কিল লেয়িং অনুষ্ঠানে খুলনা নৌ অঞ্চলের কমান্ডার

স্টাফ রিপোর্টার ঃ খুলনা নৌ অঞ্চলের কমান্ডার রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেছেন, সঠিক নেতৃত্ব,সততা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে একটি রুগ্ন শিল্প কিভাবে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারে তার সফল উদাহরন খুলনা শিপইয়ার্ড। জাহাজ নির্মাণ শিল্পে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে প্রতিষ্ঠানটি। তিনি গতকাল খুলনা শিপইয়ার্ডে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ তিনটি ল্যান্ডিং ক্রাফট্ (এলসিটি) এর কিল লেয়িং অনুষ্টানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন। তিনি এ সময় আরো বলেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য খুলনা শিপইয়ার্ড কর্তৃক জাহাজ নির্মাণ এটাই প্রথম নয়। আগেও এ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য ৫টি প্যাট্রোল ক্র্যাফট, ২টি লার্জ প্যাট্রোল ক্র্যাফট, ২টি টাগ বোট এবং ৬টি ল্যান্ডিং ক্র্যাফট ইউটিলিটি সফলভাবে নির্মাণ করে হস্তান্তর করেছে। আর এখন সর্ববৃহৎ দৈর্ঘ্যরে এলসিটি নির্মাণ করবে। এগুলো খুলনা শিপইয়ার্ডের ক্রমবর্ধমান সক্ষমতারই প্রমাণ। কেবল নৌবাহিনীর জন্য নয়, বরং কোস্টগার্ড, মোংলা বন্দর, পায়রা বন্দর, মৎস্য অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য আন্তর্জাতিকমানের জাহাজ নির্মাণ করে শিপইয়ার্ড দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এছাড়াও খুলনা শিপইয়ার্ড জাহাজ নির্মাণ করে অচিরেই বিদেশে রপ্তানিতে সক্ষম হবে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে খুলনা শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর এম সামছুল আজিজ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিচক্ষণ সিদ্ধান্তের কারনেই শিপইয়ার্ড আজ এক সফল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। আর এই সফলতার পেছনে খুলনা শিপইয়ার্ডের দক্ষ শ্রমিক,কর্মচারি,কর্মকর্তাদের নিরলস পরিশ্রম ও নিষ্ঠা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কারনেই খুলনা শিপইয়ার্ডের আজকের এই অবস্থান। শিপইয়ার্ডের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে তিনি সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেন। অনুষ্ঠানে উর্ধ্বতন সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তাসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য নির্মিতব্য ৩টি ল্যান্ডিং ক্র্যাফট ট্যাংক (এলসিটি) এদেশের সর্ব বৃহৎ দৈর্ঘ্যরে (৭০ মিটার) এবং সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ ল্যান্ডিং ক্র্যাফট ট্যাংক যাতে অত্যাধুনিক মেশিনারী এবং যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হবে। জাহাজ ৩টি আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমা এবং দেশের অভ্যন্তরের নদীসমুহে অপারেশন সক্ষম। প্রতিটি জাহাজ একই সাথে ৬টি মাঝারি মানের ট্যাংক পরিবহন করা যাবে। এছাড়াও ৬টি মাঝারি মানের ট্যাঙ্কের পরিবর্তে প্রতিটি জাহাজ ৫টি মিডিয়াম অ্যটিল্যারি গান ভেহিকেল অথবা ১২টি এপিসি অথবা ১৮টি মিলিটারি ট্রাক পরিবহনে সক্ষম। এলসিটিমূহের প্রাথমিক কাজ হবে যুদ্ধকালীন সময়ে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের উভচর অভিযান পরিচালনা এবং ট্যাংক, এপিসিসহ সার্পোট ইউনিট ও ল্যান্ডিং ফোর্স পরিবহন করা। তাছাড়া শান্তিকালীন সময় এলসিটি এর মিশন হবে লজিস্টিক শিপ এর ভূমিকা পালনের পাশাপাশি বঙ্গোপসাগর ও এর তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় মানবিক সহায়তা প্রদান এবং ত্রাণসামগ্রী ও কর্মী পরিবহন করা। দেশে নির্মিত প্রথম ল্যান্ডিং ক্র্যাফট হিসেবে এটা দেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পে মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে। জাহাজ ৩টি আন্তর্জাতিক ক্লাসিফিকেশন সোসাইটি লয়েডস রেজিস্ট্রার (ইংল্যান্ড) এর নীতিমালা অনুসরণ করে নির্মিত হবে।