সাপ জোঁক ব্যাঙ ও কেঁচোর সাথে বসবাস
এম. পলাশ শরীফ, মোরেলগঞ্জঃ বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে কুঠিবাড়ী আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের জরাজীর্ণ ঘরে দুর্বিষহ জীবন যাপন। সামান্য বৃষ্টি ও জোয়ারের হাটু পানিতে ৪০টি পরিবার ঝুঁকি নিয়ে বসবাস। যেকোনো সময় ঘটে যেতে পারে বড় ধরেেনর দুর্ঘটনা। আশ্রয়ণ বাসিন্দাদের দাবি দুটি ব্যারাকে জরাজীর্ণ ২০টি ঘর সংস্কার করে বসবাসের উপযোগী করে দেয়ার।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, উপজেলার পৌর শহরের পানগুছি নদীর তীরবর্তী কুঠিবাড়ী আশ্রয়ন প্রকল্পের নামে ১৯৯৮ সালে সরকারিভাবে ৪ একর জমির ওপরে নির্মিত হয় আশ্রয়ণ প্রকল্পটি।
এ প্রকল্পে ৪টি ব্যারাকে ৪০টি পরিবারের এখানে বসবাস। ৭/৮টি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারসহ ভূমিহীন প্রতিটি পরিবারের জন্য ২০০১ সালে ১০ শতক করে জমির দলিলমূলে মালিকানা হন তারা। বর্তমানে এ আশ্রয়ন প্রকল্পে দু’টি ব্যারাকের ২০টি ঘর এখন জরাজীর্ণ। প্রতিটি ঘরের খুঁটি ভেঙে নড়বড়ে অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ঘরের ছাউনির টিনগুলো অসংখ্য ছিদ্র হয়ে ঝাজড়া হয়ে গেছে। বেড়ার টিন খুলে পড়ছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই ঘরগুলো পানিতে তলিয়ে যায়, অতিরিক্ত জোয়ারে হাঁটু পানি সৃষ্টি হয়ে রান্না খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। অভুক্ত থাকতে হয় পরিবার পরিজন নিয়ে। প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঝড়-বন্যা, জলোচ্ছাসের সময় ঘর ছেড়ে যেতে হয় অন্যত্র। স্যাঁতসেঁতে অবস্থা সর্বত্র, নেই কোনো স্যানিটেশন ব্যবস্থা, সুপেয় পানির রয়েছে অভাব। যে কারনে প্রতিটি ঘরে লেগে রয়েছে রোগ পিডা, অসুস্থ হয়ে বিছানা লগ্ন পড়ে রয়েছে অনেকেই। আশ্রয়ণের অফিস ঘরটিও জরাজীর্ণ ভাংঙ্গাচুরা অবস্থায়। সব মিলিয়ে এখন দুর্বিষহ ও ঝুঁকিপূর্ণ জীবন যাপন আশ্রয়ণ বাসিন্দাদের।
আশ্রয়ণের বাসিন্দা বৃদ্ধ নূরজাহান বেগম, সালেহা বেগম, লিজা আক্তার, শিল্পি বেগম, হাওয়া বিবি, কুলসুম বিবি, রুস্তুম কাজীসহ একাধিক আশ্রয়ণের বাসিন্দা বলেন, এভাবে কি ছেলে মেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করা যায়। ঝড় বৃষ্টি হলে আতংকে থাকি। একদিকে জোয়ারের পানি অন্যদিকে ঘরের টিনথেকে পানি পড়ে সবকিছু ভিজে যায়। অনেক রাত কাটতে হয় বসে থেকেই। ঝড় বন্যা এলে অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে কিভাবে নিরাপত্তাস্থানে যাবো। আমাদের অসহায় গরিবের কথা কেউ ভাবে না। প্রধান উপদেষ্টার প্রতি দাবি এ আশ্রয়নের ২০ টি ঘর সংস্কার করে বসবাসের উপযোগী করে দেওয়ার।
কুঠিবাড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্পের সভাপতি মো. সেকেন্দার আলী খান বলেন, ৪০ টি ঘর নির্মাণের পরে ২০১৬ সালে দুটি ব্যরাকের ২০ টি ঘর একবার সরকারি বরাদ্দে সংস্কার করা হয়েছিলো। বাকি ২০ টি কখনও সংস্কার হয়নি। বর্তমানে এ ঘরগুলোতে বসবাস করা যাচ্ছে না। ব্যাঙ, সাপ কুইচের সাথে থাকতে হচ্ছে। নেই খাবার পানির ব্যবস্থা, সরকারিভাবে এতো পানির ট্যাংকি দেওয়া হয়েছে অথচ এ আশ্রয়নে বাসিন্দাদের জোটেনি একটিও ট্যাংকি। জেলা প্রশাসক ও সরকারের উর্দ্ধতন প্রশাসনের প্রতি দাবি ২০ টি ঘর দ্রæত সংস্কার করে দেওয়ার।
এ সম্পর্কে মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুল্লাহ বলেন, পৌর শহরের কুঠিবাড়ী আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের জরাজীর্ণ ঘরগুলোর বিষয়ে খোঁজ খবর জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবহিত করা হবে। তবে, বরাদ্দ পেলে দ্রæত সংষ্কার করা হবে বলে আশ্বাস দেন এ কর্মকর্তা।