এম. পলাশ শরীফ, মোরেলগঞ্জ: বেকার জীবন যে কতবড় অভিশাপের তা বলে বুঝানো যাবে না। ছোট ছোট ৫টি ছেলে মেয়ে নিয়ে অনেক কষ্টে দিন পার করেছি। সুখের সন্ধানে কোথাও সুখ মেলেনি। অবশেষে স্বপ্ন আজ বাস্তব হয়েছে। ত্যাগ আর পরিশ্রম মানুষকে সাফল্যের দারপ্রান্তে পৌছে দিতে পারে। এরকম বেকার জীবনের বাস্বতার গল্প বললেন একজন সফল উদ্যেক্তা কমলা চাষী নাসির মল্লিক।
মোরেলগঞ্জ উপজেলার পুটিখালী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড পুটিখালী গ্রামের সফল উদ্যোক্তা কমলা চাষী নাসির উদ্দিন মল্লিক। তার পিতা তৈয়ব আলী মল্লিক একজন অবসর প্রাপ্ত কর্মচারী, ৩ ভাইয়ের মধ্য সফল চাষী নাসির উদ্দিন মল্লিক বড়, ছোট দুই ভাই খুলনা বিভাগীয় শহরে থাকে। সংসারের বড় ছেলে হিসাবে গ্রামের বাড়িতে বৃদ্ধ পিতা পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করেন। পিতার সামান্য বসত বাড়ি সহ ২ বিঘা জমি থেকে কোন মত সংসার চলে। বেকারে জীবনে পার করতে হয় তার। চাষী নাসির উদ্দিনের দীর্ঘ বছরের বেকার জীবনে অনেক কষ্টে দিনপাত করতে হয়েছে। তবে তার স্বপ্ন ছিল বেকার থাকবে না। কিছু একটা করে সংসারের চাকা ঘুরাতে হবে। এমনি করে ইউটিউব দেখে চুয়াডাঙ্গার একটি কমলা বাগান থেকে প্রথমে তিনি ৫০ টি চায়না কমলার চারা ক্রয় করে আনেন প্রতিপিস ১২৫ টাকা দরে। ২০২০ সালে সাড়ে ৭ কাঠা জমিতে ৫০টি এ কমলা চারা রোপন করে চাষ শুরু করেন। ১ বছর পরে সফল এ চাষীর নাসির উদ্দিন মল্লিকের গাছে ফলন আসে। প্রাথমিক ভাবে এক একটি গাছে ২৫/৩০ টি কমলা ফল হয়। গত বছর তিনি এ বাগান থেকে ১৭ মন ২৩ কেজি কমলা ফল বিক্রী করেছেন প্রতি মন ১৩ হাজার ২ শত টাকা দরে। প্রায় তিনি ৩ লক্ষ টাকার ফল বিক্রী করেছে এ বাগান থেকে। এ বছরে তার কমলা বাগানে ফলন হয়েছে দ্বিগুন যদিও বাজার দর একটু কম। তারপরেও এ কমলা বাগান থেকে ২০ মনের অধিক ফল বাজারজাত করতে পারবেন বলে তিনি জানান।
এ সফল উদ্যোক্তা চাষী নাসির উদ্দিন মল্লিক বলেন অতিরিক্ত লবণাক্ততায় যেখানে অন্য ফসল ফলাতে খুবই কষ্ট হয় তার মধ্যেও এ চায়না কমলা তার বাগানে অতিরিক্ত ফলন হয়েছে। এটি সবই সৃষ্টিকর্তার দান। তবে পরিচর্যায় সার্বক্ষনিক পরিবারের লোকজন থাকি। কমলাগুলো খেতেও খুবই মিষ্টি। যে কারনে স্থানীয় বাজারে যতেষ্ট চাহিদা রয়েছে। পার্শ্ববর্তী জেলা উপজেলার বেপারীরা এসে বাগান থেকে ফল কেটে নিয়া যায়। গত বছর ১৩ হাজার টাকার বেশি দরে প্রতি মন এ চায়না কমলা বিক্রী হয়েছে। এ বছর বেপারিরা দাম বলছে প্রতি মন ১১ হাজার টাকা। দু একদিনে মধ্য বাগান থেকে কমলা ফল কর্তন করা হবে। তার এ বাগান থেকে প্রায় ৪ লাক্ষ টাকার চায়না কমলা ফল এ বছর তিনি বিক্রী করতে পারবেন বলে আশা করছেন। একজন সফল চাষী হিসাবে নাসির মল্লিক আরও বলেন লেখা পড়া শেষ করে সরকারী চাকুরি করতে হবে এমনটা নয়, বিদেশের মাটিতে অর্থ উপার্জনের জন্য লাগাম ঘোড়ার মত ছোটার প্রয়োজন হবে না। এ দেশে বসেই দেশের মাটিতেই সোনা ফলানো সম্ভব হতে পারে একজন সফল উদ্যেক্তা। যদি থাকে অধ্যাবসা আর পরিশ্রম।
এ সম্পের্কে মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, এ উপজেলায় কৃষি অধিদপ্তর থেকে কমলা চাষের কোন প্রকল্প নেই তবে ২/১ জন ব্যাক্তির উদ্যোগে এলাকা ভিত্তিক নিজ বাড়িতে চাষাবাদ করতে পারে পুটিখালী ইউনিয়নে কৃষক নাসির উদ্দিন মল্লিকের কমলা বাগানের চাষাবাদে ভালো ফলনের বিষয়ে তিনি অবহিত নন। তবে, এ চাষীর বাগানের খোঁজ খবর নিয়ে তাকে চাষাবাদে আরও আগ্রহ বৃদ্ধির সাপোর্ট দেওয়া হবে বলে এ কর্মকর্তা জানান।