একদিনে খুলনায় করোনায় ও উপসর্গে ৪ জনের মৃত্যু

সর্বোচ্চ সংখ্যক নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত ১৫৫ জন

স্টাফ রিপোর্টার ঃ মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না। সেই সাথে পাল্লা দিয়েই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও। খুলনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল শনিবার আরও দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা সাসপেকটেড আইসোলেশন ওয়ার্ডে একজনসহ গতকাল নগরীতে মোট তিনজনের মৃত্যু হয়েছে করোনা উপসর্গে। একদিনে ৩৭৭টি নমুনা পরীক্ষার পর শনাক্ত হয়েছে ১৫৫জনের। যার মধ্যে ১৪৬জনই খুলনার। বাকী নয়জনের মধ্যে যশোরের একজন, নড়াইলের দু’জন, বাগেরহাটের পাঁচজন এবং গোপালগঞ্জের একজন রয়েছেন। খুলনা মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবের তথ্য দিয়ে এমনটি জানিয়েছেন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা প্রতিরোধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সার্বিক সমন্বয়কারী এবং খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা: মো: মেহেদী নেওয়াজ।
খুমেক হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার(আরএমও) এবং করোনা সাসপেকটেড আইসোলেশন ওয়ার্ড ও ফ্লু কর্ণারের মুখপাত্র ডা: মিজানুর রহমান বলেন, করোনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সকাল পৌনে ১০টায় মৃত্যু হয় গনেশ চন্দ্র বণিক(৫৬) নামের এক ব্যক্তির। তিনি করোনা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন শুক্রবার সন্ধ্যায়। নগরীর ৪৯ নম্বর ইউসোফ রো’র মির্জাপুরের বাসিন্দা গনেশ চন্দ্রের করোনা শনাক্তও হয়েছিল শুক্রবার। এর আগে তিনি অসুস্থ হলে ১৪ জুন খুলনা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে নমুনা দেন। পরে তিনি বাসায়ই ছিলেন। এরপর যেদিন ফলাফল পজেটিভ আসে সেদিন সন্ধ্যায় তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত করোনা হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সকালে তার মৃত্যু হয়।
এছাড়া শেখর রায় নামে নগরীর কালীবাড়ি রোডের এক ব্যক্তি সম্প্রতি খুমেক হাসপাতালের ফ্লু কর্ণারে নমুনা দিয়ে উধাও হন। পরে গতকাল শনিবার বেলা আড়াইটায় তিনি নিজেই গিয়ে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে হাজির হন। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে ভর্তি করে চিকিৎসা শুরু করেন। কিন্তু মাত্র আধা ঘন্টা পর অর্থাৎ বিকেল তিনটায় তার মৃত্যু হয়।
এছাড়া গতকাল খুমেক হাসাতালের করোনা সাসপেকটেড আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আলেয়া বেগম(৪০) নামের এক নারীর গতকাল সকাল ১০টায় মৃত্যু হয়েছে। তিনি নগরীর খালিশপুর নিউজপ্রিন্ট গেটের বাসিন্দা। শুক্রবার সকাল নয়টার পর করোনার উপসর্গ নিয়ে তিনি ওই ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছিলেন। একদিন পর গতকাল সকালে তার মৃত্যু হয়। তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
অপর একটি সূত্র জানায়, আব্দুর রাজ্জাক নামের একজনের গতকাল ফুলবাড়িগেটের বাসায় মৃত্যু হয়। এছাড়া নগরীর কেডিঘোষ রোডের এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়। তাদের দু’জনেরও নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে বলে সূত্রটি জানায়।
এছাড়া নগরীর খালিশপুর থানাধীন কাশিপুরের জরিনা বেগম(৬০) ও নড়াইলের কালিয়ার কার্ত্তিক(৪০) করোনার উপসর্গ নিয়ে শুক্রবার মারা গেলে গতকাল তাদের নমুনা পরীক্ষায় ফলাফল পজেটিভ আসে। জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে খালিশপুরের কাশিপুরের জরিনা বেগম (৬০) বৃহস্পতিবার বিকেল সোয়া পাঁচটায় খুমেক হাসপাতালের করোনা সাসপেক্টেড আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০ টায় তিনি মারা যান। তিনি কাশিপুরের মৃত আব্দুল গনি সরদারের স্ত্রী। নড়াইল জেলার কালিয়া থানার পুরুলিয়া গ্রামের মৃত নিতাই’র ছেলে কার্ত্তিক (৪০) বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভর্তি হন। তিনিও শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টায় মারা যান।
অবশ্য করোনা সাসপেকটেড আইসোলেশন ওয়ার্ড ও করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন প্রশ্ন ওঠায় গতকাল সকালে খুলনা মেডিকেল কলেজের কনফারেন্স রুমে খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা: মুন্সী মো: রেজা সেকেন্দারের সভাপতিত্বে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় বক্তৃতা করেন, খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা: মো: মেহেদী নেওয়াজ, হাসপাতালের উপ-পরিচালক বিধান চন্দ্র, সহকারী পরিচালক আতি ডা: আতিয়ার রহমান, এনেসথেসিয়া বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা: শেখ মো: ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, ডা: জিল্লুর রহমান তরুণ, ডা: অনল রায়, ডা: নিয়াজ নওশের, টেকনিশিয়ান শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
সভায় করোনা সাসপেকটেড আইসোলেশন ওয়ার্ডে নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন এবং ওষুধ সরবরাহের ব্যাপারে সকলকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহবান জানানো হয়।
অপরদিকে, খুলনা মেডিকেলের পিসিআর ল্যাবে গতকাল যাদের করোনাভাইরাস(কোভিড-১৯) শনাক্ত হয় তারা হলেন, খুলনা মহানগরীর হরিণটানার শেখ মিজানুর রহমান(৩৮) ও নাজিফা খাতুন(২২), সাউথ সেন্ট্রাল রোডের তাসলিমা বেগম(৫৪), ইকবাল নগরের নাসিমা আক্তার(৩৪), সাউথ সেন্ট্রাল রোডের মো: কামরুল হাসান(৪০), রেল ব্রীজের আংশুমান(৪২), বড় মির্জাপুরের বকুল হোসাইন(২৬), সোনাডাঙ্গা সবুজ বাগের আমানত(৩৭), খালিশপুর হাউজিংয়ের আবুল কালাম(৪৪), ছোট বয়রার মনঞ্জুরুল(৬০), লবনচরার তরু(৩৮), সোনাডাঙ্গার ডা: কামরুন্নাহার মোনামী(২৫), নিরালার অনুপম মেহেদী(৩২), খুমেক হাসপাতালের রুমা হালদার(৫০), খালিশপুরের এম তাসিরুল(৫২) ও সৌরভ বিশ^াস(২০), গোলদারপাড়ার আ: মজিদ(৩৬), ফরাজীপাড়ার জুয়েল(২৯), মুন্সীপাড়ার আ: জলিল(৬২), টুটপাড়ার রুবি(৬১), দৌলতপুরের পিকুল কুমার, শেখপাড়ার হেমায়েত, লবনচরা ইসলামপাড়ার এনামুল(৪১), মুজগুন্নির সাবিহা(১৪), খানজাহান আলী রোডের মুর্শিদা(৪৮) ও রবিব(১৬), এমটি রোডের মো: শরাফাত আলী(৩৮), নূর নগরের মো: লিটু মোল্লা(৫১), গল্লামারীর সালমা সুলতানা(৩৬), মুজগুন্নির জান্নাতী(৩৮), পুরাতন পুলিশ ফাড়ির মো: তরিকুল ইসলাম(৫৫), বয়রার মো: শফিকুল ইসলাম(৫২), পুরাতন পুলিশ ফাড়ির ফারিহা ইসলাম(২৪), খালিশপুরের আলমগীর(৩০), শের-এ-বাংলা রোডের আ: সালাম(৪৫), মজিবর(৪৭), বড় বয়রার সেলিনা(৩২), টুটপাড়ার মিজানুর খান(৬০), মিয়াপাড়ার মো: সেলিম(৫৭), বানিয়াখামারের হিরা(৩৮), কাশিপুরের জরিনা বেগম(৬০), ছোট বয়রার মো: মাফরুফ হোসাইন(৩৩), দেয়ানার ইউনুস আলী মোড়ল(৭৫), পাবলার নাসির উদ্দিন(৫৭), হরিণটানার লিপি বেগম(৪৫), টুটপাড়া দিলখোলা রোডের মো: ওমর ফারুক(৫৪), নিরালার মীর্জা সাইয়েদুল ইসলাম(২৪) ও মীর্জা শরিফুল ইসলাম(৬৫), জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আবু সিদ্দিক মুফতি, মো: রুহুল আমিন বেগ, মো: মফিজুর রহমান ঢালী, মো: মতিউর রহমান, কাজী মফিজুর রহমান ও শফিকুর রহমান, মৎস্য অফিসের সরজ কুমার মিস্ত্রী, খালিশপুরের জাহিদ হাসান(৪৫), কেসিসির জাহিদ(৪৫) ও মনিরুজ্জামান(৩০), হাজী মহসীন রোডের মো: নওশাদ আলী(৫২), খুলনা মুক্তিসেবা সংস্থার মো: নাসির উদ্দিন(৪০), আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের ডা: মো: বেলাল উদ্দিন(৪১), দৌলতপুর দেয়ানার সাহিদা বেগম(৫৬), সোনাডাঙ্গার মো: শহিদুজ্জামান রিপন, দৌলতপুর আঞ্জুমান রোডের রনি মোল্লা(৬০), বয়রার মো: মহিদুল ইসলাম(৫৩), বয়রা কলেজ মোড়ের মো: রফিকুল ইসলাম খান(৫৫), মহেশ^রপাশার ফজলুল(৩৬), বৈকালীর আয়শা(২০), পশ্চিম বানিয়াখামারের কামরুল করিম(৫৫), ডাক্তারপাড়ার অশোক বশাক(৪২), দেয়ানার মো; মনিরুল ইসলাম(৩৮), টুটপাড়ার মো: জ্যোতি, কেএমপির রবিউল আউয়াল(২৮), তালতলার জয়ন্তী কুমার কুন্ডু(৪৫), খুমেক হাসপাতালের রুপা(২৭), সিদ্দিকীয়া মহল্লার মো: ইসহাক(৫৭), রূপসা স্ট্যান্ড রোডের শেখ ওবায়দুল্লাহ আল মামুন(৫৯), হোসনেয়ারা মাসুদ(৫৪), সিরাজুম মুনিরা(২৪) ও মো: ইমরান হোসাইন(২৬), খালিশপুরের সজিব মাহমুদ(২৩) ও আলমগীর কবির(৪২), যোগীপুলের আ: সামাদ(৭০), গোবরচাকার শেখ ইকবাল হোসাইন(৪৪), বৈকালীর ফাতেমা সুলতানা(২৭), মুন্সীপাড়ার মাহামুদ হাসান(৬২), তারিফুল(২৮), কেএমপির কামাল হোসাইন(৩৬) ও ফরহাদ(৫৩), ডাক্তার পাড়ার মিজানুর রহমান, আলিমুর রহমান, মিয়াপাড়া মেইন রোডের নাসিমা আক্তার(৫২), নাজিরঘাট ক্রস রোডের এফএম নূরুল হক(৫৮), রূপসা স্ট্যান্ড রোডের শাহনাজ পারভীন(৩৬) ও মরিয়ম, খালিশপুর কাষ্টমঘাটের মাসুম(২৭), আবু নাসের হাসপাতালের হেলেনা আক্তার(৪৯), দৌলতপুরের আব্দুল জলিল(৩৮), ২ নং নেভী গেটের আকলিমা খানম(৫০), পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির হাফিজুর রহমান(৫৫), জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের অরুপ সরকার(২৮), গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কামরুন্নাহার স্বপ্না(৩৫), সোনাডাঙ্গা হাফিজনগরের লুবা পারভীন(৩৪) ও মো: সাগর হোসাইন(৩৮), খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আব্দুর রশিদ(৬০), স্যার ইকবাল রোডের প্রভাত কর্মকার(৫৪), রেল গেটের মেহেদী হাসান(৩৩), মুজগুন্নি মেইন রোডের সরদার সাহিদুজ্জামান(৪৭), গল্লামারী কাশেম নগরের শেখ শরীফ উল্লাহ(৩৬), রেল গেটের বজলুর রহমান(৪০), মিয়াপাড়ার আব্দুল্লাহ আল মামুন(৪২), খালিশপুরের রাশেদ খান(২৮), ফরাজীপাড়ার জাকির হোসাইন(৫২), টুটপাড়ার এসএম মঞ্জুরুল(৫৩), বিকে মেইন রোডের আবু হোসাইন(৬৫), ধর্মসভা ক্রস রোডের মো: হায়দার আলী(৬৫), আড়ংঘাট মোড়লপাড়ার দোলা(২৯), বয়রার এমএ সাদী, খুমেক হাসপাতালের ঝর্ণা সিকদার(৩৫) ও টুটপাড়া সরকারপাড়ার ফিরোজ আহমেদ। এর বাইরে দু’জনের পুন:শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া বাকী আক্রান্তরা নগরীর বাইরের বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।