/ সাদা মাছের পাশাপাশি চিংড়ি শিল্পের উন্নয়নে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন

সাদা মাছের পাশাপাশি চিংড়ি শিল্পের উন্নয়নে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন

খুলনায় কর্মশালায় মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক

মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মোঃ আবদুর রউফ বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে বছরে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার মৎস্য রপ্তানীর ৮০ শতাংশই আসে চিংড়ি শিল্প থেকে। সুতরাং সাদা মাছের পাশাপাশি ভেনামিসহ চিংড়ি শিল্পের উন্নয়নে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। রপ্তানীকারকদের অভিযোগ কাঁচামালের অভাবের ফলে রপ্তানী প্রক্রিয়াজাত কারখানাগুলো বন্ধ হচ্ছে। এজন্য সম্প্রতি সরকার ভেনামি চাষের অনুমোদন দিয়েছে। আশা করা যাচ্ছে এর মধ্যদিয়ে দেশের মৎস্য সেক্টর আরও উন্নত হবে।
অসুধু ব্যবসায়ীদের থেকে সকলকে সাবধান থাকার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, মৎস্য পোনার সংকট দেখা দেওয়ার কারনেই ষাটের দশকে দেশে বেসরকারি পর্যায়ে হ্যাচারির প্রচলন শুরু হয়। এক পর্যায়ে হ্যাচারির প্রতি মানুষ এতোই নির্ভরশীল হয়ে পড়ে যে, ৯৮ শতাংশ পোনার যোগান দেওয়া হয় বেসরকারি হ্যাচারী থেকে। বাকী দুই শতাংশ পোনা আসে নদী-নালা থেকে। কিন্তু কিছু অসাধু হ্যাচারি মালিক ব্যবসায়িক সুবিধার জন্য ভেজাল পোনা উৎপাদন শুরু করে। যেটি পরে দেশের মৎস্য সেক্টরে বিরূপ প্রভাব ফেলে। এজন্য অনৈতিক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এর মধ্যদিয়ে দেশের মৎস্য সেক্টরকে এগিয়ে নিতে তিনি সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার আহবান জানান।
তিনি খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় আয়োজিত এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় গল্লামারী মৎস্য উৎপাদন খামারের সম্মেলন কক্ষে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বিদায়ান সরকারি মৎস্য খামারসমূহের সক্ষমতা ও মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (১ম পর্যায়) এর আওতায় জেলা পর্যায়ের এ আঞ্চলিক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
মৎস্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন, বিদ্যমান সরকারি মৎস্য খামার সমূহের সক্ষমতা ও মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (১ম পর্যায়) প্রকল্প পরিচালক মোঃ মশিউর রহমান। বক্তৃতা করেন, মৎস্য অধিদপ্তরের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মোঃ আনোয়ার কবির, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ বদরুজ্জামান এবং সহকারী পরিচালক মোস্তফা আল আজিজ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন বটিয়াঘাটা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ সেলিম সুলতান।
কর্মশালায় প্রকল্প পরিচালক মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, গত বছর(২০২৪) জুলাই থেকে চার বছর মেয়াদী প্রকল্পটি শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে খুলনাসহ দেশের আটটি বিভাগের ৫৬টি জেলার ১০৮টি উপজেলার ১১৩টি খামারের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে ৩২টি খামারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড করা হবে। যার মধ্যে রয়েছে ২০ কিলোওয়াটের সৌর বিদ্যুৎ স্থাপন, ক্রায়োপ্রিজারভেশন ব্যবস্থা চালুকরণ, অফিস ভবন নির্মাণ, কর্মশালা/সেমিনার আয়োজন, বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ ও সংস্কার, যন্ত্রপাতি ক্রয়, লেবার শেড নির্মাণ প্রভৃতি। তবে প্রাথমিকভাবে ৩২টি সরকারি মৎস্য খামারের তালিকা করে এ কাজ করা হলেও পরবর্তীতে আরও দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রকল্প গ্রহণের মধ্যদিয়ে দেশের সকল সরকারি মৎস্য খামারের উন্নয়নের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির চেষ্টা করা হবে।
কর্মশালায় মৎস্য চাষীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করা হলে অধিধপ্তরের মহাপরিচালক তার বক্তব্যের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে সেগুলো সমাধানের আশ্বাস দেন। এসময় তিনি কথা বলেন, ভেনামি চিংড়ির সম্ভাবনা নিয়েও। বিশেষ করে দেশের বেসরকারি পর্যায়ে গড়ে ওঠা হ্যাচারিগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলে সেগুলোর ব্যাপারেও পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। পাশাপাশি গ্রাম-গঞ্জের পাশাপাশি খুলনাসহ যেসব শহর অঞ্চলে মৎস্য খামার রয়েছে সেগুলোর ব্যাপারেও মৎস্য অধিদপ্তরের নজরদারি বাড়ানো হবে বলে তিনি জানান। গ্রামের পাশাপাশি শহরেও প্রদর্শনী খামার করা হবে বলেও তিনি আশ্বাস দেন।