পাসের হার ৫০.২০ শতাংশ # যশোর জেলায় সর্বোচ্চ ৫৮ দশমিক ২৫ শতাংশ, মাগুরা জেলায় সর্ব নিম্ন ৩৭.৪৬ শতাংশ # খুলনায় ৫৩.৯৮ শতাংশ # শূন্য পাসের কলেজের সংখ্যা ২০টি # যশোর বোর্ডে সাফল্যে এগিয়ে মেয়েরা
স্টাফ রিপোর্টা : যশোর শিক্ষা বোর্ডে ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। সারাদেশের তুলনায় বোর্ডটির পাসের হার সর্বনিম্ন ৫০.২০ শতাংশ।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় যশোর শিক্ষা বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে ফলাফল ঘোষণা করেন বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোসাম্মাৎ আসমা বেগম। বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এ বছর যশোর বোর্ডের অধীনে ১০ জেলার মোট এক লাখ ১২ হাজার ৫৭৪ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।
এর মধ্যে কৃতকার্য হয়েছে ৫৬ হাজার ৫০৯ জন। গত বছর যশোর বোর্ডে গড় পাসের হার ছিল ৬৪.২৮ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৯,৭৪৯ জন। এবার শুন্য পাসের কলেজের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০টি। বোর্ডের আওতাধীন ১০ জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ পাসের হার অর্জন করেছে যশোর জেলা ৫৮ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন পাসের হার মাগুরা জেলায় ৩৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ। যশোর শিক্ষা বোর্ডের প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এবার বোর্ডে মোট ২৪০টি কেন্দ্র ও ৫৭৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১ লাখ ১৬ হাজার ৮০৯ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে পরীক্ষায় উপস্থিত ছিল ১ লাখ ১২ হাজার ৫৭৪ জন। পাস করেছে মোট ৫৬ হাজার ৫০৯ জন শিক্ষার্থী।
বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক আব্দুল মতিন বলেন, “জুলাই আন্দোলনের কারণে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে ঘাটতি ছিল। তবে খাতার যথার্থ মূল্যায়ন হয়েছে। অসুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি, তাই পাসের হার কমেছে।”
চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোসাম্মাৎ আসমা বেগম বলেন, “ফলাফল আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে কম। তবে শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং মেধাবীদের এগিয়ে আনতে আমরা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি।”
জেলা অনুযায়ী ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, খুলনা জেলা দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ৫৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ পাসের হার নিয়ে। এ জেলায় মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২৩ হাজার ৩৩২ জনের মধ্যে ১২ হাজার ১৫৬ জন পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সাতক্ষীরা জেলা, যেখানে পাসের হার ৫২ দশমিক ৬৪ শতাংশ। অন্যদিকে, বাগেরহাট ৪১ দশমিক ৮৫ শতাংশ, ঝিনাইদহ ৪৫ দশমিক ০৭ শতাংশ, নড়াইল ৪৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ, কুষ্টিয়া ৪৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ ও মেহেরপুর ৪৮ দশমিক ৫১ শতাংশ জেলাগুলো গড়ের নিচে অবস্থান করছে। চুয়াডাঙ্গা জেলার পাসের হার ৫০ দশমিক ৩৫ শতাংশ, যা বোর্ডের সামগ্রিক গড়ের সামান্য ওপরে। সবচেয়ে ভালো ফল করেছে যশোর জেলা, যেখানে ১৯ হাজার ৫৬৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১১ হাজার ৬৬ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। এই জেলাতেই পাসের হার সর্বোচ্চ ৫৮ দশমিক ২৫ শতাংশ। অন্যদিকে মাগুরা জেলার চিত্র একেবারেই ভিন্ন। মোট ৬ হাজার ৫১৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ২ হাজার ৩৫২ জন পাস করতে পেরেছে, যা সর্বনিম্ন ৩৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ। বোর্ড সূত্র অনুযায়ী, সামগ্রিকভাবে এ বছরের ফল আগের বছরের তুলনায় কিছুটা নিম্নমুখী। বিশেষ করে বিজ্ঞান ও মানবিক বিভাগে কৃতকার্য শিক্ষার্থীর হার কমেছে। তবে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে তুলনামূলক ভালো ফলাফল দেখা গেছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছেলেদের সংখ্যা ছিল ৫৮ হাজার ১৭৯ জন এবং মেয়েদের সংখ্যা ৫৮ হাজার ৬৩০ জন। পরীক্ষায় অংশ নেয় যথাক্রমে ৫৫ হাজার ৯৭৩ জন ছেলে ও ৫৬ হাজার ৬০১ জন মেয়ে। উত্তীর্ণ হয়েছে ছেলেদের মধ্যে ২৪ হাজার ৯০১ জন এবং মেয়েদের মধ্যে ৩১ হাজার ৬০৮ জন। অর্থাৎ, মেয়েদের সাফল্যের হার তুলনামূলকভাবে বেশি।
এদিকে দৈনিক পূর্বাঞ্চলের যশোর ব্যুরো থেকে প্রদীপ ঘোষ জানান, এইচএসসি পরীক্ষায় যশোর শিক্ষাবোর্ডে ফলাফলে নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রয়েছে। কমেছে পাসের হার ও জিপিএ-৫। ৯টি সাধারণ বোর্ডের মধ্যে গতবারের মতো এবারও এই বোর্ডর অবস্থান অষ্টম। এ বছর (২০২৫) যশোর বোর্ডে পাসের হার ৫০ দশমিক ২০ ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ হাজার ৯৯৫ জন শিক্ষার্থী। গত বছর (২০২৪) যশোর বোর্ডে পাসের হার ছিল ৬৪ দশমিক ২৯ ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৯ হাজার ৭৪৯ জন শিক্ষার্থী। গত বছরের তুলনায় পাসের হার কমেছে ১৪ শতাংশের বেশি ও জিপিএ-৫ কমেছে প্রায় চার হাজার। পাসের হারের দিক থেকে এ বছরের ফলাফল সাধারণ ৯টি শিক্ষাবোর্ডের মধ্যে ৮ম। গতবছরও এই অবস্থানে ছিল যশোর বোর্ড। আর পাসের হার ৪৮ দশমিক ৮৬ ভাগ নিয়ে সর্বনিম্ন অবস্থানে কুমিল্লা বোর্ড। অথচ যশোর বোর্ড ২০২১ সালে বোর্ডসেরা অবস্থানে ছিল।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) প্রকাশিত ফলাফলে যশোর বোর্ডের এই চিত্র উঠে এসেছে। বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে, জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের রাজপথে থাকা ও ইংরেজিতে অনুত্তীর্ণের হার বেড়ে যাওয়ায় বোর্ডের সার্বিক ফলাফলে এর প্রভাব পড়েছে।
যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোসাম্মৎ আসমা বেগম বলেন, বিগত জুলাই আন্দোলনে এই শিক্ষার্থীরা দীর্ঘসময় রাজপথে ছিল। এ কারণে তাদের প্রস্তুতিতে ঘাটতি ছিল। পাশাপাশি এ বছর এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ৪৫ দশমিক ১৮ শতাংশ ইংরেজিতে অনুত্তীর্ণ হয়েছে। এই প্রভাব পড়েছে সার্বিক ফলাফলে। আগামীতে বোর্ডের ফলাফল ভালো করার জন্য পদক্ষেপ নেব। তবে তিনি আরও দাবি করেন, ইতোপূর্বে পাসের হার বেশি দেখানোর জন্য বোর্ডগুলোর মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা ছিল, এখন তা নেই। আগে অতিমূল্যায়ন, অবমূল্যায়ন হতো, এখন তা হচ্ছে না। ফলে এটিই ফলাফলের প্রকৃত চিত্র।
এবারের ফলাফলের চিত্র তুলে ধরে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোসাম্মৎ আসমা বেগম বলেন, চব্বিশের জুলাই আন্দোলনে এই শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ সময় রাজপথে ছিল। আন্দোলন সংগ্রামের কারণে তাদের পড়াশোনা ও প্রস্তুতিতে ঘাটতি ছিল। এছাড়া নকলমুক্ত, সুষ্ঠু পরিবেশে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছে। ভেন্যুপ্রথা বাতিল করা হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা কোনো অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করতে পারেনি। পাশাপাশি এবছর এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ৪৫ দশমিক ১৮ শতাংশ ইংরেজিতে অনুত্তীর্ণ হয়েছে। এইসব কারণে সার্বিক ফলাফলে প্রভাব পড়েছে। তবে আগামীতে বোর্ডের ফলাফল ভালো করার জন্য তারা পদক্ষেপ নেবেন বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পড়াশোনা, শিক্ষকদের শ্রেণিকক্ষে যথাযথ পাঠদান এবং অভিভাবকদের সচেতনতা ও তদারকি জরুরি।
যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মতিন বলেন, অন্যান্য বোর্ডের তুলনায় যশোর বোর্ডের ফলাফল খারাপ হয়েছে। বিশেষ করে ইংরেজিতে দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে ভালো ইংরেজি শিক্ষক দরকার। বিষয়টি প্রতি গুরুত্ব দিয়ে ইংরেজি শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতেও পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।