এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ সর্বোচ্চ সংখ্যা যেন থামছেই না। গত ১৭ জুন বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে দেয়া বিগত ২৪ ঘন্টায় খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৮ জনের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। ওই সূত্র ধরে পত্র-পত্রিকায় লেখা হয়েছিল এ যাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্ত হয় ওই সময়ে। এর পরের দিন বিভাগীয় মৃত্যু তালিকায় নেমে আটজনে। কিন্তু গত শনিবারের রিপোর্টের আলোকে গতকাল পত্রিকায় লেখা হয় আবারো সর্বোচ্চ সংখ্যক মৃত্যু হয় খুলনা বিভাগে। অর্থাৎ ওই দিনের তালিকায় মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২২জন। কিন্তু সেই ২২ জনকে ছাড়িয়েও গতকাল দেয়া তালিকায় উল্লেখ করা হয় ২৮ জনের মৃত্যুর কথা। এভাবে চলতি মাসের বিগত ২০ দিনে বিভাগের ১০ জেলায় সর্বমোট ১৮০জনের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে। যেটি গত মাসের প্রথম ২০ দিনে ছিল মাত্র ২৬জন।
এদিকে, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আওতাধীন ১৩০ শয্যা বিশিষ্ট করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালেও মৃত্যুর সংখ্যা যেন কমছে না। শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে শনিবার দিবাগত রাত সোয়া ১০টা পর্যন্ত এ হাসপাতালে ১০ জন এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খুলনা গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনজনের অর্থাৎ এক দিনে খুলনার এ দু’টি হাসপাতালে ১৩ জনের মৃত্যু হয়। এ দু’টি হাসপাতালে গতকালকের মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ছয়জন। অর্থাৎ করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে চারজন এবং গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দু’জন।
করোনা হাসপাতালের সূত্রটি জানায়, শনিবার দিবাগত রাত সোয়া ২টা থেকে গতকাল বেলা সোয়া ১১টা পর্যন্ত সর্বমোট চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এরা হলেন, যশোরের মনিরামপুরের আম্বিয়া বেগম(৪০), নগরীর সোনাডাঙ্গা করিমনগরের বাসিন্দা এবং খুমেক হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় আলমগীর খান আলম(৫৯), দিঘলিয়ার সেনহাটির আইয়ুব আলী(৫৬) এবং বটিয়াঘাটার ডেওয়াতলার নিতানন্দ বিশ^াস(৫৫)।
হাসপাতালের রেকর্ডে দেখা যায়, মনিরামপুরের আম্বিয়া বেগম গত ১২ জুন ভর্তি হয়ে শনিবার দিবাগত রাত সোয়া ২টায়, খুমেক হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় এবং করিমনগরের বাসিন্দা আলমগীন খান আলম ৭ মে ভর্তি হয়ে গতকাল সকাল সোয়া নয়টায়, সেনহাটির আইয়ুব আলী শনিবার ভর্তি হয়ে গতকাল সকাল নয়টা ১০ মিনিটে এবং বটিয়াঘাটার নিত্যানন্দ বিশ^াস ১৩ জুন ভর্তি হয়ে গতকাল বেলা সোয়া ১১টায় মৃত্যুবরণ করেন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা: রাশেদা সুলতানা বলেন, অতি সম্প্রতি বিভাগে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। বিশেষ করে গত তিনদিনে বিভাগের কুষ্টিয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা বেশি দেখা গেছে। তাছাড়া গত মাসের প্রথম ২০ দিনের চেয়ে এ মাসের প্রথম ২০ দিনে মৃত্যু বেড়েছে অন্তত সাত গুণ। অর্থাৎ পয়লা মে থেকে ২০ মে পর্যন্ত বিভাগের ১০ জেলায় ২৬ জনের মৃত্যু হলেও পয়লা জুন থেকে গতকাল রোববার পর্যন্ত মৃত্যু হয় ১৮০ জনের। চলতি মাসের ২০ দিনের মধ্যেই শুধু নয়, এ যাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগীর মৃত্যু হয়েছে বিগত ২৪ ঘন্টায় অর্থাৎ ২৮জন। এর আগের দিন ১৯ জুনের হিসাবে ২২ জন এবং ১৫ জুনের হিসাবে ১৩জনের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করা হয়। এছাড়া ৯, ১২ ও ১৬ জুনের বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের হিসাবে ২৪ ঘন্টায় ১০ জন করে মৃতুর কথা উল্লেখ করা হয়।
এদিকে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা: গাজী মিজানুর রহমান গতকাল সকালে বিগত ১২ঘন্টার হিসাব দিয়ে বলেন, সেখানে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এরা হলেন, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার কুতুবপুরের মো: সিরাজুল হক(৬২) এবং বাগেরহাটের ফকিরহাটের মল্লিক আবু নাসির(৫০)।
গতকাল সকালে খুলনা সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের হিসাবে উল্লেখ করা হয়, বিগত ২৪ ঘন্টায় খুলনার কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনায় আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
এভাবে খুলনায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এতে শংকিত হয়ে পড়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে জড়িতরা। বিশেষ করে গত বছর খুমেক হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের এক কর্মীর করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর পর গতকাল আরও একজনের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যেও আতংক ছড়িয়ে পড়েছে।
অপরদিকে, খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী এ পর্যন্ত বিভাগের ১০ জেলায় মৃত্যু হয়েছে ৮২৫জনের। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস’র হিসাবে গতকাল সকাল আটটা পর্যন্ত খুলনা বিভাগের মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ৯৮৭জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস’র হিসাবে দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যায় ঢাকা, চট্টগ্রামের পরই খুলনার অবস্থান উল্লেখ করা হয়েছে। তবে গত ২৪ ঘন্টায় খুলনা বিভাগে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় বলে উল্লেখ রয়েছে।