রঞ্জু আহমদঃ খুলনার বাজারে চালের অগ্নিমূল্য। স্থানীয় খাদ্যগুদামগুলোতেও চালের মজুদ একেবারেই তলানীতে। সরকারের বেঁধে দেওয়া মূল্যে মিলমালিকরাও সরকারকে চাল দিতে অনীহা প্রকাশ করছে। এ অবস্থায় খাদ্য বিভাগও অনেকটা নিরুপায় হয়ে পড়েছে। ভোক্তাদের অতিরিক্ত মূল্যে চাল কিনতে হলেও প্রশাসনের তদারকি কাগজে কলমে।
খুলনা খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর আমন মৌসুমের ধান কেনার জন্য সরকারের নির্ধারিত দর হচ্ছে ২৬ টাকা। আতপ ও সিদ্ধ চালের দর নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৭ টাকা। বাজারের কোন চালই ৪৫ টাকার নিচে নয়। শ্রেণিভেদে এ চালের দাম ৮০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। ফলে মিলাররাও সরকারের নির্ধারিত দরে চাল দিতে রাজি হচ্ছে না। এবছর ৮৭জন মিল মালিক সিদ্ধ এবং ৪৮ জন মিল মালিক আপতপ চাল সরবরাহের জন্য সরকারের সাথে চুক্তি বদ্ধ হয়েছে। জেলার খাদ্য গুদামগুলোতে ধারণ ক্ষমতা রয়েছে ১ লাখ ২৯ হাজার মেট্রিকটন। আমন মৌসুমে সরকার সংগ্রহের লক্ষমাত্রা দিয়েছে সিদ্ধ চাল ১১ হাজার ৭শ’ মেট্রিকটন, আতপ ১৪শ’ মেট্রিকটন এবং ধান ২ হাজার ৯শ’ মেট্রিকটন। এখন পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ২৮০ মেট্রিকটন সিদ্ধ চাল।
সংগ্রহের এমন অবস্থার বিষয়ে খুলনা জেলা খাদ্য কর্মকর্তা মোঃ আবুল হোসেন বলেন, বাজারের ধানের মূল্য অনেক বেশি। এবার কৃষকের উৎপাদন খরচ পড়েছে মণপ্রতি ১১শ’ টাকার মত। সরকার ধানের দাম নির্ধারণ করেছে ১ হাজার ৪০ টাকা। ফলে মিলাররাও বেশি দামে ধান কিনে কম টাকায় চাল দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করছে। তিনি বলেন, যেহেতু মিলাররা সরকারের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে সেহেতু চাল তারা দিতে বাধ্য থাকবেন। তবে এবার হয়তো সময় লাগবে বেশি।
সংশ্লিষ্টরা বলছে, সরকারকে খাদ্য-ভিত্তিক সহায়তা কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার জন্যে খাদ্য মজুদ বাড়াতে হবে। তবে আবারও উৎপাদন খরচের তুলনায় কম দামে আমন ধান কেনার প্রস্তুতি চলছে বিধায় সরকার এবারের সংগ্রহে সফল নাও হতে পারে।
খুলনার আরাফাত রাইস মিলের সত্ত্বাধিকারী আলাউদ্দীন হোসেন জানান, সরকারের নতুন দাম নির্ধারণের পর এখনো কোন চাল সরবরাহ করা হয়নি। তবে নতুন দামে চাল বিক্রি করবেন বলে জানান তিনি।

সাদিয়া রাইস মিলের সত্ত্বাধিকারী আমিনুর ইসলাম বলেন, ‘গেল এক সপ্তাহ মাঝারি মানের বিআর ২৮ ধানের মিনিকেট চাল বিক্রি করেছেন ২৩০০-২৫০০ টাকা বস্তা। এখন যদি তা ২২৫০ টাকায় বিক্রি করতে হয় তবে লোকসানের মুখোমুখি হতে হবে। কারণ বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে, তাও আবার চাহিদার তুলনায় যোগান কম। তার মতে, গেল বোরো মৌসুমে ধান কম হওয়ায় আমনের ওপর চাপ বেড়েছে। যে কারণে ধানের বাজারমূল্য চড়া।
এদিকে চলতি মাসে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যস্থীতিশীল রাখার লক্ষ্যে জেলা টাস্কফোর্সের সভায় চালের দাম বৃদ্ধিও বিষয়ে মিল মালিকদের কারসাজি রয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। কোন মনিটরিং না থাকায় বাজারে চালের মূল্য বাড়ছে বলেও অভিযোগ করা হয়।
জেলা মার্কেটিং কর্মকর্তা আব্দুস সালাম তরফদার বলেন, চাহিদা এবং জোগানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাজার তদারকি নিয়মিত করা হচ্ছে। সুষম বন্টন নিশ্চিতের জন্য প্রশাসন কাজ করছেও বলে তিনি জানান।