কারণ দু’টি

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ বিগত এক মাসে খুলনার দু’টি হাসপাতালের আরটি পিসিআর ল্যাবের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, সরকারি হাসপাতালের চেয়ে বেসরকারি হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার বেশি।
খুলনা মেডিকেল কলেজের আরটি পিসিআর ল্যাবের এক মাসের গড় পরীক্ষায় যেখানে ৩৭ দশমিক ৪০ শতাংশের করোনা শনাক্ত হয়েছে সেখানে বেসরকারি গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আরটি পিসিআর ল্যাবের পরীক্ষায় গড় শনাক্তের হার হয়েছে ৫৮ দশমিক ২৭ শতাংশ।
এজন্য স্বাস্থ্যসেবার সাথে জড়িতরা দু’টি কারণ চিহ্নিত করেছেন। প্রথমত গাজী মেডিকেলের পরীক্ষায় অধিক মূল্য নেয়া হয় এবং এরই কারণে সরকারি হাসপাতালে ফলোআপ বা দ্বিতীয়বার পরীক্ষাটি করাতে রোগীরা আর সেখানে না যেয়ে সরকারি হাসপাতালে গিয়ে থাকেন।
গত মাসে খুলনার গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২১ দিনের করোনার রিপোর্ট দেয়া হয়। যা বিশ্লেষণে দেখা যায়, পয়লা জুলাই ৩৩ জনের নমুনা পরীক্ষার পর ১৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়। অর্থাৎ ওই দিনের সেখানের নমুনা শতাংশের হার ছিল ৫৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ। ৩ জুলাই ৩১ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয় ২৫ জনের অর্থাৎ ৮০ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ৪ জুলাই ৩৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৮ জনের শনাক্ত হয়। অর্থাৎ ওই দিনের নমুনা শতাংশের হার ছিল ৭৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এভাবে ওই হাসপাতালে ৬ জুলাই ৭৭ দশমিক ৪১ শতাংশ, ৭ জুলাই ৭৯ দশমিক ২৪ শতাংশ, ৮ জুলাই ৭০ দশমিক ৯৬ শতাংশ, ১১ জুলাই ৭১ দশমিক ৪২ শতাংশ, ১২ জুলাই ৭৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ, ১৩ জুলাই ৫৮ দশমিক ৬২ শতাংশ, ১৪ জুলাই ৭৩ দশমিক শূণ্য সাত শতাংশ, ১৫ জুলাই ৭০ দশমিক ৪৫ শতাংশ, ১৮ জুলাই ৫১ দশমিক ৫৬ শতাংশ, ১৯ জুলাই ৬৮ ৫৭ শতাংশ, ২০ জুলাই ৫৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ২১ জুলাই ৩৪ দশমিক ৬১ শতাংশ, ২৩ জুলাই ৬০ শতাংশ, ২৫ জুলাই ৩৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ, ২৭ জুলাই ৭৩ দশমিক শূণ্য সাত শতাংশ, ২৮ জুলাই ৩৯ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং ২৯ জুলাই ৪১ দশমিক ৩৭ শতাংশ লোকের করোনা শনাক্ত হয়।
গড় হিসাবে দেখা যায়, গাজী মেডিকেলের জুলাই মাসের ২১ দিনে সর্বমোট ৯১৮টি নমুনা পরীক্ষা করে ৫৩৫ জনের রিপোর্ট পজিটিভ হয়। অর্থাৎ ওই মাসের গড়ে সেখানে শনাক্তের হার ছিল ৫৮.২৭ শতাংশ।
পক্ষান্তরে খুলনা মেডিকেল কলেজের আরটি পিসিআর ল্যাবের ২৬ দিনের হিসাব পর্যালোচনায় দেখা যায়, সেখানে মোট শনাক্ত হয় আট হাজার ৮৪৬টি নমুনা। যার মধ্যে পজিটিভ রিপোর্ট হয় তিন হাজার ৩০৯ জনের। অর্থাৎ জুলাইতে খুলনা মেডিকেল কলেজের আরটি পিসিআর ল্যাবের গড় নমুনা পরীক্ষার হার হয় ৩৭ দশমিক ৪০ শতাংশ।
খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা: মো: মেহেদী নেওয়াজের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই ২৬ দিনের করোনাভাইরাস পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৪ জুলাই ৭৪ জনের নমুনা পরীক্ষার পর শনাক্ত হয় ৭৭ জনের অর্থাৎ সেদিনের শনাক্তের হার ছিল ৭৭ দশমিক শূণ্য দুই শতাংশ। এরপর ৫ জুলাই ৪১ দশমিক ২০ শতাংশ, ৬ জুলাই ৬১ দশমিক ১৭ শতাংশ, ৭ জুলাই ৪১ দশমিক ৩১ শতাংশ, ৮ জুলাই ৩৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ, ৯ জুলাই ৫৪ দশমিক ২৫ শতাংশ, ১০ জুলাই ৫০ দশমিক ৫৩ শতাংশ, ১১ জুলাই ৫৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ, ১২ জুলাই ৫৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ, ১৩ জুলাই ৫৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ, ১৪ জুলাই ৪৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ, ১৫ জুলাই ৪০ দশমিক ৯৮ শতাংশ, ১৬ জুলাই ৩১ দশমিক ৬৪ শতাংশ, ১৭ জুলাই ২৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ, ১৮ জুলাই ২৭ দশমিক শূণ্য ছয় শতাংশ, ১৯ জুলাই ৫১ দশমিক ২৮ শতাংশ, ২০ জুলাই ৩৫ দশমিক শূণ্য সাত শতাংশ, ২১ জুলাই ৩৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ, ২৩ জুলাই ২১ দশমিক ১৭ শতাংশ, ২৪ জুলাই ২৪ দশমিক ২৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ, ২৫ জুলাই ৩০ দশমিক ২৩ শতাংশ, ২৬ জুলাই ২৮ দশমিক ১৯ শতাংশ, ২৭ জুলাই ২৪ দশমিক ২৪ দশমিক ২০ জুলাই, ২৮ জুলাই ৩২ দশমিক ৭৪৫ শতাংশ ২৯ জুলাই ২৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং ৩০ জুলাই ৩০ দশমিক ৪৩ শতাংশ লোকের করোনা শনাক্ত হয়।
যদিও আগের চেয়ে করোনা শনাক্তের হার অনেকটা কমেছে, কিন্তু সরকারি হাসপাতালের চেয়ে বেসরকারি হাসপাতালের পরীক্ষার ফলাফলে পজিটিভ বেশি হওয়ার কারণ অনুসন্ধানে দেখা যায়, অধিক মূল্যই এর মূল কারণ। সরকারি হাসপাতালে একটি নমুনা পরীক্ষার জন্য যেখানে মাত্র একশ’ ১০ টাকা নেয়া হয় সেখানে বেসরকারি হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষায় নেয়া হয় তিন হাজার টাকা। এজন্য করোনার উপসর্গ দেখা দেয়ার সাথে সাথেই আর দেরি না করে সরকারি হাসপাতালের ভিড় এড়াতে কেউ কেউ বেসরকারি হাসপাতালের আশ্রয় নিয়ে চিকিৎসা নেয়ার পর যখন ফলোআপ পরীক্ষার প্রয়োজন হয় তখন আর অধিক মূল্য দিয়ে সেখান থেকে না করিয়ে সরকারি হাসপাতালেই গিয়ে থাকেন বলে সংশ্লিষ্ট মনে করছেন।
যদিও এ ব্যাপারে খুলনা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা: শাহনাজ পারভীন বলেন, এ বিষয়টি কেন হয় সেটি তিনি বুঝতে পারছেন না।
খুলনার গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা: গাজী মিজানুর রহমান স্বীকার করেন যে, যেহেতু বেসরকারি হাসপাতালে সরকার একটি রেট নির্ধারণ করে দিয়েছে সে কারণে একটি পরীক্ষার জন্য প্রত্যেক রোগীর কাছ থেকে তারা তিন হাজার টাকা নিয়ে থাকেন। পক্ষান্তরে সরকারি হাসপাতালে নেয়া হয় মাত্র একশ’ ১০ টাকা। যে কারণে স্বাভাবিক কারণেই দ্বিতীয় পরীক্ষার জন্য আর কেউ বেসরকারি হাসপাতালের শরণাপন্ন হয় না।
এন্টিজেন টেষ্টের অনুমোদন পেলো খুলনার সিটি মেডিকেল কলেজ ঃ খুলনার একটিমাত্র বেসরকারি হাসপাতালকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর র‌্যাপিড এন্টিজেন টেষ্ট করার অনুমোদন দিয়েছে। এটি হচ্ছে খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। গত ২৯ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক(হাসপাতাল ও ক্লিনিক সমুহ) ডা: মো: ফরিদ হোসেন মিঞা স্বাক্ষরিত এক আদেশে এটি জানান। এজন্য ইতোমধ্যেই সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেখানে করোনার এন্টিজেন পরীক্ষাও শুরু করেছেন বলে হাসপাতালের ম্যানেজার এডমিন এন্ড এইচআর মো: হামিদুল ইসলাম খান জানিয়েছেন। গতকাল শনিবার ওই হাসপাতালে ২১টি এন্টিজেন পরীক্ষার পর আটজনের রিপোর্ট পজিটিভ হয় বলেও তিনি জানান।
অপরদিকে, গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা: গাজী মিজানুর রহমান বলেন, তারাও এন্টিজেন পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আবেদন করেছেন। কিন্তু এখনও অনুমোদন পাননি।