/ মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর

মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর

স্টাফ রিপোর্টার: ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মার্চের প্রতিরোধ যুদ্ধ ক্রমান¦য়ে ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে রুপ নেয় । ন্যায্য দাবি আদায় করতে গিয়ে অকাতরে প্রাণ দেয় দেশের সব শ্রেণীর ও বয়সের মানুষ। ডিসেম্বর মাসে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পিছিয়ে যেতে শুরু করে পাকিস্তানী বাহিনী।

১৯৭১ সালের ২ ডিসেম্বর। মুক্তির সংগ্রামে উত্তাল হয়ে পড়ে বাংলার মাটি। মুক্তিযোদ্ধারা গেরিলা আক্রমণ ছেড়ে সম্মুখ রণাঙ্গনে যোগ দিয়ে যুদ্ধের গতি আরো বাড়িয়ে দেয়। মুহুর্মুহু আক্রমণে দিশাহারা হয়ে পড়ে হানাদার বাহিনী। পরাজয় আসন্ন জেনে চরম নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতায় মেতে ওঠে হিংস্র পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহের দিকেই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান জেনারেল নিয়াজি তার রাজাকার,আলবদর ও সেনাবাহিনীকে দেশের চারদিকে ছড়িয়ে নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ চালাতে নির্দেশ দেয়। মুক্তিবাহিনীর তীব্র আক্রমণের কাছে হানাদার বাহিনীর সব পরিকল্পনা ব্যর্থ হতে থাকে এবং দিশাহারা হয়ে তারা পিছু হটতে থাকে।

২ ডিসেম্বর খুলনা অঞ্চলে মুক্তিবাহিনী সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা আগেই শত্রুমুক্ত করেছিল এবং পাকিস্তানি সেনাদের পিছু হটিয়ে মুক্তিবাহিনী সাতক্ষীরার উপকণ্ঠে পৌঁছে যায়। রূপসা নদীর ওপারে খুলনার কাছে ঘাঁটি স্থাপন করে মুক্তিযোদ্ধাদের আরেকটি দল।

এদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সেক্টরে মুক্তিবাহিনী তিন দিক থেকে আক্রমণ করলে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী আজমপুর রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে পালিয়ে যায়। আজমপুর রেলওয়ে স্টেশন মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে এলেও পাকিস্তানি সৈন্যরা মুক্তিবাহিনীর ওপর পাল্টা আক্রমণ করে । কুমিল্লা-সিলেট সিএন্ডবি রোডের সংযোগ মুক্তিযোদ্ধারা বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং চট্টগ্রাম-কুমিল্লা-ঢাকা রেল যোগাযোগও সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

মুক্তিবাহিনী ঘোড়াশালে পাকিস্তানি সৈন্যদের শক্ত অবস্থানের ওপর চারদিক থেকে একযোগে আক্রমণ করে অনেক পাকিস্তানি সৈন্যকে হতাহত করতে সক্ষম হয় এবং এখান থেকে বেশ কিছু গোলাবারুদও উদ্ধার করে মুক্তিবাহিনী।

এদিনে চট্টগ্রামে মুক্তিবাহিনী উত্তরে ফটিকছড়ি ও রাউজান থানা এবং দক্ষিণে আনোয়ারার অধিকাংশ স্থান তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। নোয়াখালী থেকে চট্টগ্রামের পথে পথে মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা হানাদারদের সঙ্গে খণ্ড খণ্ড ভাবে সম্মুখযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।

সীমান্ত এলাকাগুলোতে সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করলে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয় ভারতীয় বাহিনী।বীর মুক্তিযোদ্ধারা ভারতীয় সেনাবাহিনীর সহায়তায় গভীর রাতে বাংলাদেশের সবচেয়ে উত্তরে অবস্থান পঞ্চগড়ে ক্ষিপ্রগতিতে আকস্মাৎ আক্রমণ করে পঞ্চগড় মুক্ত করে নেয় এবং ঠাকুরগাঁওয়ের দিকে বিজয়ের বেশে এগিয়ে যেতে থাকে।

মুক্তিযোদ্ধাদের হামলায় ও বোমা বিস্ফোরণে ঢাকার রামপুরা বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র, চট্টগ্রামের পাঁচটি বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন ও দুটি পেট্রলপাম্প বিধ্বস্ত হয়, যা আন্তর্জাতিক মিডিয়াসমূহে মুক্তিবাহিনীর এই সাফল্যের খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করে। বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা, আকাশবাণী এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংবাদে প্রচারিত হতে থাকে মুক্তিযোদ্ধাদের নিত্যনতুন বিজয়ের সংবাদ।এদিকে মুক্তিযোদ্ধারা টাঙ্গাইলের নাগরপুর থানা মুক্ত করে এবং টাঙ্গাইল আক্রমণের প্রস্তুতি নিতে থাকে।

একাত্তরের এই দিনে ময়মনসিংহ, জামালপুরসহ দেশের বেশ কটি এলাকায় গণহত্যা চালায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী। মুক্তিযোদ্ধারা রাজধানী ঢাকাকে দখলমুক্ত করার লক্ষ্যে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধ করতে করতে ঢাকার দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকে।