/ যশোরের ভবদহ অঞ্চলে পানি নিঃস্কাশনের গলার কাঁটা হয়ে দাড়িয়ে একটি অপরিকল্পিত স্লুইচ গেট

যশোরের ভবদহ অঞ্চলে পানি নিঃস্কাশনের গলার কাঁটা হয়ে দাড়িয়ে একটি অপরিকল্পিত স্লুইচ গেট

রিপন হোসেন সাজু, নেহালপুর (যশোর): যশোরের মনিরামপুর ও অভয়নগর উপজেলার ভবদহ অঞ্চলে পানি নিঃস্কাশনের গলার কাঁটা হয়ে দাড়িয়েছে একটি অপরিকল্পিত স্লুইচ গেট। ৪ ভেন্টের ওই স্লুইচ গেটটি দুই উপজেলার বিল কেদারিয়ার মধ্যস্থলে অবস্থিত, যেটি কার্যত অকেজো হয়ে পড়ে আছে। সুতিঘাটা থেকে প্রবাহিত মুক্তেশ্বরী নদী শেষ অংশ, মশিয়াহাটীর সীমানা খাল ও বেদভিটা খালের সংযোগস্থলে টেকা নদীর উপর নির্মাণ করা হয় ওই গেট। পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০০২ সালে টেকা-মুক্তেশ্বরী নদীর অববাহিকায় বিল কেদারিয়ায় টিআরএম (টাইডেল রিভার ম্যানেজমেন্ট) প্রকল্প চালু করে।

ওই সময়ে ২৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৭ বিলের পানি নিঃষ্কাশনের উদ্দেশ্যে ”খুলনা-যশোর পানি নিষ্কাশন প্রকল্প” এর বরাদ্দে ভবদহ গেট থেকে যশোরের সুতিঘাটা-কামালপুর ব্রীজ পর্যন্ত উত্তরে মুক্তেশ্বরী নদীর দুই পাঁড়ে ভেড়িবাঁধ ও প্রতি বিলে বিলে স্লুইচ গেট নির্মাণ করে। বিলে বিলে স্লুইচগেট নির্মাণ করার কথা থাকলেও ৪ ভেন্টের ওই গেটটি করা হয় টেকা নদীর মুখে। যা বর্তমানে পানি প্রবাহে মারাত্মক বাঁধার সৃষ্টি করছে। পরবর্তীতে জলাবদ্ধতা আরও প্রকট আকার ধারণ করলে ২০২৩ সালের ২২ জানুয়ারি থেকে আপদকালীন ব্যবস্থা হিসেবে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রতিটি ৩৫ কিউসেক ক্ষমতা সম্পন্ন ৪টি সেচযন্ত্র বসানো হয়। যা দিয়ে এখনও প্রতিদিন পানি নিঃস্কাশন করা হচ্ছে।

এছাড়াও এই প্রকল্পে ভবদহ ২১ ভেন্ট স্লুইচগেটের ১৪টি সেচযন্ত্রের মাধ্যমে অপর পাশে নদীতে ফেলা হচ্ছে। প্রায় ২০০ মিটার দূরে শ্রী নদীর অপর শাখার উপর ৯ ভেন্ট গেট। স্লুইচগেটের উপর ৫টি বৈদ্যুতিক সেচযন্ত্র বসানো রয়েছে। সেচযন্ত্র দিয়ে নদীর এপাশ থেকে ওপাশে সেচ দিয়ে পানি ফেলা হচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় ভ‚ক্তভোগীদের অভিযোগ, ওই সেচ পাম্প প্রকৃতপক্ষে কোন কাজেই আসছে না। মূল কারণ হিসাবে তারা জানিয়েছেন ২১ ভেন্ট বা ৯ ভেন্টের উত্তরে নদীর প্রশস্ততা ও গভীরতা কমেছে। তার উপর বন্ধ ওই ৪ ভেন্ট স্লুইচগেটে পানি আটকে গিয়ে সেচযন্ত্রের কাছে পানি পৌঁছাচ্ছে না।

এদিকে ২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল ও ১০ নভেম্বর দুই দফা অন্তবর্তী সরকারের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ভবদহ গেট পরিদর্শন করে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিলেও ওই ৪ ভেন্ট স্লুইচগেটটি কার্যকর করা কিংবা অপসারণ করার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। ফলে চলমান সেচ প্রকল্পের একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে ওই গেট। সোমবার ভবদহ এলাকার বিল কেদারিয়া সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন এলাকা ঘুরে স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে তারা জানান, বিলের মধ্যে ওই স্লুইচগেটটি বেকার পড়ে আছে। যার ফলে একটি নদী ও দুইটি খাল দিয়ে উত্তরাঞ্চলের পানি বের হতে পারছে না। তারা দ্রুত ওই গেট অপসারণ করে পানি প্রবাহকে সচল রাখার জোর দাবী জানিয়েছেন।