেই এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় বদলী। বিশেষ করে হিসাব বিভাগের নয়জনকে একই দিনের তিনটি পৃথক দপ্তরাদেশে বদলীর বিষয়টি নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
গত ৪ জুলাইয়ের তিনটি দপ্তরাদেশে স্বাক্ষর করেন কোম্পানীর উপ-মহাব্যবস্থাপক(এইচআর এন্ড এডমিন) মো: আলমগীর কবীর। যাতে দেখা যায়, খুলনা থেকে যশোর, ফরিদপুর থেকে বরিশাল, ঝিনাইদহ থেকে ফরিদপুর, ওজোপাডিকোর সদর দপ্তর থেকে যশোর, যশোর আঞ্চলিক হিসাব দপ্তর থেকে খুলনা সদর দপ্তরে, খুলনা আঞ্চলিক হিসাব দপ্তর থেকে বরিশালে এভাবে ব্যবস্থাপক(হিসাব), উপ-ব্যবস্থাপক(হিসাব), সহকারী ব্যবস্থাপক(হিসাব), সহকারী হিসাব রক্ষক, নি¤œমান হিসাব সহকারী এসব পদের কর্মীদের বদলী করা হয়।
এর বাইরেও জুন মাসে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলী পদমর্যাদার দু’জন কর্মকর্তাকেও খুলনা থেকে পটুয়াখালী ও যশোর থেকে ফরিদপুরে বদলী করা হয়।
এসব বদলীর পেছনেও বিপুল পরিমাণ অর্থনৈতিক লেনদেন রয়েছে বলেও জনশ্রুতি রয়েছে। যদিও পটুয়াখালীতে বদলী হওয়া নির্বাহী প্রকৌশলী পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা বলেন, কোম্পানীর স্বার্থে কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটিই তিনি মাথা পেতে নেবেন। এর বাইরে আর কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি তিনি।
অবশ্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেউ কেউ বলছেন, কোম্পানীতে চাকরী করে কোম্পানী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে আরও ক্ষতি হতে পারে। এজন্যই অনেকে মুখ খুলছেন না।
অবশ্য এটিকে বদলী ‘বাণিজ্য’ বলতে নারাজ কোম্পানীর অতিরিক্ত দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যবস্থাপনা পরিচালক রতন কুমার দেবনাথ। তিনি বলেন, আগে ওজোপাডিকোতে অনেক অনিয়ম হয়েছে। সেটিকে দূর করতেই তিনি কোম্পানীকে সাজিয়ে নিচ্ছেন। অবসরে যাওয়া ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো: শফিক উদ্দিন সম্পর্কে তিনি বলেন, তিনি কোম্পানীর অনেক ক্ষতি করে গেছেন। যেটি সরকারের বিভিন্ন সংস্থা অনুসন্ধান করছে।
অপর একটি সূত্র জানায়, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের চাকরীর মেয়াদ পয়লা মে শেষ হয়ে যাচ্ছে এটি আগে থেকেই জানা ছিল সকলের। কিন্তু তার বিদায়ের সাথে সাথেই নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করে যেতে পারলেই কোম্পানীর কাজে গতিশীলতা আসতো। কিন্তু সেটি না করে বিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালকের আমলেই এমডি নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে কেন দেরি করা হলো সেটিও খতিয়ে দেখার দাবি উঠেছে। আগে থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হলে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের যেমন প্রয়োজন হতো না তেমনি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকালে এমন নিয়োগ বাণিজ্যেরও সুযোগ থাকতো না।
ওজোপাডিকো বিদ্যুৎ শ্রমিক লীগ(বি-২১৩৮)এর সাবেক কার্যকরী সভাপতি এসএম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, করোনাকালীন বিশেষ করে লকডাউনের মধ্যেই এক জেলা থেকে অন্য জেলায় বদলীর বিষয়টি অমানবিক। যে মুহূর্তে সারাদেশে লকডাউন চলছে সেই মুহূর্তে বিদ্যুৎ বিভাগের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলীর বিষয়টি কোনভাবেই কোম্পানীর জন্য শুভ লক্ষণ নয়। বিশেষ প্রয়োজন হলে এটি পরেও করা যেতো বলেও তিনি মন্তব্য করেন।