* মিঠু, মাহাবুব কায়সারসহ ৪
নেতার পদত্যাগের ঘোষণা

এ এইচ হিমালয় ঃ মহানগর বিএনপির সভাপতির পর খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হলো নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে। দীর্ঘ ৪৩ বছরের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন শেষে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর এমন পরিণতি মানতে পারছেন না বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীরা। খুলনার অন্যান্য রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী ও সামাজিক সংগঠনের নেতারাও বিএনপির এই সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেছে।
এদিকে দলের এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন খুলনা মহানগর বিএনপির ৪ নেতা ও ২২নং ওয়ার্ডের ১২ জন সদস্য। গতকাল রাতেই পৃথকভাবে পদত্যাগপত্র পাঠান তারা।
তারা হলেন মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মাহাবুব কায়সার, খালিশপুর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান মিঠু, নগরীর ২২নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি এম এ তরিকুল্লাহ খান ও সাধারণ সম্পাদক জাহিদ কামাল টিটো।
গত ৯ ডিসেম্বর কেন্দ্র থেকে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির ৩ সদস্যের দুটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে বাদ পড়েন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। গত ১২ ডিসেম্বর দলের এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। এর প্রেক্ষিতে ১৪ ডিসেম্বর শোকজ করা হয় মঞ্জুকে। গত ১৬ ডিসেম্বর শোকজের জবাবের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে মৌখিক শুনানির আবেদন জানান তিনি। কিন্তু তা’ না করেই ২৫ ডিসেম্বর তাকে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
দলের সিনিয়র নেতা ও কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭৯ সালে ছাত্রদল থেকে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। ১৯৮৭ সাল থেকে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক, ১৯৯২ সাল থেকে সাধারণ সম্পাদক, ২০০৯ সাল থেকে গত ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
দীর্ঘ ৩৪ বছরে খুলনা বিএনপি এবং নজরুল ইসলাম মঞ্জু যেন এক নামেই জড়িয়ে ছিলেন। রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরেও সারাবছরই বিভিন্ন সামাজিক কাজে দেখা যায় তাকে। এছাড়া ইতোপূর্বে খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য থাকার কারণে অন্যান্য রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী, সামাজিক ও সংস্কৃতিক সংগঠনে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর গ্রহণযোগ্য অবস্থান রয়েছে। এসব কারণে মঞ্জু বাদ পড়ায় অবাক হয়েছেন খুলনার সব শ্রেণীর মানুষ।
নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত প্রায় এক বছর ধরেই নজরুল ইসলাম মঞ্জুর বিরুদ্ধে এক জোট হয়ে কর্মসূচি পালন করছিলেন বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের প্রধান। তাদের কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা চেয়েছিলাম মহানগর বিএনপির পদ ছেড়ে, তিনি কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করবেন। দলের সব পদ থেকে এভাবে সরিয়ে দেওয়াটা আমরাও চাইনি।
১৯৭৭ সালে জাগদল থেকে খুলনা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ইকবাল হোসেন খোকন। সোনাডাঙ্গা থানা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্বে থাকা প্রবীণ এই নেতা পূর্বাঞ্চলকে বলেন, সুসময়-দুঃসময় সব সময় মাঠে-ময়দানে নজরুল ইসলাম মঞ্জুকেই দেখা যায়। তাকে এভাবে বাদ দেওয়া দলের জন্য ভালো হলো না।
১৯৭৮ সালে যুবদল থেকে রাজনীতিতে রয়েছেন মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মাহাবুব কায়সার। নগরীর ২২নং ওয়ার্ডে দুই দফা কাউন্সিলর তিনি। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া বিএনপির সঙ্গে বর্তমান দলের অনেক ফারাক। মঞ্জুসহ সিনিয়র নেতাদের যেভাবে অবমূল্যায়ন করা হলো তাতে এদের সঙ্গে থাকা যায় না।
খালিশপুর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান মিঠু বলেন, তোষামোদকারীদের কারণে সিনিয়র নেতারা আজ মূল্যহীন। এভাবে একটি দল চলতে পারে না।
সার্বিক বিষয় নিয়ে নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আমি কখনো সিদ্ধান্ত অমান্য করিনি। আমি বলেছি, বিএনপি ভালো মানুষের দল হোক, প্রকৃত ত্যাগী পরীক্ষিতদের দিয়ে কমিটি হোক। খুলনা বিএনপির কমিটি গঠনের আগে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হোক। এজন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে আমি ২৯ পাতার দীর্ঘ চিঠি দিয়েছি।
তিনি বলেন, ‘আমার প্রতি অবিচার করা হয়েছে। খুলনায় সবচেয়ে বড় জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের ওপর এটা বড় একটি আঘাত। তারপরও আমি বিএনপির সঙ্গে ছিলাম, আছি এবং থাকবো। আমার বিশ^াস প্রকৃত তথ্য যাচাই-বাছাই করে দল এক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে।
॥ নেতাকর্মীদের পদত্যাগ ॥
গতকাল রাতে মহাসচিবের কাছে পাঠানো পদত্যাগপত্রে আরিফুর রহমান মিঠু উল্লেখ করেন, বিএনপির কতিপয় কিছু নীতি-নির্ধারকদের অন্যায় সিদ্ধান্ত, খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের প্রতিবাদে আমি খালিশপুর থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি নিচ্ছি।
মহানগর বিএনপির বিদায়ী যুগ্ম সম্পাদক মাহাবুব কায়সার তার পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করেন, ১৯৭৮ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে জাতীয়তাবাদী যুবদলে যোগ দেই। দীর্ঘ ৪৩ বছরের রাজনৈতিক জীবনে সকল আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছি। খুলনা বিএনপির সর্বোচ্চ ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জুর বিপক্ষে অসম্মান ও অমর্যাদাকর পদক্ষেপ গ্রহণ এর সিদ্ধান্তসহ সারাদেশব্যাপী বিএনপি কমিটি গঠনের হাল-হকিকত দেখে আমরা বর্তমান দলের সিদ্ধান্তের প্রতি আস্থা রাখতে পারছি না। এ অবস্থায় দলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা না হওয়া পর্যšন্ত বিএনপির সকল পদ থেকে আমি স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিচ্ছি।
একই কথা উল্লেখ করেন ২২নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি এম কে তরিকুল্লাহ খান, সাধারণ সম্পাদক জাহিদ কামাল টিটো। পদত্যাগপত্রে আরও স্বাক্ষর করেছেন, ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য সামছুল আলম খান, তারিকুল আলম, সাহেব আলী, নজরুল ইসলাম নান্না, মোঃ রফিক, খোকন গাজী, ফজলুর রহমান, জাহাঙ্গীর মল্লিক, বেল্লাল তালুকদার, এস এম শাহাবুদ্দীন, আবুল বাশার, কবির আহমেদ।