ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব

স্টাফ রিপোর্টার॥ ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছাসে লন্ডভন্ড হয়েছে উপকূলের বেড়িবাঁধ। খুলনার কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ, তেরখাদা, সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি ও বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে পানি। হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নষ্ট হয়েছে হাজার একর জমির ফসল। ভেসে গেছে কয়েক হাজার একর ঘেরের মাছ। বিদ্ধস্ত হয়েছে শত শত ঘরবাড়ি। গেল বছর আম্ফানের আঘাত সেরে না উঠতেই এ বছরের ইয়াসের আঘাতে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের হানায় দীর্ঘমেয়াদী দুর্ভোগে পড়তে যাচ্ছে উপকূলের মানুষ। এ অবস্থায় টেকসই বাঁধ মেরামতের দাবি জানিয়েছেন তারা।
কয়রাঃ কয়রা প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের জলোচ্ছাসে কয়রার ৬ টি পয়েন্টের পাউবের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। এতে মৎস্য ঘের তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি, ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানিবন্দি অবস্থায় মানুষ সিমাহীন কষ্টের মধ্যে দিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ সাগর হোসেন সৈকত বলেন, কয়রায় ইয়াসের তান্ডবে উপজেলার ৭ টি ইউনিয়নের সব এলাকায় কমবেশি ক্ষতি হয়েছে। অনেক এলাকায় ঘর ভেঙে পড়েছে। অনেক এলাকায় ঘর আংশিক ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের সংখ্যা ৭ হাজার। এর মধ্যে ৫০ টি ঘর সম্পূর্ন, ১২ শ ঘরবাড়ি আংশিক ও ৫৮ শ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সকল এলাকার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দিন যাপন করছে।
উপজেলা মৎস্য অফিসার এস এম আলউদ্দিন আহমেদ বলেন, উপজেলায় ২১ শ মৎস্য ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মৎস্যখাতে প্রায় ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ব্যাপক ফসল নষ্ট হয়েছে। কয়রা সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোহাঃ হুমায়ুন কবির বলেন, ভেঙে যাওয়া বাধেঁর মহারাজপুর ইউনিয়নের মঠবাড়ির পবনা, দশহালিয়া ও উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের গাতিরঘেরি বাঁধ এখনও বাঁধা সম্ভব হয়নি। তবে দক্ষিন বেদকাশি ও মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ কোন রকম আটকানো সম্ভব হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ বিশ্বাস বলেন,বাঁধ বাঁধার কাজ চলছে। ইতিমধ্যে অনেক বাঁধ মেরামত করা সম্ভব হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহযোগিতা করা হবে।
কয়রা-পাইকগাছার সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। বাঁধ মেরামতের ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। পানি বন্দি মানুষের মাঝে ত্রান সামগ্রী বিতরন করা হবে তিনি জানান।
আশাশুনি (সাতক্ষীরা) ঃ আশাশুনি প্রতিনিধি জানান, উপজেলায় ১০টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ও বাঁধ উপচে এ পর্যন্ত ২২টি গ্রাম, দেড় হাজার হেক্টর জমির মৎস্য ঘের, ২ শতাধিক ঘরবাড়ি ও ইটের ভাটা প্লাবিত হয়েছে। এখনো ৯টি পয়েন্টে ভাঙ্গন রক্ষা করা সম্ভব না হওয়ায় নদীর পানির তোপে একের পর এক গ্রাম প্লাবিত হয়ে যাচ্ছে।
প্রতাপনগর ইউনিয়নের শ্রীপুর কুড়িকাহনিয়া লঞ্চঘাটের দক্ষিণ পাশে দু’টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ উপচে ভেতরে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে ৩০০ ফুটমত বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে এলাকা প্লাবিত হয়। এছাড়া হরিষখালী ৩টি পয়েন্টে, প্রতাপনগর সংলগ্ন বন্যতলায় টি পয়েন্টে, নাংলার একটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ওভারফ্লো হয়। নদীর পানি কুড়িকাহুনিয়া, চাকলা, সুভদ্রাকাটি, রুইয়ের বিল, হরিশখালি, সোনাতনকাটি, নাকনা, শ্রীপুর, গোকুলনগর, শির্ষা, একসরা গ্রাম জলমগ্ন হয়।
এদিকে বড়দল ইউনিয়নের বামনডাঙ্গায় গেট সংলগ্ন উত্তর দিকে ৩টি পয়েন্টে ও দক্ষিণ দিকে টি পয়েন্টে বাধভেঙ্গে বামনডাঙ্গা, তুয়ারডাঙ্গা, জামালনগর, ডুমুরপোতা, ফকরাবাদ, কেয়ারগাতি, মাদিয়া, মুরারীকাটি, কদমতলা, জেলপাতুয়া গ্রাম ও বিল প্লাবিত হয়েছে। সেখানে বাঁধ রক্ষার জন্য উপজেলা আ’লীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিমের নির্দেশনায় ও আর্থিক সহায়তায় আ’লীগ নেতা ও বড়দল ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী জগদীশ চন্দ্র সানার নেতৃত্বে কাজ করা হচ্ছে। বেকু মেশিনের সাহায্যে মাটি সংগ্রহ করে বস্তা ভর্তি ও বাঁশ গিয়ে পাইলিং এর কাজ করা চলছে। শুক্রবার মূল বাধে কাজ করা হবে বলে তিনি জানান। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল হুসেইন খাঁন, পিআইও সোহাগ খান ভাঙ্গন স্থান পরিদর্শন করে কাজের অগ্রগতি দেখেন ও দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
অপরদিকে কাদাকাটি ইউনিয়নের তেতুলিয়া আদর্শ গ্রামের বাঁধ ভেঙ্গে গ্রামের মধ্যে পানি প্রবেশ করায় পুরো গ্রামের সকল ঘরবাড়ি জানালা পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে গেছে। আদর্শ গ্রামের এক শত ৪০টি পরিবার প্লাবিত হয়ে আশ্রয় হারা হয়ে পড়েছে। আদর্শ গ্রাম সংলগ্ন আরও ৩০টি পরিবারের ঘরবাড়ি একই সাথে প্লাবিত হয়ে গেছে। ইউপি চেয়ারম্যান দীপঙ্কর কুমার দিপ একটি রিং বাধ দিয়ে ৩০টি পরিবারকে রক্ষার ব্যবস্থা করতে সক্ষম হয়েছে। বাকী পরিবারগুলো চরম বিপাকে রয়েছে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহীন সুলতানা আদর্শ গ্রাম পরিদর্শন করে কিভাবে তাদেরকে রক্ষা করা যায় সে ব্যাপারে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বস্থ করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল হুসেইন খাঁন ও পিআইও সোহাগ খান জানান, প্রত্যেক ইউনিয়নে ২ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা করে বরাদ্দ এসেছে, এছাড়া ২০ মেঃ চাউল, এক লক্ষ টাকার শিশু খাদ্য ও এক লক্ষ টাকার গো-খাদ্য বরাদ্দ হয়েছে।
সাতক্ষীরাঃ সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে গোটা সাতক্ষীরা। উপকুলীয় উপজেলা শ্যামনগর, আশাশুনি, কালিগঞ্জ ও দেবহাটার কমপক্ষে ২২টি স্থানে উপকূল রক্ষা বাঁধ ভেঙে এবং ৩৪ টি স্থানে উপচে পড়া পানিতে চারটি উপজেলার ২৪টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দী হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। ভেসে গেছে ৬ হাজার ৭০০ হেক্টর জমির ৭ হাজার ৫৬০ টি মৎস্য ঘের। এতে প্রায় ৫৫ কোটি টাকার মাছের ক্ষতি হয়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে কয়েক হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি। সুন্দরবনে নোনা পানিতে মিষ্টি পানির পুকুর তলিয়ে একাকার হয়ে গেছে। এতে দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির অভাব।
জানা যায়, গত বুধবার ভরা পূর্ণিমায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে নদ-নদীগুলোতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পায়। স্বাভাবিকের চেয়ে ৬ থেকে ৭ ফুট বেশি উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হয়। সাতক্ষীরার উপকুলীয় এলাকায় কমপক্ষে ৪০ টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। পানির অস্বাভাবিক তোড়ে কপোতাক্ষ, খোলপেটুয়া ও ইছামতি নদীর কমপক্ষে ২২ টি পয়েন্টের বেড়িবাঁধ ভেঙে যায় এবং ৩৪ টি স্থানে উপচে পড়া পানিতে চারটি উপজেলার ২৪টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ইতিমধ্যে বেশকিছু স্থানে বেঁড়িবাঁধ সংস্কার করতে সমর্থ হন। এদিকে ত্রাণ তৎপরতা চালানোর কথা বলেছেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তবে অনেক জায়গায় ক্ষতিগ্রস্তরা ত্রাণ পাননি বলে অভিযোগ করেন।
আশাশুনি উপজেলার সুভদ্রাকাটি গ্রামের সিরাজুল ইসলাম জানান, তার বাড়ি ডুবে গেছে। রান্নার কোন ব্যবস্থা নেই। বাইরে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জায়গা নেই। আশ্রয়কেন্দ্রও নেই। আমপানেও কোন ত্রাণ পাইনি। এবার এখনো একমুটো চিড়া-মুড়িও পাইনি।
শ্যমনগরের চাঁদনিমুখা গ্রামের ইবাদত হোসেন জানান, ক্লোজার বাঁধ ভেঙে আমার ৫০ বিঘা জমির তার ঘের ভেসে গেছে। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে তার ক্ষতি হয়েছিল ২০ লাখ। এবার হলো আরো ২০ লাখ। অথচ প্রমত্তা ও ভয়ঙ্কর খোলপেটুয়া নদীর এই পয়েন্টের ভঙুর বাঁধের বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসওকে বলেছিলাম। তারা কোন কথা শোনেননি।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের জানান, গত বুধবার সকাল থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে বেড়িবাঁধ সংস্কার কাজ চলছিল। তবে পরবর্তী জোয়ারে কয়েকটি স্থানে আবারো তা ধ্বসে পড়ে। বেড়িবাঁধ সংস্কারে ৬০ হাজার সিনথ্যাটিক ও ১০ হাজার জিও ব্যাগ সরবরাহ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় বাঁধ উপচে ও বাঁধ ভেঙে ভসে গেছে ৬ হাজার ৭০০ হেক্টর জমির ৭ হাজার ৫৬০ টি মৎস্য ঘের। এতে প্রায় ৫৫ কোটি টাকার মাছের ক্ষতি হয়েছে। তিনি আরো জানান, আম্পানের চেয়েও ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছে। বর্তমানে ঘেরের মাছগুলো সব বিক্রির উপযোগী হয়েছিল। যে কারণে চাষিদের ক্ষতি বেশি হয়েছে।
সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানান, প্রাথমিক ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে আরও একটু সময় লাগবে। তবে এপর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে ধারণা করা হচ্ছে ১০ হাজারেরও বেশি ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। ত্রাণ তৎপরতার বিষয়ে জেলা প্রশাসক আরো জানান, শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে আড়াইলাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আশাশুনি ও শ্যামনগরে ৫০ মে.টন. করে এবং তালা ও কালিগঞ্জে ৫ টন করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ আরও বাড়বে বলে জানান তিনি।
দাকোপঃ দাকোপ প্রতিনিধি জানায়, উপজেলার পৃথক ৪টি স্থানের বাঁধ ভেঙে ফের প্লাবিত হয়েছে তিলডাঙ্গা ইউনিয়ন। ১৬টি গ্রামের ভিতরে নদীর পানি প্রবেশ করায় তারা পানিবন্ধি হয়ে পড়েছেন। সংশ্লিষ্ট বিভাগ পাউবোর উদাসীনতায় উপজেলা প্রশাসন বাঁধ রক্ষায় হিমশিম খাচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাঁধ সংস্কারে জন্য প্রাথমিক ভাবে ৫ লাখ টাকার বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে শুকনো খাবার ও ত্রানের চাল বিতরন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরের জোয়ারে উপজেলার তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের ঝালবুনিয়া পুলিশ ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় পৃথক ৪ টি স্থানে আনুমানিক ১৫০ মিটার বাঁধ ভেঙে ফের পানি প্রবেশ করে অন্ততঃ ১৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে অসংখ্য মৎস্য চিংড়ি ঘের ও শতাধিক পুকুরের মাছ। অপরদিকে প্রশাসনের তথ্য মতে উপজেলার সুতারখালী, তিলডাঙ্গা, বানীশান্তা, পানখালীসহ অন্যান্য ইউনিয়ন ও চালনা পৌরসভা এলাকায় বাঁধের বাইরে বসবাসকারী ৩ হাজার পরিবার ও ৫শতাধিক ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান জ¦লোচ্ছাসে প্লাবিত হয়েছে। গ্রাম গুলি প্লাবিত হওয়ার কারণে প্রায় ১ হাজার ৫শত ঘরবাড়ী ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এ ছাড়া বেড়িবাঁধের অনেক স্থান দিয়ে বাঁদ উপচে নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দাকোপ উপজেলা চেয়ারম্যান মুনসুর আলী খান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিন্টু বিশ^াস, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শেখ আব্দুল কাদের বানীশান্তা, লাউডোব, বাজুয়া, কৈলাশগঞ্জ ও দাকোপ ইউনিয়নে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা বানীশান্তা যৌন পল্লীর অধিবাসীসহ ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরন করেন। এ ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে জ¦লোচ্ছাসে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ত্রানের চাল বিতরন করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিন্টু বিশ্বাস বলেন, যে সকল পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের তালিকা তৈরীর জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উপকূলীয় বাসীদের রক্ষার্থে ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ গুলি তাৎক্ষনিক সংস্কারের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কাজ চলমান রয়েছে।
তেরখাদাঃ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, গতকাল তেরখাদা উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত চিত্রা নদীর মসুনদিয়া নামক স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে জোয়ারের পানিতে কয়েকটি বিল প্লাবিত হয়েছে। বিলগুলোতে লবন পানি প্রবেশ করায় বোনা আমন ও বোনা আউশ ধানের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এবারে তেরখাদা উপজেলায় বোনা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর এবং বোনা আউশের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২হাজার ৫শত হেক্টর জমিতে। ইতোমধ্যে দেড় হাজার হেক্টর আমন এবং ১হাজার ২শত হেক্টর জমিতে আউশ ধান বোনা হয়েছে। এসব জমিতে লবন পানি প্রবেশ করায় বোনা আমন এবং বোনা আউশ ধানের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ভুতিয়ার বিলসহ কয়েকটি বিলে এবার ৮হাজার ১শত ২৫ হেক্টর জমিতে ইরি/বোরো ধান চাষ হয়। ফলনও ছিল ভাল। ইরি/বোরো ধান উঠার পর চাষীরা আমন ও আউশ ধান বোনা শুরু করেন। হটাৎ করে চিত্রা নদীর বাধ ভেঙ্গে বিভিন্ন বিল সংলগ্ন ৮/১০টি খাল দিয়ে লবন পানি প্রবেশ করে বিলে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।
এ ব্যাপারে খুলনা-০৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মূর্শেদী জানান, বাঁধ নির্মাণে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুল আলম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবিদা সুলতানাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে কথা বলেছেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, তিনি সকালেই ভাঙ্গন কবলিত স্থানে যান। এটি সমাধানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলবেন বলে জানান।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবিদা সুলতানা জানান, বাঁধ ভাঙ্গার খবর শুনে তিনি দ্রুত মসুন্দিয়া এলাকায় ছুটে যান। ভাঙ্গন কবলিত স্থান পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, এটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন। তিনি সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এর সাথে কথা বলেছেন।
রামপালঃ রামপাল সংবাদদাতা জানান, রামপাল উপজেলায় প্রায় ১২শ’ চিংড়ি ঘের তলিয়ে যাওয়ায় ২ কোটি ২৩ লাখ টাকার চিংড়ি ভেসে গেছে। অনেক এলাকার রাস্তা- ঘাট, বাড়ি ঘর, ক্ষেত খামার এখনও পানির নীচে তলিয়ে থাকায় সাধারন মানুষের চলাচলে মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে।
উপজেলা মৎস্য অফিসের একটি সুত্র জানায়, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ১ হাজার ১৮৮ টি চিংড়ি ঘের তলিয়ে যাওয়ায় ২ কোটি ২৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুল্লাহ বলেন ক্ষতিগ্রস্ত ঘের মালিকদের তালিকার কাজ চলছ্।ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে উপজেলার গৌরম্ভা ইউনিয়নে। এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গাজী গিয়াস উদ্দীন জানান, পশুর নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ছোট বড় সব চিংড়ি ঘের তলিয় গেছে। শ্রীরম্ভা, ছায়রাবাদ, কাপাসডাঙ্গা, বর্ণি, কৈগর্দাসকাঠি সহ বিভিন্ন এলাকা এখনও পানির নীচে তলিয়ে আছে। গৌরম্ভা-ভান্ডার কোট রাস্তার দিলখোলা স্কুলের কাছে তিন জায়গায় ভেঙ্গে যাওয়ায় লোকজনের চলাচল ব্যহত হচ্ছে।
রাজ নগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরদার আ. হান্নান ডাবলু জানান, বাংলাদেশ-ভারত বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাছে গোনাবেলাই এলাকায় তক্তামারি ও বড়দর্গাপুর এলাকায় পুটিমারী নামক দুটি বড় চিংড়ি ঘেরের বেড়ি বাধ ভেঙ্গে যাওয়ায় গ্রাম ঘাট প্লাবিত হয়েছে। এরফলে অন্তত ২ হাজারের মতো মানুষ পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে।
ভোজপাতিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. নুরুল আমিন জানান জোয়ারের পানিতে ছোট বড় ৪ শতাধিক চিংড়ি ঘের তলিয়ে গেছে। জিয়লমারী ও কালিকাবাড়ি এলাকায় পানির তোড়ে ইটের সোলিং খুলে যাওয়ায় লোকজনের চলাচল ব্যহত হচ্ছে। তা ছাড়া কয়েকটি এলাকা পানিতে তলিয়ে থাকায় মানুষ পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে।
বাশতলী ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলী বলেন ইউনিয়নের অনেক এলাকা এখনও পানিতে তলিয়ে আছে। লোকজন চলাচলে দুর্ভোগে পড়েছে। রাস্তার উপর দিয়ে পানি স্রোত বয়ে যাওয়ায় অনেক রাস্তার ক্ষতি হয়েছে। হুড়কা ইউনিয়নের বগুড়া নদীর তীরের রাস্তা ভেঙ্গে গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বুধবার জেলা প্রশাসক আজিজুর রহমান ওই এলাকা পরিদর্শন করে জরুরি ভিত্তিতে রাস্তা মেরামতের নির্দেশ দেন। এ সময় তিনি অর্ধ শতাধিক পরিবারের মধ্যে ত্রান বিতরন করেন। এ ছাড়া পেড়িখালি, রামপাল সদর, বাইনতলা, মল্লিকেরবেড় ইউনিয়নে ছোট বড় চিংড়ি ঘের, রাস্তা ঘাট ক্ষেত খামার তলিয়ে গেছে।