অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির হাতছানি

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ খুলনা মহানগরীর বসুপাড়া লেনের কেসিসি পরিচালিত ইসলামাবাদ কলেজিয়েট স্কুলের সামনের একটি সরু রাস্তার মাথার দোতলা বাড়িটির নিচ থেকে দেখলে বোঝারই উপায় নেই বাড়ির ছাদে তিনশ’ প্রজাতির গাছ। তাও আবার একটি নয়, বরং একাধিক ধাপে রাখা হয়েছে সাজিয়ে। গাছগুলো আবার দেশীয় নয়, সব বিদেশী এবং দুর্লভ প্রজাতির। শফিকুর রহমান নামের একজন চিকিৎসক বাড়ির ছাদে এমন ব্যতিক্রমী গাছের সমন্বয়ে ছাদ বাগান করছেন বিগত দু’বছর ধরে। শুরুটা হয়েছিল মূলত: করোনা মহামারীতে স্কুল বন্ধ থাকায় একমাত্র পুত্র সন্তানকে মোবাইল বা অন্য কোন আসক্তি থেকে রক্ষার লক্ষ্য নিয়ে। ইতোমধ্যে এ কাজে তার খরচও হয়ে গেছে প্রায় আট লাখ টাকা। কিন্তু সেগুলো বিক্রি করে তিনি লাভ করতে পারবেন অনেক। সেই সাথে একমাত্র ছেলেকেও করা সম্ভব হয়েছে বৃক্ষপ্রেমি। ব্যতিক্রমী এই ছাদ বাগান নিয়েই তৈরি হয়েছে আজকের প্রতিবেদন।
ডা: শফিকুর রহমান বলেন, তার ওই ছাদে বর্তমানে প্রায় তিনশ’ প্রজাতির দু’হাজার গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছই টবে লাগানো। গাছগুলোতে মাটির পরিমানও সর্বোচ্চ শতকরা ২৫ ভাগের বেশি নয়। অর্থাৎ তুষ, কাঠ কয়লা, ছাই, গাছের গুড়া, কোকোপিট, সরিষার খৈল, ভার্মি কম্পোষ্ট প্রভৃতি দিয়েই লাগানো হয়েছে গাছগুলো। খুলনার বিভিন্ন নার্সারী, যশোর, ঢাকা, আশুলিয়া, ভারত, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন স্থান থেকে তিনি গাছগুলো সংগ্রহ করেছেন। দেশের মধ্যে যেখানেই দুর্লভ এসব গাছের সন্ধান পেয়েছেন সেখানে যেমন তিনি গিয়েছেন তেমনি বিদেশী গাছ তিনি আমদানীকারকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছেন। বিগত দু’বছর ধরে তিনি গাছগুলো সংগ্রহ এবং রক্ষণাবেক্ষন করলেও এখন পর্যন্ত তেমন বিক্রি করতে পারেননি। সর্বোচ্চ চার থেকে পাঁচ হাজার টাকার গাছ বিক্রি করেছেন জানিয়ে ডা: শফিকুর রহমান বলেন, এখনও বিক্রির জন্য তেমন লোকজন আসছে না। তবে আসলেও তিনি তার প্রয়োজনের অতিরিক্ত গাছগুলোই কেবল বিক্রি করবেন। কোন উদ্যোক্তা যদি এগুলো নিয়ে ব্যবসা করতে চান তাহলে তিনি তাকে সকল প্রকার সহায়তা দেবেন বলেও উল্লেখ করেন। বিশেষ করে এ ক্ষেত্রে গাছগুলো রক্ষণাবেক্ষন থেকে শুরু করে যে কোন পরামর্শ তিনি বিনা পারিশ্রমিকেই দেবেন। তিনি বলেন, এখন পৃথিবীব্যপী যেভাবে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে সেখানে এ ধরনের গাছের চাহিদা বাড়বেই। বাড়ির ব্যালকনি, ছাদে এমনকি পড়ার টেবিলেও কেউ যদি এর কোন একটি গাছ টবে করে রাখতে চান তাও সম্ভব। এমনকি এভাবে অনেকে পড়ার টেবিলে গাছ রাখছেন বলেও তিনি জানান।
খুলনার সেন্ট জোসেফ স্কুলের ৬ষ্ট শ্রেণির ছাত্র আদুলিয়াদিজুর রহমান ওরফে মোমিনকে করোনা পরিস্থিতি থেকে সামাল দিতে গিয়ে তিনি প্রথমে বাড়ির নিচের মাটিতে গাছ লাগানো শুরু করেন উল্লেখ করে ডা: শফিকুর রহমান বলেন, নিজে বাড়িতে গাছ লাগানোর পাশাপাশি ছেলেকে মোবাইলে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। এক পর্যায়ে গাচের প্রতি ভালোবাসা জন্মে ছেলের। ইন্টারনেটে বিভিন্ন গাছের ছবি দেখে তাকে ওই গাছ সংগ্রহ করতে বলায় তিনি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গাছগুলো সংগ্রহ শুরু করেন। এক পর্যায়ে গাছের সংখ্যা বেড়ে গেলে ছাদে ওঠানো শুরু করেন। ছাদও পরিপূর্ণ হয়ে গেলে তিনি লোহার এ্যাংগেল দিয়ে সেখানে একাধিক ধাপ করে একই জায়গায় অনেক গাছ রাখতে সক্ষম হন।
নিজে ডাক্তারী পেশায় জড়িত। তার পরেও প্রতিদিন সকালে উঠেই গাছগুলোর পরিচর্চা করেন তিনি। পরে তার ছেলে মোমিন সেগুলোর পরিচর্চা করে। ডা: শফিকুর রহমানের স্ত্রী সরকারি চাকরী করেন। এই তিনজনের সংসারে একমাত্র ছেলের সঙ্গী হয়ে দাঁড়ায় গাছ।
গত শুক্রবার ওই ছাদ বাগানটি পরিদর্শনকালে ডা: শফিকুর রহমান বলেন, প্রায় দু’হাজার গাছ রয়েছে তার ছাদ বাগানে। যদি কেউ কিনতে চান তাহলে তিনি বিক্রি করবেন। তবে যে দামে তিনি কিনেছেন তার চেয়ে অনেক কম দামেই বিক্রি করতে পারবেন এ গাছগুলো এমনটি আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, কোন কোন গাছ তিনি চার থেকে পাঁচ হাজার টাকায়ও কিনেছেন। কিন্তু কেনার পর তিনি ওই গাছ থেকে কাটিং করে আরও গাছ উৎপাদন করেছেন। সুতরাং এখন কম দামে বিক্রি করলেও তিনি লাভ করতে পারবেন। যদিও গাছের প্রজাতিগুলো তিনি হাতছাড়া করবেন না বলে জানিয়েছেন। মূলত: সাজসজ্জার জন্যই এ গাছগুলো রাখা হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে পুরো গাছটিই একটি ফুলের মতো দেখায় আবার কোনটিতে ফুল হয়। এছাড়া অনেক গাছের পাতাই সৌন্দর্য। এক কথায় গাছগুলো পরিবেশ সুরক্ষায় ভূমিকা রাখে বলেও তিনি জানান।
বাড়িটি পরিদর্শনকালে কথা হয়েছিল ডা: শফিকুর রহমানের একমাত্র ছেলে মোমিনের সাথে। পড়াশুনা, সাইকেল চালানো আর বন্ধুদের কখনও হেটে বেড়ানো কখনও খেলাধূলা ছাড়া বাজে কোন আড্ডা নেই তার। অবসর সময় তার কাটে ছাদের ওই গাছগুলোর সাথে। পিতার অবর্তমানে গাছের পরিচর্চায়ও সময় কাটে মোমিনের। সব মিলিয়ে যে গাছগুলো সখের বসে কেনা হয়েছিল সেগুলো আজ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির হাতছানি দিচ্ছে। যে গাছগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে সেগুলো এখন খুচরা মূল্যে বিক্রি করলে অন্তত: ২০ লাখ টাকা বিক্রি করা যাবে বলেও জানান উদ্যোক্তা ডা: শফিকুর রহমান।