করোনা পরবর্তী
প্রাথমিক শিক্ষা

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ খুলনা মহানগরী ও জেলার প্রায় আড়াই হাজার প্রাথমিক শিক্ষার্থীর হদিস নেই। করোনা পরবর্তী স্কুল খোলার পর থেকে তারা বিদ্যালয়ে হাজির হয়নি। এর মধ্যে মহানগরীর ১২৬টি স্কুলের এক হাজার ৬৪৩জন এবং জেলার এক হাজার ১৫৯টি স্কুলের ৭৮৩জন শিক্ষার্থী রয়েছে। খুলনা সদর থানা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে, খুলনা মহানগরীর ১২৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যে দেড় সহ¯্রাধিক শিক্ষার্থী অনুপস্থিত তাদের মধ্যে নয়জন ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে বলেও সদর থানা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস জানিয়েছে। সব মিলিয়ে করোনা পরবর্তী প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় এক অস্থিরতা দেখা দিলেও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের দেয়া তথ্যের সাথে বাস্তবের অনেকটা অমিলও লক্ষ্য করা গেছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এ.এস.এম. সিরাজুদ্দোহা বলেন, করোনার কারনে দেড় বছর পর স্কুল খুললেও ১২ সেপ্টেম্বর থেকে পরবর্তী এক মাসের হিসাবে দেখা গেছে জেলার ৭৮৩জন শিক্ষার্থী এখনও বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছে। তবে তারা কিসের জন্য স্কুলে হাজির হচ্ছে না তাদের ব্যাপারে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জানান, খোঁজ-খবর নেয়া হয়েছে এবং নিয়মিত হোমভিজিট করা হচ্ছে। অধিকাংশ শিক্ষার্থী মাদ্রাসায় এবং হেফ্জ মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছে। কিছু শিক্ষার্থী আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে গেছে, কিছু শিক্ষার্থী অসুস্থ, কিছু শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর বিদ্যালয়ে না গিয়ে রাস্তায় খেলাধুলা করে বিদ্যালয়ের সময় শেষ হওয়ার পর বাড়ি ফিরছে, কিছু শিক্ষার্থীর অভিভাবক করোনার ভয়ে এখনও তাদের সন্তানকে বিদ্যালয়ে পাঠাতে আগ্রহী হচ্ছে না এবং কিছু শিক্ষার্থীর অভিভাবক বাসস্থান ত্যাগ করেছে। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী জেলায় প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের স্কুলে হাজিরার হারও অনেক ভালো। প্রতিদিন গড়ে ৮৯ শতাংশ শিক্ষার্থী স্কুলে হাজির থাকছে বলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস তাদের দেয়া তথ্যে উল্লেখ করলেও বাস্তবে একাধিক স্কুলে গিয়ে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। অনেক স্কুলে রুটিন অনুযায়ী ক্লাশের মোট শিক্ষার্থীর চেয়ে অর্ধেকেরও কম উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে।
এদিকে, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সাথে খুলনা মহানগরীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর হাজিরার তথ্যে অনেকটা ভিন্নতা দেখা গেছে। সদর থানা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শেখ মো: নূরুল ইসলাম বলেন, নগরীর ১২৬টি স্কুলে শিক্ষার্থীর গড় হাজিরা ৬২ দশমিক চার শতাংশ। অর্থাৎ জেলায় যেখানে ৮৯ শতাংশ শিক্ষার্থীকে হাজির দেখানো হয়েছে সেখানে নগরীতে দেখানো হয় ৬২ শতাংশ। আবার জেলায় মোট অনুপস্থিতির হারও দেখানো হয় অনেক কম। সব মিলিয়ে তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চেয়ে জেলা ও সদর থানার তথ্যে অনেকটা ভিন্নতা দেখা গেছে।
সদর থানা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় বলছে, নগরীর যে নয়জন ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে বলে তাদের কাছে তথ্য আছে তার মধ্যে অধিকাংশই খুলনা সদর থানা এলাকার। এর মধ্যে শিপইয়ার্ডের মতিয়াখালী এলাকার একজন, টুটপাড়া মোল্লাপাড়ার একজন, রূপসা ড্যাপস ক্লিনিকের পাশর্^স্ত মুন্সি রাইস মিল এলাকার একজন, রেলওয়ে লোকো কলোনীর একজন, এমটি রোডের একজন, রূপসা খ্রীস্টান গলির একজন, দারোগাপাড়া মসজিদের পাশের একজন, সোনাডাঙ্গা থানাধীন গোবরচাকা এলাকার একজন এবং গল্লামারী এলাকার একজন রয়েছে।
নগরীর মতিয়াখালী ৭ নম্বর গলিতে গিয়ে কথা হয় সদ্য বিয়ে হওয়া এক স্কুলছাত্রীর দাদীর সাথে। তিনি বলেন, ভালো ছেলে পেয়েছি বলে তার নাতনিকে বিয়ে দেয়া হয়েছে। ওই ছাত্রীটির পিতা একজন রিক্সাচালক। মোবাইলে তার সাথে কথা হলে তিনিও তার মেয়ের বিয়ের কথা স্বীকার করেন।
এভাবে নগরীতে প্রকাশ্যে এমনকি পারিবারিক ও সামাজিকভাবে বাল্যবিয়ে হলেও আগের মতো সমাজসেবা অফিসের প্রবেশন অফিসারের তেমন কোন তোড়জোড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে কথা হলে খুলনার সমাজসেবা অফিসের প্রবেশন অফিসার নিগার সুলতানা বলেন, এখন আর আগের মতো অভিযান হয়না। কেউ যদি ১০৯৮ নম্বরে ফোন দিয়ে অভিযোগ দেয় তখন তার ভিত্তিতে তাদের অভিযান পরিচালিত হয়। চলতি বছরের বিগত ১১ মাসে এমন কয়েকটি অভিযান হয়েছে তবে তিনি ছুটিতে থাকায় সঠিক সংখ্যা জানাতে পারেননি।
অবশ্য আগে দেখা যেতো কোথাও বাল্যবিয়ের খবর পাওয়া মাত্রই নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও পুলিশসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রবেশন অফিসার বিয়ে বন্ধসহ আইনী ব্যবস্থা নিতে তৎপর ছিলেন।
এ ব্যাপারে অবশ্য মুসলিম বিবাহ রেজিষ্ট্রারদের পক্ষ থেকে ‘কোর্ট’ ম্যারেজ নামের এফিডেভিটকে দায়ী করা হয়। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, যে বিয়ে তারা করান না সেগুলো নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে করিয়ে কোন মসজিদ-মাদ্রাসার ইমাম বা আলেমকে দিয়ে কলমা করিয়ে সম্পন্ন করা হয়।
কিন্তু অনেক স্থানে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, নিকাহ রেজিষ্ট্রারদের বিভিন্ন এলাকা ভিত্তিক লোক নিয়োগ দেয়া থাকে এবং তারা কখনও ফটোকপির ওপর নাম, ঠিকানা ও প্রয়োজনীয় তথ্য লিখে সমাজে দেখান যে বিয়ে হয়েছে কিন্তু সেগুলো মূল রেজিষ্ট্রার বইতে না তুলে অনেকটা প্রতারণার আশ্রয় নেয়া হয়। এতে দেখা যায়, যখন অডিট হয় তখন ১৮ বছরের নিচের কোন মেয়ে বা ২১ বছরের নিচের কোন ছেলের নাম-ঠিকানা পাওয়া যায়না। এভাবেই বাল্যবিয়ে হচ্ছে অহরহ।