প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার ভাণ্ডার সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর এলাকা। পর্যটকদের কাছে এটি বহুদিন ধরেই ছিলো এক স্বপ্নের গন্তব্য। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ওই এলাকায় নজিরবিহীন পাথর লুটের ঘটনায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বলছে, এই লুটপাট রোধে স্থানীয় প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা থাকা উচিত ছিল, যা দেখা যায়নি।
বুধবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে দুদকের সিলেট কার্যালয়ের একটি দল ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর এলাকা পরিদর্শন করে। দলের নেতৃত্ব দেন উপপরিচালক রাফি মো. নাজমুস সাদাত। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, একসময় যেসব স্থানে সাদা ঝকঝকে পাথরের স্তূপ ছিল, সেগুলোর অনেকটাই খালি পড়ে আছে। চারদিকে গর্ত আর পাথর উত্তোলনের চিহ্ন স্পষ্ট।
পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নাজমুস সাদাত বলেন, “এটি মূলত স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্ব। প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় তাদের আরও সতর্ক থাকা উচিত ছিল। পাশাপাশি খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোসহ সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের দায়িত্ব রয়েছে। এই লুটপাট ঠেকাতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হতো।”
তিনি জানান, ভোলাগঞ্জ থেকে কয়েকশ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ করা হয়েছে। “পর্যটকরা এখানে এসে এখন হতাশ হন। আগে যেখানে অপূর্ব দৃশ্য দেখতেন, এখন সেখানে শুধু লুটপাটের চিহ্ন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
লুটপাটে কারা জড়িত
দুদক কর্মকর্তার দাবি, সাদাপাথর এলাকার আশপাশে অনেক স্টোন ক্রাশার মিল রয়েছে, যেখানে এসব পাথর নিয়ে ভাঙা হয়। এ কাজে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি, কিছু বাসিন্দা, উচ্চপদস্থ ব্যবসায়ী ও অন্যান্য প্রভাবশালীর সম্পৃক্ততার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।আমরা এসব তথ্য সংগ্রহ করছি। যারা এ লুটপাটের সঙ্গে জড়িত, তাদের খুঁজে বের করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। — যোগ করেন নাজমুস সাদাত।
দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সাদাপাথর লুটপাটের পুরো ঘটনাটি তদন্ত করে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
স্থানীয়দের মতে, ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর শুধু অর্থনৈতিক সম্পদ নয়, এটি সিলেটের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন আকর্ষণও বটে। অতিরিক্ত পাথর উত্তোলন এবং অবৈধ লুটের কারণে এলাকা হারাচ্ছে তার পূর্বের রূপ। এতে যেমন স্থানীয় জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি পর্যটন শিল্পও মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।