সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট খুলনা’র সভাপতি হুমায়ুন কবির ববি
# গৌরবের পদ্মা সেতু, আর বাকী ১৮ দিন

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ বিদেশী প্রভুদের কাছে অনেকেই মাথানত করেন। এ নজির আমাদের দেশে রয়েছে বহু। বিশেষ করে দাতা সংস্থার সাথে চ্যালেঞ্জ করে কোন প্রকল্প বাস্তবায়নের নজিরও অতীতে চোখে পড়েনি। কিন্তু বিশ^ব্যাংকের সাথে চ্যালেঞ্জ করে পদ্মা সেতুর মত একটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন কেবল বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার দ্বারাই যে সম্ভব এটি তিনি প্রমাণ করেছেন। আগামী ২৫ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হচ্ছে পদ্মা সেতু থেকে যান চলাচল। যেটি দেশের ইতিহাসের একটি স্মরনীয় দিন হয়েই থাকবে। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসীম সাহস দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল তথা খুলনাঞ্চলের উন্নয়নকে আরও একধাপ এগিয়ে নেবে।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, খুলনার সভাপতি হুমায়ুন কবির ববি দৈনিক পূর্বাঞ্চলকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেছেন। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর চাহিদা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের অনেক আগের। এমনকি রূপসা সেতুরও আগে থেকে চাহিদা ছিল পদ্মা সেতুর। আর পদ্মা সেতুর মতো এতো বিশাল কর্মযজ্ঞ নিজস্ব অর্থায়নে করা সম্ভব হবে এটি ছিল স্বপ্নেরও অতীত। এটি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্তের কারণেই সম্ভব হয়েছে। যেখানে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রূপসা সেতু করতেই জাপানী অর্থ সাহায্য নিতে হয়েছে সেখানে নিজস্ব অর্থায়নেই ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে করা হয় পদ্মা সেতু। এটি বিশাল সাহসের ব্যাপার।
যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের মধ্যদিয়ে যেমন উত্তরাঞ্চলে অর্থনৈতিক গতি লাভ করে তেমনি পদ্মা সেতুর মধ্যদিয়েও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ হবে বলেও উল্লেখ করেন এই সাংস্কৃতিক নেতা। এর ফলে দেশের ডিডিপি যেমন বাড়বে তেমনি এ অঞ্চলের অর্থনীতিতেও আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। সেই সাথে মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দর এবং বেনাপোল, ভোমরা স্থল বন্দরেও গতি ফিরে আসবে।
পদ্মা সেতুর পাশাপাশি এর সাথে রেল সেতু এবং খুলনা-মংলা রেল লাইনের মাধ্যমেও দেশী-বিদেশী যোগাযোগ এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে উঠবে উল্লেখ করে হুমায়ুন কবির ববি বলেন, ভারত, নেপাল এমনকি চীনের সাথেও বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। যেটি বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে রাখবে বিরাট ভূমিকা।
তবে এ ক্ষেত্রে খুলনার ঐতিহ্য শিল্প কল কারখানা তৈরি হলে এবং বন্ধ শিল্পগুলো আবারও চালু হলে বন্দরকে ঘিরে শিল্পপণ্য রপ্তানীও বাড়বে বলে মনে করেন তিনি। এটিও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখবে।
এছাড়া পদ্মাসেতু রেল লাইন চালু হলেও এ অঞ্চলের মানুষ যাতায়াতের ক্ষেত্রে আরও একধাপ সুফল ভোগ করবে। যদিও আপাতত: যশোর হয়ে খুলনার মানুষকে ঢাকায় যেতে হবে। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে এর সর্বশেষ ষ্টেশন খুলনায়ই হবে এমনটিও আশা করছেন তিনি।
পদ্মা সেতু এ অঞ্চলের মানুষের প্রত্যাশা পূরণে বিরাট ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করে হুমায়ুন কবির ববি বলেন, মংলা ইপিজেডসহ এ অঞ্চলে যেসব অর্থনৈতিক জোন ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন হলেও পদ্মাসেতু আরও অর্থনৈতিকভাবে ভূমিকা রাখতে পারবে। এছাড়া এ অঞ্চলের সামুদ্রিক মাছ, কাঁচামাল, শাক সবজি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অল্প সময়ের মধ্যে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে। পাটসহ অন্যান্য কৃষি পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রেও রাখবে ভূমিকা। এক কথায় খুলনা তার অতীত ঐতিহ্য ফিরে পাবে। ঘটবে শিল্প বিপ্লব।
পদ্মাসেতু চালু হলেও এর পাশাপাশি রামপালের নির্মানাধীন বিমান বন্দরের চাহিদাও বেড়ে যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর ফলে দেশে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের যেমন আনাগোনা বাড়বে তেমনি পর্যটনেরও অপার সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচন হবে। এ অঞ্চলে যেমন সুন্দরবন রয়েছে তেমনি রয়েছে খানজাহান(রহ:) এর স্মৃতি বিজড়িত অনেক ধর্মীয় স্থাপনাও। এর বাইরেও অনেক প্রত্মতাত্মিক নিদর্শন রয়েছে খুলনাঞ্চলে। সুতরাং দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আনাগোনাও বেড়ে যাবে। যেটিও অর্থনীতিতে বিশাল ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন।
পদ্মা সেতুকে ঘিরে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা যে নেই সেটি আবারও এর মধ্যদিয়ে প্রমাণিত হয়েছে। সরকারের ইতিবাচক দিকগুলোর চেয়ে নেতিবাচক দিকগুলো নিয়ে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলো বিদেশীদের কাছে তুলে ধরে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চায়। এর পরও একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয় ছিল পদ্মা সেতু। রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয় এবং যার পরিসমাপ্তি ইতোমধ্যে হয়েছে। বলা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একক সিদ্ধান্তেই এ সেতু হয়েছে। যদি এটিকে শেখ হাসিনার জেদও বলা হয় তাহলেও বলা যাবে যে, ওই জেদই ছিল আমাদের জন্য আশির্বাদ। এর মধ্যদিয়ে বিদেশীদের কাছে যেমন গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে তেমনি আমাদেরও বেড়েছে আত্মবিশ^াস।
পদ্মা সেতুকে ঘিরে আরও কিছু পরিকল্পনা গ্রহণের প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, ভাটিয়াপাড়া থেকে কালনা, নড়াইল ও ফুলতলা হয়ে খুলনা পর্যন্ত সংযোগ সড়ক হলে ঢাকা-খুলনার সড়ক পথের ২৬ কিলোমিটার পথ কমবে। এর ফলে খুলনা-সাতক্ষীরার মানুষের ঢাকায় যাতায়াত আরও সহজ হবে। সেই সাথে গোপালগঞ্জ হয়ে ঢাকায় যাতায়াতের পথের ওপর চাপও কমবে। এ ব্যাপারে সড়ক বিভাগ পদক্ষেপ নিতে পারে বলেও তিনি মতামত দেন।
তাছাড়া পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে সরকারের উন্নয়ন ফান্ডের বিশাল একটি অংশ ব্যয় হওয়ায় এখন উন্নয়ন ফান্ডের অর্থ অন্যান্য সড়ক প্রসস্তকরণ ও নতুন নতুন সড়ক নির্মাণে ব্যয় করা যাবে। অর্থাৎ এখন দেশের সার্বিক উন্নয়নকে আরও ত্বরান্বিত করার সুযোগ সৃষ্টি হলো। তবে পরিবেশকে সমুন্বত রেখেই তিনি সব উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের দাবি জানান।