রঞ্জু আহমদ ঃ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিংয়ে গলাকাটা ফি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। তিন মাসের কোচিংয়ের জন্য চাওয়া হচ্ছে ২০ থেকে ২৩ হাজার টাকা। এ তিনমাসে একজন ছাত্রের কোচিং বাবদ খরচ হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। করোনার ধকল কাটিয়ে এত বিপুল অংকের অর্থ ব্যয়ে হিমশিম খাচ্ছে অভিভাবকরা। খরচ কমানোর আবেদন জানালে উপহাসের পাত্র হতে হচ্ছে অভিভাবকদের।
খুলনার প্রত্যন্ত এলাকা কয়রা থেকে জেলা সদরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোচিং করার জন্য এসেছেন আনোয়ার (ছদ্মনাম)। উদ্ভাস কোচিংয়ে ক ইউনিটে ভর্তির জন্য তাকে দিতে হচ্ছে ২৩ হাজার টাকা। গত ২৫ ডিসেম্বর ভর্তির জন্য সে তার মাকে নিয়ে কোচিংয়ে এসেছেন। চড়া ভর্তি ফির বিষয়ে তিনি বলেন, আমার ছেলেটা পড়াশোনায় খুব ভালো। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য খুলনাতে কোচিং করাতে নিয়ে এসেছি। এত টাকা দিয়ে পড়ানোর সাধ্য আমার নেই। কি করা যায় তাই ভাবছি।
শিক্ষার্থী ও অবিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে-গেল ২৫ ডিসেম্বর এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এরপর থেকেই শিক্ষার্থীরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি যুদ্ধের জন্য। এরজন্য সহায়ক হিসেবে প্রত্যেকেই কোচিং সেন্টারের দারস্থ হচ্ছে। ভর্তি পরীক্ষার এই প্রস্তুতিতে কোচিং সেন্টারগুলোও তাই উন্মুখ হয়ে অপেক্ষা করছে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে।
নগরীর ফুল মার্কেট এলাকার একটি ভবনের তৃতীয় তলায় অফিস রয়েছে উদ্ভাস ও উন্মেষ কোচিং সেন্টারের। উদ্ভাস কোচিং সেন্টার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির জন্য এবং উন্মেষ কোচিং সেন্টার মেডিকেল কোচিং সেন্টারের জন্য। উন্মেষে মেডিকেল কোচিংয়ের জন্য ফি ধরা হচ্ছে ১৯ হাজার টাকা। এরসাথে বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তির জন্য আরও ৫ হাজার টাকা ফি সংযোজন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে একজন শিক্ষার্থীকে দিতে হবে ২৪ হাজার টাকা।একই সাথে রয়েছে উদ্ভাস কোচিংয়ের অফিস। সেখানে ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তির জন্য ২০ হাজার। এর বাইরে বায়োলজি (গুচ্ছ প্রস্তুতি) ফি ৫ হাজার এবং আলাদাভাবে অর্কিটেকচারের জন্য ৫ হাজার টাকা ফি। াপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য (ক ইউনিটে) ১৮ হাজার এবং জেনারেল নলেজ ও ইংরেজির (গুচ্ছ ভর্তি) ফি আলাদাভাবে ৫ হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে। খুলনায় শিক্ষার্থী ভর্তি করানোতে শীর্ষে রয়েছে এ দুটি কোচিং সেন্টার। কোচিং সেন্টারের পরিচালক মোঃ সাকিব আল ইসলাম বলেন, প্রায় তিন হাজার স্টুডেন্ট ভর্তি হয়েছে। এতটাকা ফি নিচ্ছি কারণ খরচের হার বেড়েছে অনেক বেশি। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি উপযোগী করে গড়ে তুলতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে থাকি।
এই ভবনের নিচতলায় রয়েছে একটি আবাসিক হোস্টেলের অফিস। সেখানে বছর ব্যাপী থাকার জন্য শিক্ষার্থীদের বোঝানো হচ্ছে। মাসিক খাওয়ার জন্য ৪ হাজার ৫শ’ এবং থাকার জন্য এককালীন ১৪ হাজার টাকার যৌথ অফার দেওয়া হচ্ছে।
নগরীর কমার্স কলেজের সামনে ইউসিসি কোচিং। সেখানে ভর্তি সংক্রান্ত তথ্য জানতে চাইলে কোচিংয়ের পরিচালক মোঃ সরোয়ার রহমান নিজেই এগিয়ে আসেন। তিনি বলেন, ক, খ ও ঘ ইউনিটে ১৬ হাজার টাকা এবং ঘ ইউনিটের জন্য ১৮ হাজার টাকা ধার্য করা হয়েছে। এছাড়া ক এবং ঘ, গ এবং ঘ একসাথে ২৫ হাজার টাকা নিচ্ছেন শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে। কোচিংয়ের পাশাপাশি হোস্টেল বা মেসে থাকার জন্য ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন তারা।
একইভাবে ইউনিএইড কোচিং সেন্টারে ইউনিট ভিত্তিক ১৭ হাজার টাকা করে নির্ধারন করা হয়েছে। এছাড়া ফোকাসে কোচিং ফি নেওয়া হচ্ছে ১৪ হাজার টাকা। এসব কোচিং সেন্টারের বাইরেও কয়েকটি কোচিংয়ে খোঁজ নিয়ে মাত্রাতিরিক্তি ফি নির্ধারনের চিত্র একই ছিলো। কোচিংগুলো বিগত বছরের তুলনায় এবছর এক থেকে দেড় হাজার টাকা ফি বৃদ্ধি করেছে। করোনার পর এমন ফি আদায়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকমহল।
ইউসিসি কোচিংয়ে ভর্তি হতে আসা আফজাল হোসেন জানান, কোচিং থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা পর্যন্ত ৪/৫ মাসে তার খরচ হবে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। ব্যয়ের এই চাপ সামলানো তার পরিবারের জন্য কষ্টের।
কোচিংয়ের এমন গলাকাটা ফি আদায় ও কোচিংয়ের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর সাধন রঞ্জন ঘোষ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন পাঠ্যবই নির্ভর। একজন শিক্ষার্থী যদি ভালোভাবে পাঠ্যবই পড়েন, তাহলে তার কোচিংয়ে পড়ার প্রয়োজন নেই। মফস্বলের শিক্ষার্থীরাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রতিযোগীতায় টেকে বেশী। তারপরও শিক্ষার্থীরা কোচিংগুলোর চটকদার প্রলোভন এড়াতে পারে না।