/ ষাটগম্বুজ মসজিদসহ ৬টি ঐতিহাসিক স্থাপনা চরম আবহাওয়াজনিত ঝুঁকিতে

ষাটগম্বুজ মসজিদসহ ৬টি ঐতিহাসিক স্থাপনা চরম আবহাওয়াজনিত ঝুঁকিতে

ঐতিহাসিক বাগেরহাট মসজিদ নগরীর জলবায়ু ঝুঁকি মূল্যায়ন কর্মশালার ফলাফল উপস্থাপন

বিশ্বব্যাপী সহযোগিতামূলক Preserving Legacies প্রকল্পের অংশ হিসেবে ঐতিহাসিক বাগেরহাট মসজিদ নগরীতে তিন দিনব্যাপী জলবায়ু ঝুঁকি মূল্যায়ন কর্মশালা গতকাল ১৭ মে ২০২৫ খুলনায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইউনেস্কো স্বীকৃত এই মসজিদ নগরী বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ইতিহাসের এক অমূল্য নিদর্শন। এই কর্মশালাটি ছিল দেশের প্রথম কমিউনিটি-ভিত্তিক উদ্যোগ, যার মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কতটা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে তা মূল্যায়ন করা হয়।
কর্মশালার সমাপ্তি দিনে অনুষ্ঠিত ফলাফল শেয়ারিং অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি)’র পুলিশ কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দার। তিনি এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, “এই গবেষণা শুধু ঐতিহ্য সংরক্ষণ নয়, বরং মানুষকে সম্পৃক্ত করে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ইতিহাস রক্ষার এক সুন্দর প্রচেষ্টা।”
স্থানীয় বাসিন্দা, ঐতিহ্য বিশেষজ্ঞ এবং জলবায়ু গবেষকদের সক্রিয় অংশগ্রহণে আয়োজিত এই কর্মশালায় ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানের ঝুঁকি নিরূপণ করা হয়-ষাট গম্বুজ মসজিদ, চুনাখোলা মসজিদ, বিবি বেগনি মসজিদ, নয় গম্বুজ মসজিদ, খানজাহান আলীর সমাধি ও রানা বিজয়পুর মসজিদ। এগুলো বর্তমানে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, অতিবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়, লবণাক্ততা, জলাবদ্ধতা এবং অন্যান্য চরম আবহাওয়াজনিত ঝুঁকিতে রয়েছে।
চৎবংবৎারহম খবমধপরবং প্রকল্পের বাগেরহাট টিমের সমন্বয়কারী প্রফেসর ড. মাহফুজ-উদ দারাইন বলেন, এই স্থাপনাগুলো আমাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতির পরিচয় বহন করে। স্থানীয় অভিজ্ঞতা ও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ একত্রে ব্যবহার করে আমরা এগুলোকে ভবিষ্যতের জন্য রক্ষা করতে চাই।”
কর্মশালার সভাপতি ও প্রকল্পের আন্তর্জাতিক নির্বাহী পরিচালক যুক্তরাষ্ট্র থেকে ড. ভিক্টোরিয়া হারম্যান বলেন, “এই উদ্যোগটি দেখিয়েছে কিভাবে স্থানীয় মানুষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে ঝুঁকি বোঝা এবং ঐতিহ্য রক্ষায় সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়া যায়। এটি জলবায়ু পরিবর্তন ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ তৈরি করেছে।” কর্মশালায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে জুম মাধ্যমে আরও বক্তব্য রাখেন ওয়ার্কশপ ম্যানেজার টিনা প্যাটার্নো। এছাড়া বাংলাদেশ স্থপতি ইন্সটিটিউট খুলনা কেন্দ্রের আহবায়ক স্থপতি গৌরী শংকর রায়, ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্স খুলনা চেপ্টার চেয়ারম্যান আমিরুল জব্বার বক্তব্য রাখেন।
কর্মশালায় অংশ নেওয়া স্থানীয় বাসিন্দা মো. মাহবুব বলেন, “আমরা বহু বছর ধরে নদী ও প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলেছি, কিন্তু এখনকার আবহাওয়া আগের মতো নয়-এটা ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠেছে।”স্থাপত্যবিদ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ কর্মী আর্কিটেক্ট পলিন বলেন, “জাতীয় জলবায়ু নীতিতে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের বিষয়টি এখনও গুরুত্ব পাচ্ছে না। এখনই ব্যবস্থা না নিলে এই ঐতিহ্যগুলো হারিয়ে যাবে।” এই উদ্যোগটি ভবিষ্যতে দেশের অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে ঐতিহ্য সংরক্ষণের রূপরেখা হিসেবে কাজ করতে পারে। বাগেরহাট কর্মশালার সুপারিশসমূহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া হবে, যাতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও কার্যকর জলবায়ু কৌশল গড়ে ওঠে- যেখানে ঐতিহ্য সংরক্ষণকে স্থানীয় জনগণের সহনশীলতা গঠনের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।