যুক্তরাজ্য ফেরত যাত্রীদের কোয়ারেন্টাইনের জন্য সিলেট নগরীতে কয়েকটি হোটেল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, শুক্রবার (১ জানুয়ারি) থেকে যুক্তরাজ্য ফেরত যাত্রীদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

সিলেট জেলা প্রশাসক এম. কাজী এমদাদুল ইসলাম জানান, যুক্তরাজ্য থেকে সিলেট আসা যাত্রীদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টানের জন্য নগরীর হোটেল স্টার প্যাসিফিক ও হোটেল হলি গেট চূড়ান্ত করা হয়েছে। আরো কয়েকটি হোটেল শিগগিরই চূড়ান্ত করা হবে। তিনি জানান, সব মিলিয়ে ৬০০ জনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখার মতো ব্যবস্থা করা হবে। যুক্তরাজ্য থেকে আসা প্রবাসীরা এসব হোটেলে নিজ খরচে কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন।

সূত্র মতে গত ২৯ ডিসেম্বর যাত্রীদের কোয়ারেন্টিনে রাখার বিষয়ে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগত যাত্রীদের মধ্যে যারা নিজ ব্যয়ে হোটেলে থাকা অপারগ মনে করেন তাদেরকে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন শাহপরাণ মাজার এলাকায় বিআরডিটিআই ক্যাম্পে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে।

এদিকে লন্ডন থেকে প্রতি সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার সরাসরি বিমানের দুটি ফ্লাইট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসে লন্ডন থেকে। এই হিসাবে আগামী সোমবার যেসব যাত্রী লন্ডন থেকে ওসমানীতে আসবেন, তাদের নির্ধারিত হোটেলে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। নতুন ধরনের করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে যুক্তরাজ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করলেও বাংলাদেশের সঙ্গে তা অব্যাহত রয়েছে। প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটে দুই সপ্তাহে পাঁচ শতাধিক যুক্তরাজ্য প্রবাসী এসেছেন-যাদের সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হচ্ছে।

প্রতি শীত মৌসুমে যুক্তরাজ্য থেকে বিশেষ করে সিলেট প্রবাসীরা দেশে এসে থাকেন সপরিবারে। এবার শীতে যুক্তরাজ্যে নতুন ধরণের করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে অধিক সংখ্যক যাত্রী দেশে ফিরার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় এবং লন্ডন- সিলেট ফা¬ইট চালু থাকায় সিলেট অঞ্চলের মানুষের মধ্যে নতুন ঐ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় লন্ডন-সিলেট ফ্লাইট বন্ধের দাবি উঠে।

উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাজ্য থেকে ফেরা যাত্রীদের নিজ খরচে বাধ্যতামূলকভাবে ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। ওসমানী বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, সপ্তাহের প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানের ফ্লাইট আসে। সর্বশেষ গত ২৪ ডিসেম্বর ২০২ জন, ২৮ ডিসেম্বর ২০২ জন এবং ৩১ ডিসেম্বর ২৩৭ যাত্রী নিয়ে বিমানের ৩টি ফ্লাইট ওসমানীতে আসে। এই তিনদিনে ৬৪১ দেশে এসেছেন। গত ডিসেম্বরে সর্বমোট লন্ডন থেকে আটটি ফ্লাইটে এক হাজার ২২৬ যাত্রী সিলেট এসেছেন। সরকারি এই নির্দেশনা ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে। ১ লা জানুয়ারির আগে যারা এসেছেন তাদের বেলায় হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশনা রয়েছে।

সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার (কোভিড-১৯ ও মিডিয়া সেল) শাম্মা লাবিবা অর্ণব বলেন, নিজ খরচে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশনার পর যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের অনেকেই দেশে আসায় ভাটা পড়েছে। আগামী সোমবারের ফ্লাইটে সিলেটের ৬৯ জন যাত্রী রয়েছেন বলে তারা জানতে পেরেছেন। পরবর্তী ফ্লাইটগুলো যাত্রী আরও কমতে পারে বলেও কর্মকর্তারা ধরানা করছেন।

করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের (স্ট্রেইন) সংক্রমণের কারণে যুক্তরাজ্যের সাথে বিমান যোগাযোগ নিয়ে ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। ঝুঁকি কমাতে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে আসা যাত্রীদের নিজ খরচে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকার বিষয়ে গত ২৮ ডিসেম্বর মন্ত্রীপরিষদের বৈঠকে নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যাত্রী সংখ্যা বাড়লে হোটেলের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে বলে জানান শাম্মা লাবিবা অর্ণব।

সূত্র জানায়, সিলেট বিমানবন্দর থেকে বিটিআরসির বাসে করে যাত্রীদের হোটেল আনা হবে। যাত্রীরা যাতে হোটেলের বাইরে না আসেন এবং হোটেলে যাতে তাদের স্বজনরা প্রবেশ করতে না করেন, এ জন্য হোটেলগুলোর সামনে সার্বক্ষণিক পুলিশ থাকবে।