নতুন সফটওয়্যার তৈরি করছে
মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট

এ এইচ হিমালয় : ফসলী জমির মাটিতে কি ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে, ওই জমিতে কী জাতীয় ফসল উৎপাদন সম্ভব অথবা ওই ফসল উৎপাদনের জন্য কি কি সার কতোটুকু প্রয়োজন হবে, কখন কখন সার প্রয়োগ করতে হবে-মোবাইল ফোন অথবা কম্পিউটারে এক ক্লিকেই বিস্তারিত সব তথ্য জানতে পারবেন কৃষক।
ফসল উৎপাদনে সব তথ্য কৃষকদের হাতের মুঠোয় নিয়ে আসতে ‘ডিজিটাল ল্যান্ড আই ডি’ নামের নতুন এই সফটওয়্যার তৈরি করেছে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিট।
একই সঙ্গে স্যাটেলাইটের ছবি ব্যবহার করে ফসল চাষ ও পরিমাণ বের করতে পৃথক আরেকটি সফটওয়্যার তৈরি করেছে সংস্থাটি। ‘রিমোট সেন্সি’ নামের এই সফটওয়্যারটি ইতোমধ্যে কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার মাঠ পর্যায়ে সফলভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। বর্তমান খুলনার ডুমুরিয়া, রূপসা ও তেরখাদা উপজেলায় রবি মৌসুমের আবাদকৃত ফসলের পরিমাণ নির্ণয়ে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।
কৃষি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, শুধু কৃষকরা নন, কৃষি বিভাগ, মন্ত্রণালয়সহ দেশের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে ভূমিকা রাখবে এই দুটি সফটওয়্যার। এর মাধ্যমে দেশে মোট সার ও বীজের চাহিদা, ফসল উৎপাদনের পরিমাণ, ঝড়-বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পোকায় ক্ষয়ক্ষতির তথ্য ছবিসহ জানা সহজ হবে। কৃষি জমি অকৃষি জমিতে রূপান্তরের কারণ ও পরিমাণও জানা যাবে এক মুহূর্তে।
সফটওয়্যার দুটির বিষয় জানাতে গতকাল সোমবার খুলনার লবণাক্ততা ব্যবস্থাপনা ও গবেষণা কেন্দ্রে মতবিনিময় করেন সফটওয়্যার তৈরির প্রধান উদ্যোক্তা মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের সদ্য বিদায়ী মহাপরিচালক বিধান কুমার ভান্ডার।
পূর্বাঞ্চলকে তিনি বলেন, দুই বছর আগে হঠাৎ করে পেঁয়াজের সংকট দেখা দিলো। ২০০ টাকায়ও পেঁয়াজ পাওয়া যায়নি। আমাদের কাছে তথ্য ছিলো, দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ৩০ লাখ মেট্রিক টন, আমাদের চাহিদা ২২ লাখ মেট্রিক টন। ৮ লাখ টন উদ্বৃত্ত থাকার কথা। কিন্তু কম হলো কেন ? তখন সবাই বুঝতে পারে যে, মাঠ পর্যায়ের তথ্যে বড় ধরনের ভুল ছিলো। ওই সময় মাঠ পর্যায় থেকে কিভাবে সঠিক তথ্য আনা যায় তা বের করার দায়িত্ব দেওয়া হয় আমাকে।
তিনি বলেন, স্যাটিলাইট থেকে প্রতি ১২ ঘণ্টা পর পর ভূমির ছবি তোলা হয়। আমাদের কর্মকর্তারাও মাঠের ছবি তুলছেন। দুই ছবিই একটি সফটওয়্যারে দিয়ে যাচাই করে নম্বর দেওয়া হয়েছে। যেমন স্যাটেলাইটের ছবি আর আমাদের তোলা ধানের ছবি একসঙ্গে যখন মিলে গেছে তখন এর নাম দেওয়া হলো আমন-০১ ধান। এখন স্যাটেলাইটের ছবি সফটওয়্যারে দিয়ে বলা হলো দেশে আমন-০১ ধান চাষ হচ্ছে কোথায় কোথায় ? কিছু সময়ের মধ্যেই ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে। এভাবে স্যাটেলাইটের ছবি ব্যবহার করে ২৭টি ফসলের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সারাদেশে এখন ফসলের ছবি তোলার কাজ হচ্ছে।
তিনি বলেন, তাড়াইল উপজেলায় যখন পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখলাম, কৃষি বিভাগ থেকে ফসলের তথ্য দিয়েছে ১২৭ হেক্টর। কিন্তু আমাদের সফটওয়্যার আসলো ৫০০ হেক্টর। আমরা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে জরিপ করলাম। কৃষি বিভাগও জরিপ করে বললো আমাদের আগের তথ্য ভুল ছিলো, মোট ফসল ৪২৫ হেক্টর। টাঙাইলেও জরিপ হয়েছে। দুই জায়গাতেই সফটওয়্যারে ৫ শতাংশ পর্যন্ত কম-বেশি হচ্ছে। ধীরে ধীরে আরও সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে।
॥ ডিজিটাল ল্যান্ড আই ডি ॥
বিধান কুমার ভান্ডার বলেন, ডিজিটাল ল্যান্ড আই ডি সফটওয়্যারের ব্যবহারে সুফল পাওয়া যাবে আরও অনেক বেশি। প্রথমে আমার প্রতিটি জমির একটি আই ডি দেওয়া হবে। মৌজা ম্যাপের আইডির সঙ্গে এর সংযোগ দেওয়া হবে। জমির ছবিও থাকবে। আরও অনেক তথ্য সেখানে সংযোজন করা হবে।
তখন সফটওয়্যারে প্রবেশ করে জমির আইডি দিয়ে সার্চ দিলে জানা যাবে, এই জমিটি কেমন-উঁচু, নিচু নাকি মাঝারি। এরপর জানতে পাবেন মাটি কি দোআশ নাকি এটেল, জমির উর্বরতা কেমন, কোন ফসল ভালো উৎপাদন হবে সেটিও জানতে পারবেন। এই সফটওয়্যার তৈরির কাজ শেষ।
তিনি বলেন, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের এই সফটওয়্যারে ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা হবে। কৃষক জমির আইডিতে ক্লিক করে যদি লেখেন এই জমিতে আমন চাষ করবো। তখন কিন্তু সফটওয়্যারে বলে দেবে কৃষকের কতোটুকু সার লাগবে। ড্যাশবোর্ডে ওই তথ্য থাকবে। ঢাকা থেকে ড্যাশবোর্ডে ক্লিক করে জানা যাবে সারাদেশে এ বছর কতোটুকু সার লাগবে। এইভাবে সব তথ্য পাওয়া যাবে।
মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের সদ্য বিদায়ী মহাপরিচালক বিধান কুমার ভান্ডার বলেন, গত ৩০ জানুয়ারি আমি অবসরত্তোর ছুটিতে গিয়েছি। এর আগেই সফটওয়্যার দুটির কাজ শেষ করেছি। এখন মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংযোগ চলছে। ২০২২ সালে এই কাজ শেষ হবে। আমি নেই, কিন্তু সঠিকভাবে যাতে এই কাজ শেষ হয় এবং সবাই যাতে উপকার পায় সেই অনুরোধ রইলো।
খুলনার লবণাক্ততা ব্যবস্থাপনা ও গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অমরেন্দ্রনাথ বিশ^াস পূর্বাঞ্চলকে বলেন, সফটওয়্যার দুটি কাজ শেষ হলে হাতের মুঠোয় চলে আসবে কৃষি সংক্রান্ত সব তথ্য।