/ মোরেলগঞ্জে ভাঙনের আতংকে নির্ঘুম রাত কাটছে শত শত পরিবারের

মোরেলগঞ্জে ভাঙনের আতংকে নির্ঘুম রাত কাটছে শত শত পরিবারের

হুমকির মুখে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

এম. পলাশ শরীফ, মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট): কবে হবে বেড়িবাঁধ, পানগুছি নদীর অব্যাহত ভাঙন তো থামছে না। বছরের পর বছর শুনে আসছি বেড়িবাঁধ হবে। আবারও বাড়িঘর তৈরি করে ছেলে মেয়ে নিয়ে মাথা গোঁজার ঠাই হবে। এ রকম আশায় বুক বেঁধে স্বপ্ন বুনছেন বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের গাবতলা গ্রামের দিনমজুর জসিম বিশ^াসের স্ত্রী নূরুন নাহার বেগমসহ শত শত পরিবার এখন আতংকে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে।

বুধবার সরেজমিনে গিয়ে জানাগেছে, উপজেলার নদীর তীরবর্তী মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের গাবতলা ও কাঠালতলা এ দুটি গ্রামে শত শত পরিবার পানগুছি নদীর অব্যাহত ভাঙনে আতংকে দিনপার করছে পরিবার পরিজন নিয়ে। থেকে নেই অব্যাহত ভাঙন। প্রতিবছরই নতুন নতুন স্থান থেকে নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, ফসলী জমি, হুমকির মুখে রয়েছে ১১৬নং গাবতলা ইসলামাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাইতুন আমিন জামে মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। ৮০শ’ দশক থেকে এ দুটি গ্রামের নদীর তীরবর্তী এক হাজার পরিবারের প্রায় ৩ হাজার বিঘা ফসলী জমি নদী গর্ভে চলে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে এসব পরিবার। বাড়িঘর হারিয়ে অনেকে স্থান ত্যাগ করে চলে গেছেন ঢাকা, চিটাংগা, খুলনাসহ বিভিন্ন শহরে।

নদীর তীরবর্তী গাবতলা গ্রামের বাসিন্দা নূরুন নাহার বেগম বলেন, এ নদীতে স্বামী ভিটেবাড়ি ৫ থেকে ৭ বিঘা ফসলী জমি চলে গেছে। এখন রাস্তার পাশে একটু ছোট ঘর করে থাকছি। ৩ বছর ধরে মস্তিস্ক রোগে অসুস্থ স্বামী জসিম বিশ^াস ও ৫ ছেলে মেয়ে নিয়ে কোন মতে দিনপার করছি। এ রকম একই গ্রামের বাসিন্দা খালেক বিশ^াস, আশ্রাব আলী শেখ, শহিদ বেপারী, কৃষক হারুন হাওলাদারসহ একাধিক বাসিন্দারা বলেন, জানিনা কবে থামবে এ ভাঙন, স্বর্বনাশা পানগুছি নদী সব কিছু কেড়ে নিয়েছে। শুনে আসছি রেড়িবাঁধ হবে? এ স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে আছি। মৃত্যুর আগে যদি দেখে যেতে পারতাম রেড়িবাঁধ।

১১৬ নং বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আব্দুল কাইয়ুম, শাহিনুর খানম, দোলা রায় বলেন, মাসের মধ্যে ১০ দিনই স্কুল মাঠে জোয়ারের অতিরিক্ত পানি ওঠায় হাঁটু পানি পার হয়ে পাঠদানে যেতে হয় শিক্ষার্থীদের। এমনকি শরীর চর্চা ও জাতীয় সঙ্গিত নিতে হয় শ্রেনীকক্ষের বারান্দায়, নদীর তীরবর্তী বিদ্যালয়টি হওয়ায় আতংকে থাকতে হয় শিক্ষার্থীসহ আমাদের।

এ বিষয়ে বাগেরহাট জেলা পানিউন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মদ আল বিরুনী বলেন, মোরেলগঞ্জ উপজেলায় ইতোমধ্যে পানগুছি প্রকল্পের মাধ্যমে ৬৫০ কোটি টাকার বেড়িবাঁধের কাজ ২০২৩ সালে খাউলিয়া থেকে ফেরীঘাট পর্যন্ত সাড়ে ৪কিলোমিটার এবং শ্রেনীখালী এলাকার তৎসংলগ্ন দেড় কিলোমিটার বেড়িবাঁধের কাজ চলমান রয়েছে। ভাঙন কবলিত বিভিন্ন স্থানে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। পরবর্তীতে বøগ ফেলা হবে। এ প্রকল্পের কাজটি ২০২৫ সালে সমাপ্ত হবে। তবে, চলমান কাজের সময় আরও বৃদ্ধি হতে পারে বলে এ কর্মকর্তা জানান।