# রাজধানীর চার সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ খালি নেই
ঢাকা ব্যুরো থেকে ॥ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একদিনে মৃত্যুর সংখ্যায় নতুন রেকর্ড হয়েছে। এই প্রথম একদিনে মৃত্যু পেরিয়েছে দেড়শ। গত ২৪ ঘণ্টায় এই সংখ্যা ছিল ১৫৩। এ নিয়ে টানা অষ্টম দিনের মতো দেশে একদিনে করোনায় আক্রান্ত শতাধিক ব্যক্তি মারা গেলেন। দেশে করোনায় আক্রান্ত মোট মৃত্যুও পেরিয়ে গেল ১৫ হাজার। একই সময়ে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৬৬১ জন, যা একদিনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর মাধ্যমে দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৯১৭ জনে। গতকাল রোববার স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানার সই করা কোভিড-১৯ সংক্রান্ত নিয়মিত বিজ্ঞপ্তিতে গত ২৪ ঘণ্টার করোনা পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। আরও পড়ুন- দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শনাক্ত ৮৬৬১, সংক্রমণের হার তৃতীয় সর্বোচ্চ
বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে যে ১৫৩ জন করোনা সংক্রমণ নিয়ে মারা গেছেন, এ নিয়ে দেশে এই সংক্রমণে প্রাণহানি দাঁড়ালো ১৫ হাজার ৬৫ জনে। সংক্রমণ বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় যারা করোনা সংক্রমণ নিয়ে মারা গেছেন, তাদের মধ্যে পুরুষ ৯৬ জন, নারী ৫৭ জন। তাদের ৯ জন বাসায় ও ১৪১ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। বাকি তিন জনকে হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত পাওয়া গেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃতদের বয়সভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৭০ জনের বয়স ৬০ বছরের বেশি। এছাড়া ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী ৪৫ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ২৪ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী ১১ জন এবং ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী তিন জন গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন করোনা সংক্রমণ নিয়ে।
বিভাগভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত কয়েকদিনের মতো গত ২৪ ঘণ্টাতেও সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে খুলনা বিভাগে। এ বিভাগে মারা গেছেন ৫১ জন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৬ জন মারা গেছেন ঢাকা বিভাগে। তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৫ জন করে মারা গেছেন চট্টগ্রাম ও রংপুর বিভাগে। এছাড়া রাজশাহী বিভাগে ১২ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৯ জন, বরিশাল বিভাগে তিন জন ও সিলেট বিভাগে দুই জন মারা গেছেন গত ২৪ ঘণ্টায়।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়েছেন ৪ হাজার ৬৯৮ জন। এ নিয়ে দেশে করোনা আক্রান্ত মোট ৮ লাখ ৩৩ হাজার ৮৯৭ জন সুস্থ হয়ে উঠলেন। সংক্রমণ বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৮ দশমিক ২৫ শতাংশ।
এদিকে, দেশের কয়েকটি জেলায় আইসিইউ ও অক্সিজেনের অভাবে ঘটছে মৃত্যু। এর প্রভাব পড়েছে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতেও। কারন জেলা ও বিভাগীয় হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে অনেকেই বাধ্য হচ্ছেন রোগী নিয়ে রাজধানীতে আসতে। এতেকরে রাজধানীর করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ শয্যার সংকট প্রকট হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনা আক্রান্ত হয়ে জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি এমন অধিকাংশ রোগী নিয়ে ছুটছেন সরকারি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে, স্বজনের জন্য খুঁজছেন আইসিইউ। কিন্তু আইসিইউ খালি নেই ঢাকার বেশিরভাগ করোনা হাসপাতালে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী গতকাল রোববার দুপুর ১২ পর্যন্ত রাজধানীর ৪টি হাসপাতালে কোনো আইসিইউ শয্যা খালি ছিল না। ৫০০ শয্যার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ইউনিট-২) ও বার্ন ইউনিট, ৫০০ শয্যার মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এছাড়া তিনটিতে আইসিইউ শয্যার কোনো ব্যবস্থাই নেই। আইসিইউর ব্যবস্থা না থাকা তিনটি হাসপাতাল হলো- মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলোজি এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস এন্ড হসপিটাল।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, গত এক সপ্তাহে যত মৃত্যু হয়েছে তার সাড়ে ৭৭ শতাংশই হয়েছে আইসিইউ সুবিধা কম থাকা সাত বিভাগে। আর সাড়ে ২২ শতাংশ মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে। ঢাকা মহানগরীতে সবমিলিয়ে সরকারি পর্যায়ে ৩৮৪টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। এর মধ্যে ফাঁকা আছে ১১০টি। ফাঁকা এই ১১০টি শয্যার মধ্যে ৮৩টিই মহাখালীর ডিএনসিসি হাসপাতালে।