স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ খুলনার সাধারণ সম্পাদক ডা: মেহেদী নেওয়াজ
# গৌরবের পদ্মা সেতু, আর বাকী ১৭ দিন

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ পদ্মাসেতু হচ্ছে মহান মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে এ যাবতকালের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অর্জন। আর মাত্র ১৭ দিন পর অর্থাৎ ২৫ জুন যানবাহন চলাচলের জন্য উম্মুক্ত করা হচ্ছে এ সেতু। এ সেতু নির্মাণকে ঘিরে বিশ^ব্যাংকসহ যাদের ষড়যন্ত্র ছিল তাদের অভিযোগকে ভিত্তিহীন প্রমাণ করে সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়চেতা মনোভাব এবং আস্থার ফলেই নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে স্বপ্নের পদ্মাসেতু। একমাত্র বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেই সম্ভব হয়েছে এ সেতু নির্মাণ। আর এর মধ্যদিয়েই তিনি প্রমাণ করেছেন শেখ হাসিনা যা চান তা তিনি করেন।
এমন মন্তব্য করে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ-স্বাচিপ খুলনার সাধারণ সম্পাদক ডা: মো: মেহেদী নেওয়াজ বলেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের চাওয়া ছিল এ পদ্মা সেতু। শুধুমাত্র একটি সেতুর অভাবেই এ অঞ্চল উন্নয়ন বঞ্চিত ছিল দীর্ঘদিন। সড়ক যোগাযোগের কারণেই খুলনার চেয়ে চট্টগ্রাম-সিলেটের উন্নয়ন হয়েছে অনেক বেশি। সুতরাং পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সে বঞ্চনার অবসান হবে বলে তিনি আশা করছেন। এটি শুধু একটি নদী পারাপারের সেতুই নয়, বরং বহুমুখি সেতু। এর মধ্যদিয়ে উন্নয়নের মহাসোপানে পরিণত হবে খুলনাঞ্চল।
দৈনিক পূর্বাঞ্চলকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে এ স্বাচিপ নেতা বলেন, পদ্মা সেতুর কাজের শুরু থেকেই দেশী, বিদেশী বিনিয়োগকারী এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নীতি নির্ধারণী ও ব্যবসায়ী মহল পরিকল্পনা করছেন। পদ্মা সেতুর ফলেই শিল্পাঞ্চল তার অতীত গৌরব ফিরে পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সেই সাথে এ অঞ্চলে তৈরি হবে নতুন নতুন হোটেলসহ আন্তর্জাতিক মানের আবাসন ব্যবস্থা। মংলা, পায়রা, বেনাপোল, ভোমরা বন্দর, রামপালের তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ সব কিছুই দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক প্রভাব রাখবে। এক কথায় দীর্ঘদিনে অবহেলিত এই জনপদ বাংলাদেশের একটি উন্নততর অবস্থার মধ্যদিয়ে অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটবে বলেও তিনি মনে করেন। সেই সাথে যানবাহন, শিল্পে, স্বাস্থ্যে এবং পণ্য পরিবহনে অবদান রাখবে পদ্মা সেতু। এক কথায় পদ্মা সেতু দলমত নির্বিশেষে আশার মূর্ত প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
খুলনাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি পদ্মা সেতু এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। এখন যে দাবিটি বাস্তবায়ন দরকার সেটি হচ্ছে বিমান বন্দর। যার কাজ রামপালে চলমান রয়েছে। বিমান বন্দরের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, যেখানে যত আধুনিকতার ছোয়া লাগবে সেখানে আরও আধুনিকতার ছোয়া লাগবে। অর্থাৎ যতই উন্নয়ন ততই চাহিদা এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। পদ্মাসেতু হলে এ অঞ্চলের রাস্তা, ফ্লাইওভারসহ আরও উন্নয়ন চাহিদা বাড়বে। তাছাড়া পদ্মা সেতু চালু হলে এ অঞ্চলে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা আসবেন। আসবেন দেশী-বিদেশী পর্যটকরাও। সুন্দরবন, কুয়াকাটা এবং অন্যান্য ধর্মীয় ও প্রতœতাত্মিক স্থাপনাগুলোতেও বাড়বে দর্শনার্থীদের ভিড়। এজন্য সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি বিমান বন্দরের চাহিদাও বাড়বে। আর পর্যটন শিল্পকে আরও ব্যাপক পরিসরে নেয়া গেলে রাজস্ব বাড়বে বলেও তিনি মনে করেন।
পদ্মা সেতু নিয়ে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে ডা: মেহেদী নেওয়াজ বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যে ষড়যন্ত্র ছিল সে ষড়যন্ত্রকারীরা এখনও আছে। ওই ষড়যন্ত্রকারীরা চারজন জাতীয় নেতাকেও রক্ষা করেনি। ৭৫ এর ৩ নভেম্বর হত্যা করা হয় জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজ উদ্দিন আহমেদ, মুনসুর আলী ও কামরুজ্জামানকে। অর্থাৎ স্বাধীনতার পক্ষের কোন শক্তি যখনই কিছু অর্জন করতে গেছে তখনই ষড়যন্ত্রকারীরা ষড়যন্ত্র করেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এমনকি আন্তর্জাতিকভাবে লবিষ্ট নিয়োগ করে প্রচুর টাকা ব্যায় করেও এটি করেছে ষড়যন্ত্রকারীরা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়চেতা মনোভাব, সাহসিকতা এবং এদেশের মানুষের প্রতি তার পিতার মতো অগাধ ভালোবাসা তাকে এ কাজে এগিয়ে নেয়। আন্তর্জাতিক আদালতেও প্রমাণ হয়নি পদ্মা সেতুর দুর্নীতি। তবে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার সাথে সাথে মন্ত্রীকে সরিয়ে দিয়েও বসে থাকেননি প্রধানমন্ত্রী। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি জনসমর্থন ছিল বলেই বিজয় সুনিশ্চিত হয়েছে। এমনকি বিজয় অর্জন হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়চেতা মনোভাবের কারনে।
পদ্মা রেল সেতু সম্পর্কে ডা: মেহেদী নেওয়াজ বলেন, প্রাথমিকভাবে পদ্মা রেল সেতুর শেষ ষ্টেশন যশোর হচ্ছে এটি ঠিক কিন্তু খুলনার মানুষ আশা করছে ধারাবাহিকভাবে খুলনায়ই হবে এর শেষ ষ্টেশন। তাছাড়া সরাসরি ভারত থেকে রেল সংযোগ হয়েছে। মংলা পর্যন্ত লাইন টানা হয়েছে। সুতরাং পদ্মা সেতুর রেল সুবিধা থেকে খুলনার মানুষকে বাদ দেয়ার কোন সুযোগ নেই। আর রেল সেতু হলে আরও বেশি মানুষের প্রয়োজন মিটবে।
পদ্মা সেতুর পাশাপাশি খুলনাঞ্চলের অন্যান্য সড়ক-মহাসড়কগুলো সম্প্রসারণ ও নতুন নতুন সড়ক তৈরির মধ্যদিয়ে গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে নিয়ে মহাপরিকল্পনা গড়ে তোলা সম্ভব বলেও তিনি মনে করেন। আর শুধু যে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাটের মানুষ পদ্মা সেতুর সুফল ভোগ করবে তেমনটি নয়, বরং বরিশাল, মাগুরাসহ আশপাশের অনেক এলাকার লোকজনও পদ্মা সেতু দিয়ে যাতায়াতের সুযোগ পাবে। যেটি বাংলাদেশের যোগাযোগের ক্ষেত্রে আনবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন, সৃষ্টি হবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। কেননা ইতোমধ্যেই পরিবহন সেক্টরের অনেকে নতুন নতুন বাস আনা শুরু করেছেন, নতুন নতুন হোটেল তৈরি হচ্ছে, শিল্পাঞ্চল ফিরে পাবে তার অতীত গৌরব। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। অর্থাৎ পদ্মা সেতুকে ঘিরে খুলনাঞ্চলে যে অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটবে তার ফল ভোগ করবে গোটা দেশ।
পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসলেও তিনি খুলনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ-অধিদপ্তর করার প্রস্তাব করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই খুলনায় শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালসহ এ অঞ্চলে রয়েছে একাধিক প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। স্বাস্থ্য বিভাগের কার্যক্রমকে আরও সহজতর করতে তিনি এ যৌক্তিক দাবির প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পাশাপাশি আরও কিছু মন্ত্রণালয়ের কাঠামো বিকেন্দ্রিকরণের মধ্যদিয়ে প্রশাসনিক সেবা মানুষের দোড় গোড়ায় নেয়ার দাবি জানান।