# সাড়ে তিন মাস মাছ ধরা বন্ধ

রঞ্জু আহমদ ঃ দীর্ঘদিন মাছ ধরা বন্ধ, অন্যদিকে চলছে লকডাউন। এমন পরিস্থিতিতে চরম বিপাকে পড়েছে সুন্দরবন নির্ভরশীল জেলেরা। তাদের অনেক পরিবার আর্থিক সংকটে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাই আরও এক মাস মাছ ধরা এভাবে বন্ধ রাখলে খাদ্য সহায়তার দাবি তুলেছেন তারা।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ইলিশ প্রজনন মৌসুমে সাগরে গত ২০ মে থেকে মাছ ধরা বন্ধের ঘোষনা দেয় মৎস অধিদপ্তর। একই সাথে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে নদী খাল থেকে মাছ ধরা বন্ধ রাখতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বন বিভাগও। ফলে ওই সময় থেকেই সুন্দরবনে মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা মেয়াদ শেষ হওয়ায় সাগরে মাছ ধরা পুনরায় শুরু হয়েছে। এরমধ্যে জুলাই-আগস্ট মাস সুন্দরবন অভ্যন্তরের নদী খালে মাছের প্রজনন মৌসুম হওয়ায় ১ জুলাই থেকে আলাদা করে শুধু সুন্দরবনে মাছ ধরা ফের বন্ধের ঘোষনা দেয় বন বিভাগ। অর্থ্যাৎ মে মাস থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন মাস মাছ ধরতে পারছে না জেলেরা। এত লম্বা সময় আয়ের পথ বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছে খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার প্রায় ১০ লাখ মানুষ।
কয়রা উপজেলার জেলে আল আমিন জানান, বছরের সাড়ে তিন-চার মাস সরকারি ভাবে মাছ ধরা বন্ধ থাকে। আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঝড় বন্যা জলোচ্ছাসের কারণে মার্চ ও মে মাস বন্ধ রাখতে হয়। সবমিলিয়ে ৬ মাস মাছ ধরতে পারে জেলেরা। বাকি ৬ মাস বসে বসে কাটাতে হয়। সরকারি কোন সহায়তাও আমরা পাই না। পরিবার চালানো দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শ্যামনগর উপজেলার জেলে টুটুল বলেন, ইলিশের কারণে ৬৫দিন বন্ধ আবার শুধু সুন্দরবনের জন্য ৬০ দিন বন্ধ। দীর্ঘদিন মাছ ধরা বন্ধ থাকায় খেয়ে না খেয়ে জীবন যাচ্ছে।
দাকোপ এলাকার জেলে সোহাগ বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে বাইরেও কোন কাজকর্ম নেই। এবছর তিন মাস মাছ ধরা বন্ধ। ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোন মতে দিন পার করছি। শীঘ্রই সুন্দরবনে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।
বন বিভাগের সূত্র আরও জানিয়েছে, সুন্দরবনের মৎস্য সম্পদ রক্ষায় ইন্টিগ্রেটেড রিসোর্সেস ম্যানেজমেন্ট প্লানস এর (আইআরএমপি) সুপারিশ অনুযায়ী ২০১৯ সালে এ সিদ্ধান্ত নেয় বন বিভাগ। সুন্দরবনে জুলাই-আগস্ট দুই মাস মৎস্য প্রজনন ঘটে থাকে। এ বিভাগে অন্ততঃ ১০ লাখ মানুষ সুন্দরবেনর ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে নির্ভরশীল।
পশ্চিম সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের ৩ হাজার ১শ’ বোট লাইসেন্স সার্টিফিকেটধারী (বিএলসি) জেলে রয়েছে। আর সাতক্ষীরা রেঞ্জে রয়েছে ২৯ শ’। একটি বিএলসির বিপরীতে অন্ততঃ চার জন জেলে পাশ নিয়ে থাকে মাছ ধরার জন্য। দুই রেঞ্জ মিলিয়ে শুধু মাছ ধরা সাথে পশ্চিম বিভাগে ৭০ হাজার জেলে জড়িত। এছাড়াও কাঁকড়া ধরা ও মধু আহরন কাজের সাথে অন্ততঃ ৫০ হাজার মানুষ জড়িত। এসব কাজে খুলনা ও সাতক্ষীরা উপকূলের প্রায় ১০ লাখ মানুষ সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল। দীর্ঘদিন ধরেই সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় এসব পরিবার অনেকটা অসহায় ভাবে জীবন যাপন করছে।
সুন্দরবন খুলনা রেঞ্জের সহকারি বন কর্মকর্তা আবু সালেহ বলেন, সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মৎস্য বিভাগ। সেই সময় সুন্দরবনেও মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এ দপ্তর। তবে জুলাই এবং আগস্ট মাসে সুন্দরবনে মাছ ধরার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বন বিভাগ। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এই সময়টা সুন্দরবনের নদী খালে মাছের প্রজনন ঘটে। বছরের বাকি সময় যাতে জেলেরা মাছ ধরতে পারে এজন্য এসময়টা মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এতে জেলেদেরই ভালো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সুন্দরবনের ওপর যেসব জেলে নির্ভরশীল তাদের সরকারি সহায়তা প্রদানে বন বিভাগ থেকে সুপারিশ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তালিকা প্রণয়নের কাজ শেষ হলে এ সুপারিশ পাঠানো হবে।
নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে ড. আবু নাসের মহসিন হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, প্রজনন মৌসুমের কারণে মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে। জেলেদের আর্থিক সহায়তা করে থাকে মৎস্য বিভাগ। জেলে কার্ডধারীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সকল জেলেদেরই সহায়তা দেওয়া হবে।