• জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় বিলম্বে
    পিছিয়ে যেতে পারে সার্বিক কাজ
  • সেতু নির্মাণ ব্যয় ৩০২ কোটি,
    জমি অধিগ্রহণ ব্যয় ২৮১ কোটি টাকা
  • ১১১টি বৈদ্যুতিক খুঁটি সরাতে ২ কোটি
    ৩৩ লাখ টাকা চায় ওজোপাডিকো

এ এইচ হিমালয় ঃ জমির সহজলভ্যতা, কর্মক্ষম মানুষ, বিনিয়োগকারী সবই আছে। অথচ খুলনার অন্যান্য উপজেলা থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প কলকারখানা, কর্মসংস্থানে পিছিয়ে আছে দিঘলিয়া। শুধুমাত্র একটি সেতুর অভাবে নানা বঞ্চনার শিকার হচ্ছে দিঘলিয়ার লক্ষাধিক মানুষ। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সেই বঞ্চনার অবসান হতে যাচ্ছে। চলতি মাসেই শুরু হচ্ছে ভৈরব সেতুর পরীক্ষামূলক পাইল (টেস্ট পাইলিং) স্থাপনের কাজ। ইতোমধ্যে তার প্রস্তুতি শুরু করেছে সড়ক বিভাগ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
তবে প্রকল্পের অন্যতম অংশ জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় কিছুটা ধীরগতি তৈরি হয়েছে। দ্রুত জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু এবং সেবা সংস্থার বিদ্যুতের খুঁটি, পাইপলাইন স্থানান্তর না হলে সেতুর কাজ বিলম্বিত হওয়ার আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নির্মিতব্য ভৈরব সেতু খুলনা মহানগরী ও দিঘলিয়া উপজেলাকে সংযুক্ত করবে। নগরীর দৌলতপুরের মহসীন মোড় থেকে দিঘলিয়া উপজেলার মোড়ে গিয়ে মিশবে এই সেতু। সেতু নির্মাণ হলে খুলনা নগরীর ওপর মানুষের চাপ কিছুটা কমে যাবে। নদীর ওপারে কলকারখানা স্থাপনসহ বসতি বিকেন্দ্রীকরণ হবে বলে আশা করছেন দিঘলিয়ার মানুষ।
সড়ক বিভাগের প্রকৌশলীরা জানান, ভৈরব সেতু হবে এই অঞ্চলের অন্যতম ব্যতিক্রমী সেতু। কারণ নদীর পানি প্রবাহ ও নৌযান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে নদী থেকে প্রায় ৬০ ফুট উঁচুতে পিসি গার্ডার নকশায় সেতুটি নির্মিত হবে। আর সেতুর সঙ্গে সড়কের সংযোগ স্থাপন করতে নগরীর ভেতরেও উড়াল সেতু নির্মাণ করতে হচ্ছে। অর্থাৎ নগরীর মহসীন মোড় থেকে রেলক্রসিং পার হয়ে ভৈরব নদ পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকায় উড়াল সড়ক (ভায়াড্যাক্ট) নির্মাণ হবে। ওপারেও উড়াল সড়ক হয়ে সেতু মিশবে উপজেলার মোড় এলাকায়।
প্রকল্প থেকে জানা গেছে, মূল সেতু, সংযোগ সড়ক নির্মাণে ব্যয় হবে ৩০২ কোটি টাকা। এছাড়া ভূমি অধিগ্রহণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৮১ কোটি টাকা। গত বছরের ২৬ নভেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ২০২২ সালের ২৫ নভেম্বরের মধ্যে তাদের সেতুর কাজ শেষ করতে হবে।
সূত্রটি জানায়, নগরী ও উপজেলার মধ্যে গার্ডার বা ওভারপাস থাকায় নদীর দুই তীরে প্রায় সাড়ে ৭ দশমিক ০৮ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। দুই পাশে অসংখ্য শিল্প কারখানা থাকায় জমি অধিগ্রহণ করাই প্রকল্পের মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এজন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৮১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
প্রকল্প কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর ‘দিঘলিয়া (রেলিগেট)-আড়–য়া-গাজিরহাট-তেরখাদা সড়কের (জেড-৭০৪০) প্রথম কিলোমিটারে ভৈরব নদের ওপর সেতু নির্মাণ প্রকল্প’ নামের প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন হয়। এতে সেতুর ব্যয় ধরা হয়েছে ৬১৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করে ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশনকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী ২০২২ সালের মধ্যে তাদের ১০০ মিটারের স্টিল ব্রিজসহ ১ হাজার ৩১৬ মিটার সেতু, ৩ দশমিক ০৬৫ কিলোমিটার নতুন সড়ক, ২০ মিটার আরসিসি বক্স কালভার্ট, ৩ দশমিক ৭৬ কিলোমিটার সড়ক ডিভাইডার, এক কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ করতে হবে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, নির্মাণ কাজ শুরু হলেও প্রকল্পের কয়েকটি জটিলতা থেকেই গেছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া। প্রকল্পের জন্য যে ৭ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে তার প্রস্তাব তৈরির কাজ এখনও শেষ হয়নি। অধিগ্রহণ কাজে দেরি হলে সেতু তৈরির কাজও পিছিয়ে যেতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন সেবা সংস্থাও প্রকল্পের কাজে সঠিকভাবে সহযোগিতা করছে না।
সূত্রটি জানায়, প্রকল্প এলাকা বৈদ্যুতিক পোল ও তার সরানোর জন্য ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিকে (ওজোপাডিকো) কয়েক দফা চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা ১১১টি বৈদ্যুতিক খুঁটি সরাতে ২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা দাবি করেছে। এছাড়া কবে নাগাদ তারা খুঁটি সরাবে তার নিশ্চয়তাও দেয়নি সংস্থাটি।
সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আনিসুজ্জামান মাসুদ বলেন, জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব তৈরির কাজ চলছে। প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার ছাড়পত্র নিতে হয়। এছাড়া জমির কাগজসহ আনুষঙ্গিক কাজে অনেক সময় লাগে। তবে সব কাজ গুছিয়ে আনা হয়েছে। এ মাসেই অধিগ্রহণ প্রস্তাব জমা দেওয়া হবে।
তিনি জানান, মার্চ মাসে দিঘলিয়া পাড়ে টেস্ট পাইলের কাজ শুরু হবে। পরে ওই অংশ থেকেই মূল সেতুর কাজ শুরু হবে। পাশাপাশি অধিগ্রহণের কাজও চলবে। এছাড়া ওজোপাডিকোসহ অন্য সেবা সংস্থার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে।