ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে দেয়া হয়নি আর্থিক
ক্ষমতা, তিন মাস ধরে বেতন বন্ধ

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ খুলনা মহানগরীর খালিশপুরস্থ সরকারি মহসীন কলেজের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। একইসাথে কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদেরও বেতন বন্ধ বিগত তিন মাস যাবত। কলেজের অধ্যক্ষের অবসরের পর নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ না দেয়া এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে আর্থিক ক্ষমতা না দেয়ায় এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
কলেজের একাধিক সূত্র বলছে, গত ৬ জানুয়ারি তৎকালীন অধ্যক্ষ প্রফেসর গোলাম মোস্তফার অবসরের পর থেকে এ পর্যন্ত যতগুলো জাতীয় দিবস পালিত হয়েছে তাও শিক্ষকদের কাছ থেকে ধার দেনা করে পালন করতে হয়েছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের ফরম পূরনের টাকা ব্যাংকে জমা থাকলেও সেগুলো তুলতে না পারায় প্রায় ছয় লাখ টাকা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিশোধ করা হয় শিক্ষকদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে। এমতাবস্থায় ওই কলেজের নতুন ভর্তি হওয়া ¯œাতক শ্রেণির ২৫ জন শিক্ষার্থীর রেজিষ্ট্রেশন করার মেয়াদও গতকাল শেষ হয়েছে। কিন্তু তাদের রেজিষ্ট্রেশন না করতে পারায় এখন বিলম্ব ফি দিয়ে করতে হবে। এজন্য ওই শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আজ মঙ্গলবার কলেজ গেটে মানব বন্ধনের কর্মসূচির ডাক দেয়া হয়েছে।
কলেজের শিক্ষার্থী সাকিবুল ইসলাম বলেন, অনলাইনে ফরম পূরণ করে নির্ধারিত ফি দিয়ে সরকারি কলেজে ভর্তি হয়ে শুরুতেই শিক্ষা জীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিলো। এ দায়ভার কর্তৃপক্ষের, শিক্ষার্থীদের না। সুতরাং তারা কেন লেট ফি দেবে ? তাই অন্যান্য শিক্ষার্থীদের নিয়ে তারা কর্তৃপক্ষের এমন খামখেয়ালীপনার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার মানব বন্ধন করবেন।
কলেজ কর্তৃপক্ষীয় সূত্রটি বলছে, গত ৬ জানুয়ারি তৎকালীন অধ্যক্ষের অবসরের দু’দিন আগে অর্থাৎ ৪ জানুয়ারি কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং ডাকা হয়। মিটিংয়ে অধ্যক্ষ্যের দায়িত্ব কার কাছে দেয়া হবে তা নিয়ে আলোচনার পর দু’জন সিনিয়র শিক্ষক অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিয়ে অপারগতা প্রকাশ করলে তাহমিনা সুলতানাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে আর্থিক ক্ষমতা তার ওপর অর্পন করা হয়নি। এজন্য গত ১১ জানুয়ারি আর্থিক ক্ষমতা চেয়ে শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর পত্র দেয়া হয়। সেখান থেকে ২২ ফেব্রুয়রি এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাওয়া হলে ২৭ ফেব্রুয়ারি সকল কাগজপত্র পাঠানো হয়। কিন্তু ইতোমধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের ফরম পূরন বাবদ ব্যাংকে থাকা প্রায় ছয় লাখ টাকা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাঠাতে বললে শিক্ষকদের কাছ থেকে যার যেমন সম্বল সেভাবে ঋণ দিয়ে ওই টাকা পরিশোধ করা হয়। কিন্তু আর্থিক ক্ষমতা না পাওয়ায় গত ১২ মার্চ আবারো কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষা অধিদপ্তরে পত্র পাঠান। একইসাথে বিষয়টির জন্য শিক্ষামন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী, কেসিসি মেয়র, শিক্ষা সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার খুলনার আঞ্চলিক পরিচালক, খুলনার জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। আর এরই মধ্যে একুশে ফেব্রুয়ারি, ১৭ মার্চ, ২৬ মার্চ এসব দিবসগুলি পালনের জন্যও কলেজ কর্তৃপক্ষ নিজস্ব ফান্ড থেকে অর্থ খরচ করতে বাধ্য হন। সর্বশেষ ¯œাতক শ্রেণিতে নতুন ভর্তি হওয়া ২৫ জন শিক্ষার্থীর রেজিষ্ট্রেশনের মেয়াদও গতকাল সোমবার শেষ হয়েছে। কিন্তু তাদের রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন হয়নি।
এ ব্যাপারে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তাহমিনা সুলতানা জানান, একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তার ওপর সাময়িক সময়ের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। তিনি মনে করেছিলেন দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন অধ্যক্ষ যোগদান করবেন। কিন্তু নতুন অধ্যক্ষ যেমন পদায়ন করা হয়নি তেমনি তাকে আর্থিক ক্ষমতাও দেয়া হয়নি। এতে কলেজের প্রশাসনিক কার্যক্রম অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক প্রফেসর হারুন অর রশীদ বলেন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে সিনিয়রিটি মেইনটেন করা হয়নি বলে ডিজি অফিস থেকে আর্থিক ক্ষমতা দেয়া হচ্ছে না বলে তিনি শুনেছেন। তার পরেও তিনি চেষ্টা করেছেন। এখন বিষয়টি মহাপরিচালকের দপ্তরের এখতিয়ারভুক্ত।
তবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, নাটোরের সিংড়ার গলি আফরোজ সরকারি কলেজে গত ২৭ মার্চ তিনজনকে ডিঙ্গিয়ে একজন সহকারী অধ্যাপককে এবং ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা সরকারি ডিগ্রি কলেজে সাতজনকে ডিঙ্গিয়ে একজন প্রভাষকের ওপর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কিন্তু শুধুমাত্র খুলনার সরকারি মহসীন কলেজের ক্ষেত্রে নিয়মের কথা বলে সকল কার্যক্রম প্রায় বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য গতকাল বিকেলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নেহাল উদ্দিনকে ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি। তবে পরিচালক(প্রশাসন) শাহেদুল কবিরের নম্বরটি একাধিকবার ব্যস্ত পাওয়া যায়। পরে তাকে এসএমএস দিয়েও কথা বলা সম্ভব হয়নি।