কেসিসি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক

* গৌরবের পদ্মা সেতু, আর বাকী ১ দিন

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ রাত পোহালেই পদ্মা সেতুর উদ্বোধন। সর্বনাশা পদ্মা পাড়ি দেয়ার সেই দু:সহ যন্ত্রণা থেকে জাতি মুক্তি পাবে। ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা নয়, জীবনের ঝুঁকি নিয়েও নয়, সাড়ে ছয় কিলোমিটারের পদ্মা নদীর ওপর দিয়ে যানবাহন পার হবে মাত্র পাঁচ মিনিটে। যেটি ছিল এতোদিন কল্পনায়, কাল সেটি পরিণত হবে বাস্তবে।
শিল্প ও বন্দর নগরী খ্যাত খুলনার পাশাপাশি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একুশ জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থায় আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এমন মাহেন্দ্রক্ষণকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত খুলনাবাসী, খুলনার আপামর মানুষ, সেই সাথে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সকলে। বিভাগীয় শহর খুলনার ‘নগর পিতা’ খ্যাত খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ¦ তালুকদার আব্দুল খালেক এটিকে কিভাবে দেখছেন জানতে চাইলে তিনি বললেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী বলেই পদ্মা সেতু আজ বাস্তব। আর এ বিশ^াসও তার আছে যে, রামপালের খানজাহান আলী(রহ:) বিমান বন্দরের কাজও এখন দ্রুত এগিয়ে নেয়া হবে। সেই সাথে এ বছরের শেষে মহান বিজয় দিবসেই রামপালের তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
দৈনিক পূর্বাঞ্চলকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে সিটি মেয়র প্রথমেই এই মাহেন্দ্রক্ষণকে সামনে রেখে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু এই দেশ উপহার দিয়েছেন এবং দেশ স্বাধীন না হলে পদ্মা সেতুসহ কিছুই হতো না। একইসাথে তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বলেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী না থাকলে পদ্মা সেতু কারও পক্ষে করা সম্ভব ছিল না। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, ৯৬ পরবর্তী আমলে রূপসা সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর পরবর্তী সরকার চলমান কাজের অংশ হিসেবে বাকী কাজ সম্পন্ন করে। এছাড়া ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে ২০০১ সালের ৪ জুলাই মাওয়া পয়েন্টে পদ্ম সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনও করেছিলেন প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু ২০০১ সালের পর আ’লীগ ক্ষমতায় আসতে না পারায় তৎকালীন সরকার পদ্মা সেতুতে অনীহা প্রকাশ করে। পদ্মা সেতু যাতে মাওয়ায় না হয় সেজন্য স্থান পরিবর্তনের চেষ্টা করে তৎকালীন সরকার। এজন্য খুলনা ও বরিশাল বিভাগের সবাই এর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। এক পর্যায়ে জাজিরা ও মাওয়া পয়েন্টে অবস্থান করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। ছিলেন এ অঞ্চলের জনপ্রতিনিধিরাও। অর্থাৎ এ অঞ্চলের মানুষের আন্দোলনের ফলে তৎকালীন সময়ে আবারো সরকার সিদ্ধান্ত নেয় মাওয়ায় পদ্মা সেতু করার। কিন্তু কার্যক্রম শুরু করেনি।
২০০৯ সালে শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বারের মত প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর দাতাদের সাথে যোগাযোগ করেন। বিশ^ব্যাংক প্রতিশ্রুতিও দেয়। তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন কার্যক্রমও শুরু করেন। এক পর্যায়ে বিশ^ ব্যাংকসহ যারা আশ^স্ত করেছিল তারা কথিত দুর্নীতির অভিযোগ এনে পিছিয়ে যায়। যেখানে সেতুর কাজ শুরুই হয়নি সেখানে হাস্যকরভাবে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়। অর্থাৎ দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের কারণেই পদ্মা সেতু তখন বাঁধাগ্রস্ত হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সিটি মেয়র বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সাহসী পদক্ষেপ, দৃঢ়চেতা মনোভাব, সততা, নিষ্ঠা ও বলিষ্ঠতা ছিল বলেই ২০১২ সালে জাতীয় সংসদে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু হবে বলে ঘোষণা দেন। আর প্রধানমন্ত্রীর সেই ঘোষণার পর সবাই একটু অবাকই হয়েছিল। এমনকি দেশী-বিদেশী অনেক অর্থনীতিবিদও এর ওপর আস্থা রাখতে পারেননি। কিন্তু শেখ হাসিনার দৃঢ় বলিষ্টতার কারনেই ২০১৫ সালে নতুন করে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয় এই পদ্মা সেতুর। যার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আগামীকাল শনিবার।
পদ্মা সেতুর মধ্যদিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একুশ জেলার তিন কোটি মানুষের স্বপ্নের বাস্তবায়ন এবং দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হচ্ছে উল্লেখ করে তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, এ সেতু যে এ অঞ্চলের মানুষের জন্য কতটা প্রয়োজন সেটি আমরা অনুভব করতে পারছি না। এ সেতুর ফলে দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে। দেশের চেয়ে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে এ অঞ্চলের মানুষ। সেই সাথে শিল্প নগরী ফিরে পাবে তার অতীত গৌরব। নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের। পরিবহন ব্যবস্থায়ও আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। সড়ক পথে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর, নড়াইলসহ, বরিশাল-পিরোজপুর থেকেও সহজেই ঢাকায় যাওয়া যাবে।
দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলা নামেমাত্র দ্বিতীয় বন্দর ছিল উল্লেখ করে খুলনা সিটি মেয়র বলেন, আওয়ামীলীগ ছাড়া অন্য সরকারগুলো বন্দরের কোন উন্নয়ন করেনি, করেনি ক্যাপিটাল ড্রেজিংও। যাতে জাহাজ না আসতে পারে সেজন্য করা হয় নানা ষড়যন্ত্র। কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এসে মোংলা বন্দরের যেমন উন্নয়ন করেছে তেমনি পায়রায়ও সমুদ্র বন্দর করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর ফলে এসব বন্দর আরও চাঙ্গা হবে বলেও জানান তিনি। মোংলা ইপিজেড ও অর্থনৈতিক অঞ্চলও ফিরে পাবে যৌবন। নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার মধ্যদিয়ে সৃষ্টি হবে বিপুল কর্মসংস্থানের।
পদ্মা সেতুর পাশাপাশি এ অঞ্চলের উন্নয়ন নিয়ে হাতে নেয়া হয়েছে মহাপরিকল্পনা এমনটি উল্লেখ করে সিটি মেয়র বলেন, আগামী বছর থেকেই খুলনা-মোংলা রেল লাইন চালু হবে। এছাড়া ভাঙ্গা থেকে মোংলা পর্যন্ত সড়কের উন্নয়ন, ভৈরব সেতুসহ দিঘলিয়া, তেরখাদা হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত বিকল্প সড়ক নির্মাণসহ নানা উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
উন্নয়ন নিয়ে অনেকেই বক্তব্য দিতে পারেন, কিন্তু শেখ হাসিনা ছাড়া যে উন্নয়ন সম্ভব নয় সেটি প্রমাণিত এমনটি উল্লেখ করে খুলনা সিটি মেয়র বলেন, খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের নির্মাণ কাজ কারা বন্ধ করে রেখেছিল, কারা স্পেন সরকারের দেয়া যন্ত্রপাতি নিয়ে অন্য হাসপাতালে দিয়েছিল সে ইতিহাস খুলনার মানুষের জানা। আজ খুলনায় কৃষি বিশ^বিদ্যালয়, শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়, ডেন্টাল কলেজ, ক্যান্সার হাসপাতাল, বিভাগীয় সরকারি শিশু হাসপাতাল সবকিছুই শেখ হাসিনার অবদান বলেও উল্লেখ করেন সিটি মেয়র।
পদ্মা সেতু নিয়ে যখন ষড়যন্ত্র হয়েছিল, মাওয়ার পরিবর্তে দৌলতদিয়ায় নেয়ার চক্রান্ত হচ্ছিল তখন বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির নেতৃত্বে সকল শ্রেণির মানুষ বিশেষ করে সাংবাদিকরা প্রতিবাদ জানিয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, যার ফলে আজ পদ্মা সেতু চূড়ান্ত রূপ পেলো। আর এটি শুধুমাত্র শেখ হাসিনার কারণেই সম্ভব হয়েছে বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা যখনই ক্ষমতায় আসেন তখনই অবহেলিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে শক্তিশালী অঞ্চলে পরিণত করা হয়। পদ্মা সেতুর মধ্যদিয়ে তিনি আবারো সেটি প্রমাণ করেছেন।
পদ্মা সেতুর মধ্যদিয়ে দেশের অর্থনীতি মজবুত করা হয়েছে এবং এ অঞ্চলের অর্থনীতিকে মূল শ্রোতধারার সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এজন্য এ অঞ্চলের আপামর মানুষের পক্ষ থেকে তিনি প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।