শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলায় সুদের টাকা পরিশোধ না করায় এক ব্যবসায়ীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্যাতনের একটি ভিডিও আজ সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর নাম নূর আমিন (৩৮)। তিনি উপজেলার খড়িয়া কাজিরচর ইউনিয়নের ভাটিলংগরপাড়া গ্রামের নূর ইসলামের ছেলে।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিন বছর আগে ভাটিলংগরপাড়া গ্রামের আবদুল জলিল নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে মাসিক ১০ শতাংশ হারে সুদে এক লাখ টাকা ঋণ নেন ব্যবসায়ী নূর আমিন। কিছুদিন সুদের টাকা পরিশোধ করলেও পরে অনিয়ম শুরু হয়। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। জলিল পরে আদালতে একটি মামলাও করেন। একপর্যায়ে সুদের টাকা না পেয়ে জলিল ওই ব্যবসায়ীর মোটরসাইকেল জব্দ করে নিজ বাড়িতে রেখে দেন, যা প্রায় এক বছর ধরে সেখানে আছে।
এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দিলেও কোনো প্রতিকার পাননি বলে দাবি নূর আমিনের। পরে গতকাল রোববার শ্রীবরদী বাজার থেকে নূর আমিনকে তুলে এনে তাঁকে জলিলের বাড়ির আঙিনায় একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়।ভিডিওতে দেখা যায়, নূর আমিনকে গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখে আশপাশের কয়েকজন ব্যক্তি তাঁকে ঘিরে আছেন। এ সময় তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করা হচ্ছিল।
নূর আমিন বলেন, ‘আমি এক বছর সুদে টাকা দিয়েছি। কিন্তু কয়েক কিস্তি দিতে না পারায় জলিল রাস্তা থেকে জোরপূর্বক আমার একটি মোটরসাইকেল নিয়ে গেছে। এখন আবার জলিলকে টাকা দিতে হবে। এই অজুহাতে গতকাল জোর করে তুলে নিয়ে গাছে বেঁধে গরুচোর বলেছে। আমাকে নির্যাতন করা হয়েছে। আমি এ ব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ নেব। আমি এর সঠিক বিচার চাই।’
তিনি আরেও বলেন, ‘চাপের কারণে আমি আবার টাকা দিতে রাজি হয়েছি। এক লাখ টাকার বিপরীতে আমার ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা মূল্যের মোটরসাইকেল নিয়ে গেছে। সঠিক বিচার হলে আমি উল্টা টাকা পাব।’
গতকাল খড়িয়া কাজিরচর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আশরাফুল কবীর ঘটনাস্থলে যান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নূর আমিন ও আবদুল জলিল একই গ্রামের বাসিন্দা। গতকাল টাকার জন্য নূর আমিনকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছিল। পরে দুই পক্ষকে বসিয়ে অক্টোবরের মধ্যে টাকা পরিশোধের শর্তে আপস–মীমাংসা করে দেওয়া হয়েছে।
অভিযুক্ত আবদুল জলিলের মুঠোফোন নম্বরে কল করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে স্থানীয় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমি অনেক দিন ধরেই তাঁর কাছে টাকা পাই। তাই ধরে এনেছি। তবে কোনো মারধর করিনি। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে টাকা দেওয়ার শর্তে নূর আমিনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’
খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল জানিয়ে শ্রীবরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার জাহিদ আজ দুপুরে বলেন, ‘পুলিশ পৌঁছানোর আগেই স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে বলে শুনেছি। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’