এম. পলাশ শরীফ, মোরেলগঞ্জ: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলীয় বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে ৪ লাখ মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত। প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পরিবর্তনের প্রভাবে নদীভাঙন, অতিবৃষ্টি খরা ও জলোচ্ছ¡াসে বছরের পর বছর ধরে স্থানীয় এ জনপদের মানুষ দুর্ভোগে ভুগছে। বাড়িঘর হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে অন্যত্র চলে গেছে শত শত পরিবার।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পানি, স্যানিটেশন ও জলবায়ু খাতে পৃথক বাজেট, টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মানের জন্য পর্যাপ্ত বাজেট, লবন পানি রোধে ব্যাবস্থা, স্থানীয় চাহিদানুযায়ী বাজেট বরাদ্দ রেখে বাজেট পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে বুধবার বেলা ১১টায় খাউলিয়া বাজারে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ডরপ্ ও হেলভেটাস বাংলাদেশ-এর সহযোগীতায় মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেনীপেশার শত শত নারী পুরুষেরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপকূলীয় এ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার প্রায় ৪ লাখ মানুষের বসবাস। ভৌগলিক অবস্থানে সমুদ্র সীমার নিকটবর্তী সুন্দরবন সংলগ্ন বির্স্তীণ এলাকাজুড়ে নদীর তীরবর্তী এ জনপদের মানুষের জীবনযাত্রা প্রতিনয়ত ব্যাহত হচ্ছে। একদিকে অব্যাহত নদীর ভাঙন, লবণাক্ততা, সুপেয় পানির সংকট, কৃষি, নির্ভরশীল ৮০ ভাগ মানুষের অর্থনৈতিক উপার্যনের ক্ষেত্রে হচ্ছে বাধাগ্রস্ত। সাড়ে ১০ হাজার হেক্টর জমি লবণাক্ততার কারনে একাধিক ফসল উৎপাদন হচ্ছে ব্যাহত।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৪৪ হাজার ৫৮০ হেক্টর আয়তনের মধ্যে ২৮ হাজার ২২৫ হেক্টর আবাদি ফসলী জমি রয়েছে। এ ফসলী জমি থেকে প্রতিবছরই ৫১০ হেক্টর জমি নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে। ভরাট ও বেদখল হয়ে জমির সাথে মিশে গেছে শতাধিক প্রাচীনতম খাল। যা এখন অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। ফসলী মাঠে পানি ওঠানামার বিভিন্নস্থানে ১৬টি ¯øুইজ গেট থাকলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিপ্তর সূত্র মতে, সুপেয় পানি ব্যবহারের জন্য ১৯৭৬ সাল থেকে এ উপজেলায় ৭শ’ টি টিউবয়েল বসানো হলেও তা অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারনে ব্যবহারে অনুপযোগী। জেলা পরিষদের তত্বাবধানে খাবার পানি উপযোগী ১১২টি বড় পুকুর রয়েছে।
এ ছাড়াও ব্যক্তিমালিকাধীন ছোট ছোট ১৭শ’ টি পুকুর থাকলেও। এর মধ্যে বিগত ১২ বছরে মাত্র ৫০ টি পুকুর পনঃখনন করা হয়েছে সরকারি অর্থ বরাদ্দে। এ ছাড়াও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে উপকূলীয় অঞ্চলে পানি সরবারাহ প্রকল্প মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা পানি সরবারাহ প্রকল্পসহ একাধিক প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৪ সাল থেকে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য রেইন ওয়াটার ভারভেষ্টিং ৩ হাজার লিটারের ২০ হাজার ট্যাংকি বিতরণ করা হলেও তা উপকুলীয় বাসির জন্য অপ্রতুল।
উপকূলীয় জনপদের মানুষ র্দীঘদিন ধরে মানববন্ধন, সভা-সমাবেশ, নদীর পাড়ে প্লাকার্ড নিয়ে স্মারকলিপির প্রদানের মাধ্যমে দাবি তুলে আসছেন। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য পৃথক বরাদ্দে পর্যাপ্ত পরিমানে বাজেট, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পানি ও জলবায়ু খাতে বাজেট বৃদ্ধি, স্থানীয় চাহিদা অনুযায়ী, পানি ও স্যানিটেশন বাজেট বরাদ্দের নিশ্চিত করন, নিরাপদ পানি নিশ্চয়তা, আগামি ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরে বৈষম্যহীন পানি ও জলবায়ু বাজেট চাচ্ছেন তারা।
এদিকে, অভিজ্ঞ জনেরা মনে করছেন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উপকূলীয় এ অঞ্চলের মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ব্যহত না হয়। সে লক্ষ্যে সরকারিভাবে এখনই উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে।
এ বিষয়ে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ডরপের ডেপুটি ডাইরেক্টর মো. আমির খসরু বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে বিশেষ করে মোরেলগঞ্জ উপজেলায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে স্যালাইনিটি মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে নিরাপদ পানির উৎস সংকুচিত হয়ে এসেছে। একদিকে সরকারি খাস পুকুরসমূহ অব্যবহৃত, অপরদিকে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা কৃষি, স্বাস্থ্য ও মানবজীবনে বিপর্যয় ডেকে আনছে। এমন পরিস্থিতিতে জনগণের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নারী, শিশু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। আমরা চাই এই মুহূর্তে জনগণের চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে বাজেট বৃদ্ধি এবং ব্যবহার নিশ্চিত করণের।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাবিবুল্লাহ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলীয় এ উপজেলার মানুষের দৈনন্দিন সমস্যাগুলোর বিষয়ে ইতোমধ্যে জেলা মাসিক সভায় একাধিকবার উত্থাপন করা হয়েছে। উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদেরকে অবহিত করা হয়েছে।