খুলনা মটর বাস মালিক
সমিতির সভাপতি
আব্দুল গফফার বিশ^াস
* গৌরবের পদ্মা সেতু, আর বাকী ১৬ দিন

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ শুধু পদ্মা সেতু নির্মাণই সার্বিক উন্নয়ন নয়, বরং স্বপ্নের এই সেতুকে ঘিরেই হাতে নেয়া যেতে পারে উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা। এজন্য এখনই মৃত:প্রায় শিল্প নগরীকে সচল করা, গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক-মহাসড়কের উন্নয়নে সার্ভের মাধ্যমে পরিকল্পিত উন্নয়ন গড়ে তোলা এবং জাতীয় পার্টির আমলে খুলনার রূপসায় যে বিমান বন্দরের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল তার কাজ শুরু করা জরুরি বলে মনে করছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও খুলনা মটর বাস মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ¦ আব্দুল গফফার বিশ^াস।
পদ্মা সেতু চালুর মাহেন্দ্রক্ষণকে সামনে রেখে দৈনিক পূর্বাঞ্চলকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু আওয়ামীলীগ আমলে সম্পন্ন হয়েছে এবং সর্বশেষ আ’লীগ আমলেই উদ্বোধন হতে যাচ্ছে এটা ঠিক, কিন্তু এজন্য এককভাবে এ সরকারের কৃতিত্ব নেয়ার কিছু নেই। কেননা পদ্মা সেতু ও ঢাকা-মাওয়া-খুলনা মহাসড়কের জন্য জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও আ’লীগ এই তিন সরকারেরই অবদান রয়েছে। হয়তো কোন সরকারের অবদান কিছুটা বেশি আবার কারও কম। তবে বিশ^ব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সাহস নিয়ে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ এগিয়ে নিয়ে শেষ করতে পেরেছেন এজন্য তাকে ধন্যবাদ জানান পরিবহন মালিক সমিতির এই নেতা।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসিকতা ও দৃঢ়চেতা মনোভাব দেশের ভাবমূর্তিকে আরও উজ্জল করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে পদ্মা সেতু চালু হলেও খুলনার গৌরব শিল্পাঞ্চল আজ মৃত: কেন ? একের পর এক মিলগুলো বন্ধ হচ্ছে কেন ? এজন্য অবশ্য তিনি আ’লীগ-বিএনপি উভয় সরকারেরই সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, বিএনপি আমলে প্রথম খুলনার টেক্সটাইল মিল বন্ধ হয়েছিল। এরপর পর্যায়ক্রমে বন্ধ হয় নিউজপ্রিন্ট, হার্ডবোর্ড, দাদা ম্যাচসহ আরও অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান। আর মিল বন্ধের শেষ পেরেক ঠেকে দেয় আওয়ামীলীগ। অর্থাৎ একসাথে দেশের ২৫টি জুট মিল বন্ধ করা হয় ২০২০ সালে। আর মিলগুলো বন্ধের ফলে খুলনা থেকে তিন লাখ লোক চলে গেছে। অনেক শ্রমিক পেশা পরিবর্তন করেছে। কেউ কেউ ইজিবাইক চালাচ্ছে। আগে মনুষ খুলনায় আসতো কাজের সন্ধানে। এখন মানুষ কাজ পাচ্ছে না বলে শহর ছাড়ছে। যেখানে কর্মসংস্থান বাড়ানোর কথা সেখানে সংকুচিত হচ্ছে। সুতরাং পদ্মা সেতুর পাশাপাশি এসব বিষয় মাথায় রেখেই সামনে এগিয়ে যেতে হবে বলেও সরকারকে পরামর্শ দেন সাবেক এই সংসদ সদস্য।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুধু পদ্মা সেতু চালু হলেই যে অবস্থার পরিবর্তন হবে সেটি আশা করার সুযোগ নেই। আগে মিলগুলো চালু করতে হবে, অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে। তারপরই সার্বিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি।
তবে পদ্মা সেতুকে ঘিরে হয়তো কিছু রাস্তাঘাট সম্প্রসারিত হবে, কিন্তু কর্মসংস্থান হবে বলে মনে হয়না। আমাদের বেশি দরকার কর্মসংস্থান। শিল্প নগরীর অতীত গৌরব ফিরিয়ে আনতে কিভাবে নতুন প্রযুক্তিতে মিলগুলো চালু করা যায় সেজন্যও পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার বলেও তিনি মনে করেন।
একইসাথে মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দর এবং বেনাপোল ও ভোমরা স্থল বন্দরের অবস্থা কিছুটা পরিবর্তন হলেও সার্বিক দিক দিয়ে বিভাগীয় শহর খুলনার তেমন একটা উন্নয়ন হবে না এমনটি আশংকা করেন তিনি। এ অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে আগে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
পদ্মা সেতু হলেও খুলনায় বিমান বন্দরের চাহিদা থাকবে এমনটি উল্লেখ করে আলহাজ¦ আব্দুল গফফার বিশ^াস বলেন, বিমান বন্দরের জন্য জাতীয় পার্টি আমলে খুলনার রূপসায় জায়গা দেখা হয়েছিল। এজন্য সমীক্ষাও করা হয়েছিল। কিন্তু সেটি কেন রামপালে নেয়া হলো এমন প্রশ্ন তোলেন তিনি। তবে জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় থাকলে এতোদিনে রূপসায় বিমান বন্দর হতো বলেও তিনি মনে করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির আমলেই খুলনা সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা হয়। খুলনা বিশ^বিদ্যালয়, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এমনকি উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা জাতীয় পার্টির শাসনামলেই হয়। এছাড়া উপজেলা প্রতিষ্ঠা করে ক্ষমতা বিকেন্দ্রিকরণ করা হয় জাতীয় পার্টির আমলে। এক কথায় উন্নয়ন বলতে যা বোঝায় এরশাদই করে গেছেন। তিনি ইতিহাস থেকে সকলকে শিক্ষা নেয়ার আহবান জানান।
পদ্মা সেতু চালু হলে বাসের সংখ্যা কিছু বাড়বে এটি ঠিকই কিন্তু সার্বিকভাবে পরিবহন সেক্টরে অনেক পরিবর্তন হবে এমনটিও আশা করছেন না আব্দুল গফফার বিশ^াস। তিনি বলেন, হয়তো পদ্মা সেতুর চালুর খবরে ঝোকে পড়ে কিছু মালিক নতুন নতুন বাস নামাচ্ছেন। কিন্তু তাতে যে খুব বেশি লাভবান হওয়া যাবে সেটি তিনি মনে করেন না। কেননা যেখানে লোকই নেই সেখানে অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হবে কি করে ?
পদ্মা রেল সেতুর সুফল খুলনাবাসী আপাতত: পাচ্ছে না এমনটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর জন্য দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে খুলনার মানুষ। অনেকে মনেও করেন যে, পদ্মা সেতুর সুফল বেশি পাবে খুলনার মানুষ। কিন্তু রেল সেতুর সুফল আপাতত: খুলনার যাত্রীদের দেয়া হচ্ছে না বলে শোনা যাচ্ছে। এ ধরনের পরিকল্পনার সাথে যারা জড়িত তাদেরকেই দোষারোপ করেন তিনি। কেন পরিকল্পনাবিদরা খুলনাকে মাইনাস করলো সেটি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
এদিকে, পদ্মা সেতুকে ঘিরে খুলনাঞ্চলকে নিয়ে বেশকিছু প্রস্তাবনা দিতে গিয়ে সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, আগে বন্ধ মিলগুলো চালু করে মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে, রাস্তাঘাট সম্প্রসারণসহ নতুন নতুন সড়ক নির্মাণ এবং ভৈরব সেতুর মাধ্যমে নড়াইল, গোপালগঞ্জ হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত বিকল্প সড়ক উন্নয়নে পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে। এছাড়া ১৯৮৯ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের উপস্থিতিতে খুলনা সার্কিট হাউজে খুলনাকে নিয়ে যে মহাপরিকল্পনা করা হয়েছিল তার আলোকে খুলনাকে একটি পরিকল্পিত নগরীতে পরিণত করারও প্রস্তাব দেন আব্দুল গফফার বিশ^াস। ওই সময় নগরীর ৭ নম্বর ঘাটকে শিপইয়ার্ডের দিকে নেয়া, গল্লামারীতে লিনিয়ার পার্ক করা, রূপসায় বিমান বন্দর স্থাপন, খুলনা রেল ষ্টেশনকে দৌলতপুরের দিকে নিয়ে খুলনা শহরকে সম্প্রসারণ করে পরিকল্পিত নগর গড়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, ৮৯ সালের সেই পরিকল্পনা নিয়ে সামনে আগানো গেলে এই শহর অনেকটাই পরিবর্তন হতো।
তবে আমাদের দেশের প্রতিহিংসা পরায়ন রাজনৈতিক নীতি পরিহার করে ইতিবাচক দিকে সকলকে এগিয়ে আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, এদেশের একটি সমস্যা হচ্ছে, এক সরকার একটি প্রকল্প রেখে গেলে পরবর্তী সরকার সেটি বাতিল করে নতুন করে শুরু করে। এতে উন্নয়ন অনেকটা বাধাগ্রস্থ ও বিলম্বিত হয়। সুতরাং একের রেখে যাওয়া প্রকল্পগুলোকে অন্য সরকারের এগিয়ে নেয়ার আহবান জানান তিনি।