# ভয় ভুলে করোনা আক্রান্তদের সেবায় খুলনার নানা সংগঠন

এ এইচ হিমালয় ঃ
করোনায় আক্রান্তের দিক থেকে খুলনা বিভাগের শীর্ষে অবস্থান করছে খুলনা জেলা। এ পর্যন্ত জেলায় ১৬ হাজার ১৬৩ জন মরণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বাড়ছে মৃত্যুও। করোনা রোগীদের সেবা দেওয়া ৩টি হাসপাতালের একটিতেও শয্যা ফাঁকা নেই। হাসপাতালেও রয়েছে অক্সিজেন সংকট। হাসপাতালে শয্যা না পেয়ে বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেক রোগী। কিন্তু বাড়িতে বসে পর্যাপ্ত অক্সিজেন কোথায় পাবেন রোগীরা?
চরম এই দুঃসময়ে মানবতার গান গেয়ে এগিয়ে এসেছে কিছু মানুষ, রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন। করোনার ভয় ভুলে প্রতিনিয়ত অক্সিজেন নিয়ে তারা ছুটে যাচ্ছেন মানুষের দ্বারে দ্বারে। সামর্থ্য অনুযায়ী কারও ১টি সিলিন্ডার আছে, কারও ১০০টি। কিন্তু বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানের আকাক্সক্ষা সবার সমান। যেভাবে পারছেন, ছুটে যাচ্ছেন অসুস্থ মানুষের সেবায়।
তাদের কথা ভেবেই হয়তো কামিনী রায় লিখেছিলেন…আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে/আসে নাই কেহ অবনী পরে/সকলের তরে সকলে আমরা/ প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।
খুলনা নগরীতে করোনা রোগীদের সেবা দেওয়া সবচেয়ে পরিচিত সংগঠন খুলনা অক্সিজেন ব্যাংক। সংগঠনটি নিয়ে গত ২৮ জুন পূর্বাঞ্চলে পৃথক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া সামাজিক সংগঠনগুলোর আরও অনেক সংগঠন রয়েছে। যারা প্রতিনিয়ত করোনায় আক্রান্ত মানুষের সেবায় কাজ করে যাচ্ছে।
এর মধ্যে গত বছরের ২৯ জুন যাত্রা শুরু করে রোটারি খুলনা অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রকল্প। সংগঠনটির বর্তমান সিলিন্ডার সংখ্যা ৪২টি। নগরীর ৬৯/১ শামসুর রহমান সড়কে বাংলাদেশ ডায়াগনস্টিকে এর অস্থায়ী কার্যালয়ে।
কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়কারী প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান বলেন, গত বছর থেকে এ পর্যন্ত ৪৫৫ জনকে অক্সিজেন সেবা দেওয়া হয়েছে। অনেককেই ৪/৫ বার সিলিন্ডার রিফিল করে দেওয়া হয়েছে। চাকরিজীবীরা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় সার্বক্ষণিক দুই জন লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কেউ ফোন করলেই তাদের বাসায় অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
রাজনৈতিক দল ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলোও মানুষের সেবায় কাজ করছে। যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সোহেলের পৃষ্ঠপোষকতায় সম্প্রতি চালু হয়েছে শেখ আবু নাসের অক্সিজেন ব্যাংক। খুলনা মহানগর যুবলীগ এটি পরিচালনা করছে।
নগর যুবলীগের আহ্বায়ক শফিকুর রহমান পলাশ জানান, ১০০ সিলিন্ডার নিয়ে ৩০ জুন থেকে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দুই দিনে ৬০ জনকে সেবা দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে বাসাবাড়ির পাশাপাশি করোনা হাসপাতালেও অক্সিজেন সিলিন্ডার দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি সাংসদ শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েলের উদ্যোগে ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
গতবছর ২১ জুলাই কার্যক্রম শুরু করে শেখ সোহেল অক্সিজেন ব্যাংক। গত একবছরে ৬০টি সিলিন্ডার নিয়ে প্রায় ৫ শতাধিক রোগীকে সেবা দেওয়া হয়েছে। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা চৌধুরী রায়হান ফরিদ কার্যক্রমের সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি পূর্বাঞ্চলকে জানান, অক্সিজেন সেবার সঙ্গে সঙ্গে শনিবার থেকে টেলি মেডিসিন সেবা দেওয়া হবে। হটলাইন নম্বরে ফোন করে রোগীরা এই সেবা নিতে পারবেন। খুলনা মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের প্রাক্তন নেতারা বর্তমানে যারা চিকিৎসক তারা এই সেবা দিবেন।
এতোদিন পৃথকভাবে কাজ করলেও এখন থেকে শেখ আবু নাসের অক্সিজেন ব্যাংক ও শেখ সোহেল অক্সিজেন ব্যাংক একসঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। দুটোই পৃষ্ঠপোষক যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা শেখ সোহেল।
এর পাশাপাশি ২৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ওয়ার্ডের ভেতরে সেবা দেওয়া হচ্ছে। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল ইসলাম টিটো বলেন, গত বছর ১টি সিলিন্ডার দিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছিলাম। এখন ৬টি সিলিন্ডার রয়েছে। গত দুই দিনে ৯ জনকে সেবা দেওয়া হয়েছে। অসুস্থদের হাসপাতালে নিতে সহযোগিতা করা হচ্ছে।
খুলনা মহানগর বিএনপির উদ্যোগে ২০২০ সালের ৪ জুলাই ৪টি সিলিন্ডার নিয়ে করোনা সেবা কার্যক্রম হিসেবে কল সেন্টার চালু করা হয়। এ পর্যন্ত ২৩টি অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে প্রায় ৩০০ ব্যক্তি অক্সিসেন সেবা দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে ওষুধ ও অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস প্রদান করছে দলটি।
বিএনপি নেতা রকিবুল ইসলাম বকুলের উদ্যোগে তার সংসদীয় আসন খালিশপুর, দৌলতপুর ও খানজাহান আলী থানা এলাকায় সেবা দেওয়া হচ্ছে। তাদের কল সেন্টারের নাম ‘গণমানুষের স্বাস্থ্য সেবা ও করোনা সাপোর্ট সেন্টার’। তদারককারী ৫নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি শেখ ইমাম হোসেন বলেন, ২০২০ সালের ১২ আগস্ট শুরু। বর্তমানে অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে ২৫টি। আগামী সপ্তাহে আরও ৭টি যুক্ত হবে। এ পর্যন্ত শতাধিক মানুষকে সেবা দেওয়া হয়েছে। অক্সিজেন ছাড়াও টেলি মেডিসিন, বিনামূল্যে ওষুধ ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা দেওয়া হচ্ছে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মধ্যে নগরীর খালিশপুর এলাকায় অক্সিজেন সেবা দিয়ে যাচ্ছে ‘উদীয়মান অক্সিজেন ব্যাংক’। নগরীর খালিশপুর থানার আলমনগরের জোড়াতাল গাছ মোড়ে এর অস্থায়ী কার্যালয়। সংগঠনের প্রধান রবিউল গাজী উজ্জল পূর্বাঞ্চলকে বলেন, বর্তমানে ২১টি সিলিন্ডার দিয়ে খালিশপুর-দৌলতপুরসহ নগরীর ভেতরে প্রায় ৮৪ জনকে সেবা দিয়েছি। এছাড়া কারও রক্ত প্রয়োজন হলে সংগঠনের সদস্যরা তা প্রদান করছেন।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘টিম খুলনা, বিল্ড খুলনা অক্সিজেন ব্যাংক’ নগরীর ভেতরে তাদের সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সংগঠনটির সমন্বয়কারী শাকিল আহমেদ জানান, ৩৮টি সিলিন্ডার দিয়ে তারা প্রায় ২২৩ জনকে সেবা দিয়েছেন। সেবা কার্যক্রম আরও বাড়ানো হয়েছে।
খুলনার রূপসা উপজেলায় কাজ করছে ‘আলো ফুটবেই অক্সিজেন সেবা’। সংগঠনের উদ্যোক্তা ইউপি সদস্য আলমগীর শ্রাবণ জানান, ৫টি সিলিন্ডার দিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। ২৪ ঘণ্টা অক্সিজেন সার্ভিস দিচ্ছি। এ পর্যন্ত ৬ জন রোগী সেবা নিয়েছেন।
জিলা স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের (২০১৪-২০২০) সংগঠন ‘গোল্ডেন জেনারেশন অব খুলনা জিলা স্কুল’ ৫টি সিলিন্ডার নিয়ে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। শনিবার থেকে সংগঠনটির সেবা পেতে যোগাযোগ করতে হবে (হটলাইন-০১৭৩০-৫৯৩২৫৯) নম্বরে। এছাড়া অক্সিজেন সেবা কার্যক্রম শুরু করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দুস্বার বাংলাদেশ (হটলাইন-০১৭১৭-২৪৮৬৩০)।