খুলনায় বিনোদনের নতুন স্থান
কেডিএর নতুন আবাসন প্রকল্প

এ এইচ হিমালয় ঃ উন্মুক্ত প্রান্তরের মাঝে মাঝে পিচ ঢালা সড়ক। বালুর ভেতরে তৈরি হয়েছে কাশবন। শ্রাবণের বৃষ্টিতে স্নান সেরে দিনে কয়েকবার সিক্ত হচ্ছে ঘাস ফুলগুলো। বর্ষার পানিতে টলমল করেছে লেকের পানি। লেকের ওপর নির্মাণাধীন সেতুগুলো যেন পেখম মেলানো ময়ূরেরই প্রতিচ্ছবি। যা’ লেকের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ।
খুলনা শহর বাইপাস সড়কের পাশে ‘ময়ূরী’র এই মনোরম পরিবেশ মুগ্ধ করছে খুলনার ভ্রমণপ্রেমীদের। শ্রাবণের বিকেলের মৃদু বাতাসে কাশবনের সঙ্গে দোল খাচ্ছে ভ্রমণপিয়াসী নগরবাসীর হৃদয়।
ঈদসহ যে কোনো ছুটির দিনেই সময় কাটাতে মানুষ ছুটে যাচ্ছেন খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কেডিএ) বাস্তবায়নাধীন ময়ূরী আবাসিক প্রকল্পে। শহর বাইপাস সড়কের সন্নিকটে প্রায় ৯০ একর জমির ওপর বাস্তবায়নাধীন ময়ূরী প্রকল্পটি এখন খুলনার মানুষের বিনোদনের অন্যতম জায়গা।
ঈদের ছুটিতে প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিনোদনের সুযোগহীন শহরে ময়ূরী প্রকল্প এলাকা নগরবাসীর পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। ৯০ একরের বিশাল প্রান্তর খোলা পড়ে থাকায় সামাজিক দূরত্ব পালন করা যাচ্ছে অনায়াশেই। এজন্য করোনা প্রকোপের মধ্যেও পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে সবাই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বেশিরভাগ ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটর সাইকেল আরোহী হওয়ায় লকডাউনেও ভিড় কমছে না।
ঈদের দ্বিতীয় দিন বিকালে সেখানে কথা হয় খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খানের সঙ্গে। দুই কন্যা ও স্ত্রীকে নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন তিনি। পূর্বাঞ্চলকে তিনি বলেন, ঘরে ঘরে থাকতে মেয়েরা হাঁপিয়ে উঠেছে। এজন্য সবাই একটু খোলা জায়গায় বেড়াতে যেতে চায়। খুলনা নগরীর কাছে এমন খোলা জায়গা কোথাও নেই। লেকের পাড়ে বসে থাকতে খুবই ভালো লাগে। আমাদের মেয়েদের জায়গাটি খুব পছন্দ হয়েছে। এ নিয়ে দ্বিতীয় বার বেড়াতে আসলাম।
নগরীর শেখপাড়া লৌহ পট্টির ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান কচি বলেন, করোনা সংক্রমণের ভয়ে দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে কোথাও বেড়াতে যেতে পারি না। ময়ূরী প্রকল্পের ভেতরে সুন্দর বেড়ানোর জায়গা হয়েছে শুনে বেড়াতে আসলাম। পরিবেশ খুবই সুন্দর। তবে বেড়াতে আসার সড়কটির অবস্থা খুবই নাজুক। বিশেষ করে সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল থেকে ময়ূরী ব্রিজ এবং ব্রিজের পরেও বেশকিছু অংশ চলাচলের উপযোগী নেই। আমাদের প্রায় ৭ কিলোমিটার পথ ঘুরে আসতে হয়েছে।
একই অভিযোগ ছিলো বেড়াতে আসা বেশিরভাগ মানুষের।
ভ্রমণপিয়াসীরা জানান, বিপুল সংখ্যক মানুষ এখানে বেড়াতে আসলেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা কিছুটা দুর্বল। ভেতরের সড়কগুলোতে বাইকার ও বখাটেদের দৌরাত্ম্যও কিছুটা বেশি।
কেডিএর ময়ূরী আবাসিক এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ও কেডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী সাবিরুল আলম বলেন, ময়ূরী প্রকল্প যেন বসবাস ও বিনোদন উপযোগী হয়-এজন্য পুরো পরিকল্পনা নতুন করে সাজানো হয়েছে। নকশা পরিবর্তন করে মানুষের বিনোদন উপযোগী করে, এরপর বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয়েছে। নতুন পরিকল্পনায় প্রশস্ত লেক, লেকের পাড়ে ওয়াকওয়ে, একটি শিশু পার্ক এবং কয়েকটি বেইলী ব্রিজ নির্মাণ হচ্ছে।
এছাড়া ভেতরে আরও একটি পার্ক, মসজিদ এবং বিনোদনের আরও সুযোগ-সুবিধা থাকবে। প্লটগ্রহীতা ছাড়াও নগরবাসী এগুলো উপভোগ করতে পারবেন।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভ্রমণপ্রেমী বলেন, ঘুরে বেড়ানোর জন্য এলাকাটি আদর্শ। কিন্তু কতোদিন এটা থাকবে-সেটাই দেখার বিষয়। বেশকিছু স্থানে লেকের ব্লকগুলো এবড়ো-থেবড়োভাবে বসানো। লেক পাড়ের কয়েকটি স্থানে টাইলসের মাঝে পুডিং নেই, ফিনিশিংও ভালো না। দেখলেই বোঝা যায়, সৌন্দর্যবর্ধনের কাজগুলোতে যতেœর অভাব রয়েছে। এই কাজগুলো আন্তরিকতার সঙ্গে করলে এটি দীর্ঘ মেয়াদে এর সুফল পাবে নগরবাসী। নির্মাণ কাজে যতœশীল না হলে কয়েকবছরের মধ্যেই বিনোদনের পরিবেশ হারাবে এই এলাকা।