/ সুন্দরবনকে টিকিয়ে রাখতে প্লাস্টিক ও পলিথিন বন্ধের কোন বিকল্প নেই

সুন্দরবনকে টিকিয়ে রাখতে প্লাস্টিক ও পলিথিন বন্ধের কোন বিকল্প নেই

সুন্দরবন সুরক্ষায় যুব সম্মেলনে প্রধান বন সংরক্ষক

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধান বন সংরক্ষক মোঃ আমীর হোসেন চৌধুরী বলেছেন, পলিথিন এবং সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিক প্রকৃতির ব্যাপক ক্ষতি করছে। ধ্বংস করছে গাছপালা এবং ডাঙ্গা ও জলের প্রাণী। বিশেষ করে মাছের মাধ্যমে মানুষের শরীরে ঢুকছে মাইক্রো প্লাস্টিক যা’ জীবনহানীরও অন্যতম কারণ। বনজ ও জলজ সম্পদসহ সুন্দরবনকে টিকিয়ে রাখতে এই প্লাস্টিক ও পলিথিন বন্ধের কোন বিকল্প নেই।

সুন্দরবন প্রভাবিত ৫ জেলার ১৭ উপজেলায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কর্মরত “ইয়ুথ ফর দি সুন্দরবন”-এর ৫৩০ জন যুবককে সরকারি স্বীকৃতি দিতে তাদের বন বিভাগের স্বেচ্ছাসেবকের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করার জন্য খুলনার বন সংরক্ষকের প্রতি নির্দেশনা দেন।


গতকাল বৃহস্পতিবার খুলনা মহানগরীর শিল্পকলা একাডেমিতে সুন্দরবন সুরক্ষায় যুব সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি একথা বলেন।
রূপান্তর-এর নির্বাহী পরিচালক স্বপন কুমার গুহ’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিতান কুমার মÐল, হেলভেটাস বাংলাদেশের হেড অব প্রোগ্রাম শাহরিয়ার মান্নান এবং বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ। অনুষ্ঠানে উদ্দীপনামূলক সেশন পরিচালনা করেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল বিশ^বিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. সৈয়দ মিজানুর রহমান।


সম্মেলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের ডিএফও এ জেড এম হাসানুর রহমান, সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের ডিএফও মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী, জার্নালিজম ফর সুন্দরবন ফোরামের এইচ এম আলাউদ্দিন (খুলনা), মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জ্বল (সাতক্ষীরা), খালিদ মাহমুদ (পিরোজপুর) এবং মুনীর হোসেন কামাল (বরগুনা), পরিবেশকর্মী ও মোংলা উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নূর আলম শেখ এবং রিসাইকেল জার-এর প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সুন্দরবন একাডেমি’র নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির। স্বাগত বক্তৃতা করেন রূপান্তর-এর নির্বাহী পরিচালক রফিকুল ইসলাম খোকন। তরুণদের পক্ষ থেকে বক্তৃতা করেন মোঃ শাহীন খলিফা এবং খাদিজা আক্তার সাথী।


প্রধান অতিথি আরও বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে সুন্দর সুরক্ষায় নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে। গত পাঁচ বছরে সুন্দরবনে কার্বন ধারণের পরিমাণ বেড়ে চার দশমিক শূন্য ছয় মিলিয়ন টনে পৌঁছেছে। ২০১৪ সালে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল ১০৬টি ২০২৪ সালে এই সংখ্য বেড়ে ১২৫টিতে পৌঁছেছে। সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণ থাকলে সুন্দরবনকে পলিথিনমুক্ত করা অবশ্যই সম্ভব হবে। প্রাথমিকভাবে সবচেয়ে বেশী ট্যুরিস্ট যে দু’টো স্পটে গিয়ে থাকেন সেই করমজল এবং হারবারিয়াকে লক্ষ্য করে কার্যক্রম পরিচালনা করলে অচিরেই তা’ সফল হওয়া সম্ভব হবে।


অনুষ্ঠানে সুন্দরবন সুরক্ষায় পলিথিন ও প্লাস্টিক দূষণ হ্রাসে ভ‚মিকা পালনকারী তৃণমূল যুবদের পাশাপাশি প্রশাসনিক কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, উন্নয়নকর্মী, সাংবাদিকসহ সমাজের বিভিন্ন পেশার মানুষ অংশ নেন। সুন্দরবন প্রভাবিত ৫টি জেলার ১৭টি উপজেলার চারশ’ তরুণ এই কনফারেন্সে অংশ নেন। জলজ প্রাণীর জীবন ও আবাসস্থল রক্ষায় সুন্দরবনে পলিথিন ও প্লাস্টিক দূষণ হ্রাসে এই তরুণ সমাজ তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছেন।


অনুষ্ঠানে সুন্দরবন সুরক্ষায় কাজ করা তরুণদের পক্ষ থেকে সুন্দরবন প্রভাবিত প্রতিটি জেলার (খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর ও বরগুনা) জন্য একটি করে স্টলে তাদের নিজ নিজ কর্মকাÐ উপস্থাপন করেন। জেলা পর্যায়ের সেরা স্টলের পুরষ্কার লাভ করে বাগেরহাট এবং উপজেলা পর্যারে যথাক্রমে নেছারাবাদ, পাথরঘাটা ও আশাশুনি। অনুষ্ঠানে বিগত দিনে সুন্দরবন সুরক্ষায় ভ‚মিকা পালন এবং পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য সেরা নিটি উপজেলাকে পুরষ্কৃত করা হয়। উপজেলাগুলো হচ্ছে যথাক্রমে মঠবাড়িয়া, কয়রা এবং কালিগঞ্জ ইয়থ ফোরাম। অনুষ্ঠানে সুন্দরবন সুরক্ষায় ১৭ দফা’র “খুলনা ঘোষণা” অনুমোদন করা হয়। ১৭ দফার খুলনা ঘোষণা উপস্থাপন করেন কর্ণ বিকাশ কেডি এবং লাবনী আক্তার।


উল্লেখ্য, জার্মান সরকারের সহযোগিতায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা রূপান্তর বাংলাদেশে সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ বন ও তার সংলগ্ন অঞ্চলসমূহের দূষণ কমানো ও বাস্তুসংস্থান উন্নয়নে গত ২০২৪ সালের জুন থেকে কাজ করে যাচ্ছে। প্রকল্পটি আগামী ২০২৬ সালের নভেম্বর পর্যন্ত চলবে।