/ সুন্দরবনে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে চলছে হরিণ শিকার, চলছে মাংসের হোম ডেলিভারি

সুন্দরবনে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে চলছে হরিণ শিকার, চলছে মাংসের হোম ডেলিভারি

শেখ আহমেদ তারিক, বাগেরহাট : বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও থেমে নেই হরিণ শিকার। জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে প্রজনন মৌসুম হওয়ায় জেলে-বাওয়ালী ও পর্যটকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও, কিছু অসাধু চক্র এই সময়েই সক্রিয় হয়ে উঠেছে। স্থানীয় প্রভাবশালী, রাজনৈতিক নেতা এবং প্রশাসনের একাংশের সহযোগিতায় গড়ে উঠেছে হরিণ শিকারী চক্র, যারা মাংস বিক্রির পাশাপাশি হোম ডেলিভারির ব্যবস্থাও করেছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ৬ মাসে কোস্টগার্ড ৬০০ কেজি হরিণের মাংস, ৮টি চামড়া ও ২০০টি ফাঁদসহ ২০ জনকে আটক করেছে। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ উদ্ধার করেছে ২,৬১৫টি ফাঁদ এবং দায়ের করেছে ১২টি মামলা।
মোংলার চিলা ইউনিয়নের এক শিকারী জানান, অনেকে জেলেবা মৌয়াল সেজে বন থেকে হরিণ শিকার করে। কিছু চক্র বন থেকে শিকার করে লোকালয়ে পৌঁছে দেয়, অন্যরা মাংস পৌঁছে দেয় ক্রেতাদের বাড়িতে। ঈদ বা উৎসবের সময় হরিণের মাংসের চাহিদা বাড়ে এবং প্রভাবশালীরা ফ্রি মাংস নেওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। প্রতি কেজি হরিণের মাংস ৮০০ থেকে ১,৫০০ টাকা দরে বিক্রি হয় এবং মাংসের পরিমাণ ও দূরত্ব অনুযায়ী দাম নির্ধারিত হয়। অনেক সময় শিকারীরা বন্য শুকরের মাংস হরিণের সঙ্গে মিশিয়ে দেয়, আবার কিছু প্রতারক কম দামে কুকুরের মাংসও বিক্রি করে। হরিণ শিকারীরা প্রধানত নাইলনের সুতা, স্প্রিংফাঁদ, বড়শি, চেতনানাশক ও গুলি ব্যবহার করে।
হরিণ শিকার সবচেয়ে বেশি হয় দুবলার চর, হিরণপয়েন্ট, কটকা, কালামিয়ারভারানী, চরখালি ও তালপট্টি এলাকায়। এসব হরিণের মাংস গোপনে বিক্রি হয় মোংলা, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা ও রামপালের বিভিন্ন গ্রামে।
আইইউসিএন-এর ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনে এখন ১,৩৬,৬০৪টি হরিণ রয়েছে, যা ২০০৪ সালের তুলনায় প্রায় ৫৪ হাজার বেশি। বনবিভাগের জনবলসংকট থাকলেও ‘প্যারালালসার্চিং’, ড্রোননজরদারি, ফাঁদ জমা দিলে পুরস্কার এবং স্থানীয়দের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবী কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বনকর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, গত ৫ আগষ্টের পর থেকে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। এ সুযোগে সুন্দরবনে হরিণশিকারীরাও তাদের তৎপরতা বৃদ্ধি করে। তবে এখন পরিস্থিতি ভিন্ন, হরিণ শিকারীদের ধরতে বর্তমানে বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের কর্মকর্তাসহ বনরক্ষীরা ব্যাপক তৎপর রয়েছে। তিনি আরও বলেন, শুধু শিকারি নয়, যারা হরিণের মাংস খান, এমন ভোক্তাদেরও চিহ্নিত করে সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। শিকার বন্ধ করা গেলে হরিণ বাড়বে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) বাগেরহাট জেলা সভাপতি ও ‘সুন্দরবন রক্ষায় আমরা’ সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী মোহাম্মদ নূরআলম শেখ বলেন, শিকারীরা সবাই সুন্দরবন সংলগ্ন গ্রামের বাসিন্দা। এদের প্রতিরোধ করতে হলে বন সংলগ্ন গ্রামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি বাড়াতে হবে। অসাধু বনরক্ষীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া বন্য প্রাণি সংরক্ষণ আইন সংশোধন করে শিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় হরিণ নিধন চলতেই থাকবে।