আক্রান্ত হওয়া ৮৫ চীনা নাগরিকের
পুন:পরীক্ষায় ৫৬ জনেরই নেগেটিভ

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ খুলনা মহানগরীর খালিশপুরে নির্মাণাধীন ৩৩০ মেগাওয়াট ডুয়েল ফুয়েল কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কর্মরত ১৮৫ জন চিনা নাগরিকের নমুনা পরীক্ষায় ৮৫ জনেরই করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল। অথচ ওই একই কেন্দ্রে কর্মরত বাংলাদেশী পাঁচ শতাধিক কর্মীর কারও করোনা শনাক্ত হয়নি। আপাত: দৃষ্টিতে এমন তথ্যে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, চীনা নাগরিকরাই ভয়াবহ আকারে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। কিন্তু এ বিষয়টি নিয়ে তথ্যানুসন্ধানে জানা গেলো শুধুমাত্র পরীক্ষায়ই এতো লোকের পজেটিভ ফল আসে। তবে আশার কথা হচ্ছে চাইনিজ নাগরিকদের মধ্যে যে ৮৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল তার মধ্যে পুন: পরীক্ষায় ৫৬ জনেরই নেগেটিভ ফল হয়। অর্থাৎ আর মাত্র ২৯ জন আছেন আইসোলেশনে। চাইনিজ নাগরিকদের মধ্যে এতো জনের করোনা হলেও বাংলাদেশী শ্রমিকরা কিভাবে করোনামুক্ত জানতে চাইলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের এক কর্মী বললেন, দেশীয় শ্রমিকদের কেউই এখনো পরীক্ষাই করাননি। তার মতে, দেশীয় শ্রমিকরা চাইনিজদের মতো পর্যায়ক্রমে নমুনা পরীক্ষা করালে হয়তোবা তাদের চেয়ে বেশি পজেটিভ হতো। তিনি বলেন, চাইনিজ নাগরিকদের মধ্যে গত ১৮ এপ্রিল দু’জনের একসাথে করোনা শনাক্ত হলে তার পর থেকেই তারা ধাপে ধাপে সবাই নমুনা পরীক্ষা করান। ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কর্মরত ১৮৫ কর্মীর নমুনা পরীক্ষায় ৮৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়। অর্থাৎ আক্রান্তের শতকরা হার ৪৫ ভাগ। তাছাড়া ওই ৮৫ জনের মধ্যে দ্বিতীয় বারের পরীক্ষায় গতকাল পর্যন্ত ৫৬ জন করোনামুক্ত হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। যে ২৯ জন এখনো নিজ নিজ কক্ষে আইসোলেশনে রয়েছেন তাদের শারীরিক অবস্থাও ভালো বলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে।
ওই সূত্রটি বলছে, আমাদের দেশের নাগরিকরা সাধারণত পুরোপুরি উপসর্গ না আসা পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করাতে আগ্রহী হন না। যে কারনে ওই কেন্দ্রে পাঁচ শতাধিক কর্মী থাকলেও তাদের করোনা নেই বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।
পরীক্ষায় যে কারও শরীরে করোনা ধরা পড়তে পারে উল্লেখ করে খুলনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা, আব্দুল আহাদ বলেন, শরীরের জীবনীশক্তি বেশি থাকলে সাধারণ সর্দি কাশির ন্যায় করোনা হলেও সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এজন্য সামান্য উপসর্গেই বিচলিত না হয়ে শুধুমাত্র সচেতনভাবে চলাফেরা এবং যথা সম্ভব পৃথক স্থানে অবস্থান করা ভালো। পরীক্ষা করালেই সামান্য উপসর্গেও করোনা পজেটিভ হতে পারে বলেও তিনি মনে করেন।
খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা: মো: মেহেদী নেওয়াজের দেয়া তথ্য অনুযায়ী বিগত এক সপ্তাহের মধ্যে খুলনা মেডিকেল কলেজের আরটি পিসিআর ল্যাবে সবচেয়ে বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত ২১ মে অর্থাৎ ৭৩জন। ওই দিন যে পরিমান নমুনা পরীক্ষা করা হয় তার শতকরা হার ছিল মাত্র ১৯.৪১ ভাগ। পক্ষান্তরে বিগত এক সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে কম শনাক্ত হয় ১৮ মে অর্থাৎ ৩১ জন। কিন্তু ওই দিনের নমুনার সংখ্যা অনুযায়ী শনাক্তের শতকরা হার ছিল প্রায় ৩৩ ভাগ। সুতরাং বেশি শনাক্ত মানেই আতংক নয়।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা: রাশেদা সুলতানা বলেন, গতকাল পর্যন্ত বিভাগের ১০ জেলায় সর্বমোট ৩৩ হাজার ৩৭৮ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হলেও ইতোমধ্যেই সুস্থ্য হয়েছেন ৩০ হাজার ৮৫৫জন আর মৃত্যুবরণ করেন ৬২২জন। তার দেয়া তথ্য মতে, বিভাগে বিগত দু’বছরে পরীক্ষা অনুযায়ী আক্রান্তের পর সুস্থ হওয়ার হার ৯২.৪৪ ভাগ আর আক্রান্তদের মধ্য থেকে মৃত্যুহার ১.৮৬ ভাগ।