/ সংকটের মধ্যে ভূগর্ভের পানি তুলতে আরও ৭৫টি পাম্প বসাচ্ছে ওয়াসা

সংকটের মধ্যে ভূগর্ভের পানি তুলতে আরও ৭৫টি পাম্প বসাচ্ছে ওয়াসা

প্রতিদিন উত্তোলন হবে ৫ কোটি লিটার পানি # গবেষকরা বলছেন, খুলনার ভূর্গস্থ পানির স্তর এমনতেই ঝুঁকিতে, ওয়াসার উদ্যোগ বিপদ আরও বাড়বে

এ এইচ হিমালয় : গত মার্চ থেকে খুলনার হস্তচালিত নলক‚প থেকে পানি উঠছে না। কিছু এলাকায় দিনে-দুপুরেও গভীর উৎপাদক নলক‚পেও (মাটির নিচে বসানো পাম্প) পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যাচ্ছে না। গবেষকরা বলছেন, যথেচ্ছভাবে ভুগর্ভের পানি উত্তোলনের কারণে পানির স্তর প্রতিবছর নিচে নামছে।
খুলনা ওয়াসার নিজস্ব পরিসংখ্যান বলছে, গত ১০ বছরে
ভ‚-গর্ভের পানির স্তর ১ দশমিক ৯৮ মিটার থেকে ৪ দশমিক ০৪ মিটার পর্যন্ত নিচে নেমেছে। যার কারণে শুষ্ম মৌসুমে ওয়াসার নিজস্ব উৎপাদক নলক‚পেও পানি উঠছে কম।
ভ‚গর্ভে পানির এমন সংকটের মধ্যে নতুন করে আরও ৭৫টি গভীর উৎপাদক নলক‚প বসাতে যাচ্ছে খুলনা ওয়াসা। এসব নলক‚পগুলো দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে প্রতিদিন ৫ কোটি লিটার এবং অন্য সময় প্রতিদিন ৫০ লাখ থেকে আড়াই কোটি লিটার করে পানি তোলা হবে। পাম্প বসানোর জন্য ইতোমধ্যে দরপত্র আহŸান করা হয়েছে।
খুলনা ওয়াসার তথ্য অনুযায়ী, ১৫ লাখ মানুষের খুলনা নগরীতে প্রতিদিন পানির চাহিদা ২৪ কোটি লিটার। গত মে মাসের হিসাব অনুযায়ী, গ্রাহককে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৮ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করে। এর মধ্যে মধুমতি নদী থেকে পানি এনে পরিশোধন করে সরবরাহ করা হয় প্রায় ৬ কোটি লিটার। এছাড়া ৩৮টি পাম্পের সাহায্যে ভ‚গর্ভ থেকে উত্তোলন করা হয় আড়াই কোটি লিটার পানি। বাকি পানি নগরবাসী ব্যক্তিগতভাবে বসানো উৎপাদক নলক‚প (পাম্প) থেকে উত্তোলন করে। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে পানি উত্তোলনের ফলে ভ‚গর্ভের পানির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
পানির স্তর পরিমাপ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত পানির স্তর নিচে নেমে যায়। প্রতিবছর এই সংখ্যা বাড়ছে। যে এলাকায় পাম্পের সংখ্যা বেশি ও বেশি সময় ধরে চলে ওই এলাকায় পানির স্তর ততোটা নিচে।
ওয়াসায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর সম্প্রসারিত এলাকা এবং বাদ পড়া ভবনে পানির সংযোগ পৌঁছাতে পানি সরবরাহ প্রকল্প ফেজ-২ নামে আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ওয়াসা। এই প্রকল্পের আওতায় নতুন করে ৭৫টি উৎপাদক নলক‚প বসানো হবে। গত ২৭ এপ্রিল দরপত্র প্রকাশ করা হয়েছে।
ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী ও পানি সরবরাহ প্রকল্প (ফেজ-২) এর ফোকালপারসন মো. কামাল হোসেন বলেন, খুলনার ভ‚গর্ভের পানির বিষয়ে একটি জরিপ করেছিল জাতীয় পানি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা সংস্থা। তারা বলেছিল, খুলনার ভ‚গর্ভে প্রতিদিন উত্তোলনযোগ্য পানি রয়েছে ১৩ কোটি ৩০ লাখ লিটার। এর মধ্যে ওয়াসা ৭৫ শতাংশ পানি তুলতে পারবে। অর্থাৎ প্রতিদিন ১০ কোটি লিটার পানি পানি তোলার সুযোগ রয়েছে। এপ্রিল-মে মাসে মধুমতি নদীতে লবণাক্ততা বেশি থাকায় নদীর পানি কম সরবরাহ করা হয়। ওই সময় নগরীতে সরবরাহের জন্য নতুন পাম্পগুলোর সাহায্য প্রতিদিন ৫ কোটি লিটার পানি তোলা হবে। বছরের বাকি সময় দিনে ৫০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ আড়াই কোটি লিটার পানি তোলা হবে। এতে ভ‚গর্ভের ওপর প্রভাব পড়বে না।
তবে জাতীয় পানি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা সংস্থার প্রতিবেদনের কপি চাইলে তিনি দিতে পারেননি। সংস্থাটির কর্মকর্তারাও কবে নাগাদ এই জরিপ প্রকাশিত হয়েছে, তা জানাতে পারেননি।
খুলনার ভ‚গর্ভের পানি ও পরিবেশ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন প্রধান অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে দক্ষিণাঞ্চলের পরিবেশ, প্রতিবেশ, পানি ও মাটির গুনাগুন দ্রæত পরিবর্তন হচ্ছে। ১৫ বছর আগের পরিকল্পনার অনেক কিছুই সেই অবস্থায় নেই। এখন ভ‚গর্ভের যে অ্যাকুইফার (ভূগর্ভের শিলাস্তর) থেকে মিষ্টি পানি তোলা হচ্ছে তা দ্রæত শেষ হয়ে যাচ্ছে। ওই পানি রিচার্জ হতে ৩৫/৪০ বছর পর্যন্ত সময় লাগে।
তিনি বলেন, ভ‚গর্ভের মিঠা পানির স্তরটি যদি শেষ হয়ে যায়, তখন তা পূরণ করবে নোনা পানি। মিষ্টি বা আধালবণ যুক্ত যে পানি খুলনার মানুষ এখন খায় ও ব্যবহার করে, তখন সেটুকুও থাকবে না।
খুলনা সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট কুদরত ই খুদা বলেন, খুলনার ভূর্গস্থ পানির স্তর এমনতেই ঝুঁকিতে, ওয়াসার নতুন প্রকল্প বিপদ আরও বাড়াবে। ওয়াসার উচিত ভ‚উপরস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ানো।