/ স্থাপনায় ত্রুটির কারণে নতুন কারাগারের হস্তান্তরে বিলম্ব

স্থাপনায় ত্রুটির কারণে নতুন কারাগারের হস্তান্তরে বিলম্ব

নিম্নমানের কাজের অভিযোগ

এ এইচ হিমালয় : দীর্ঘদিন পর খুলনার নতুন কারাগারের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু বুঝে নেওয়ার সময় বিভিন্ন স্থাপনায় ত্রুটি ধরা পড়ছে। বিশেষ করে নতুন ভবনের পলেস্তারা খসে পড়া, রঙ উঠে যাওয়া এবং নিম্ন উপকরণ ব্যবহার দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। এছাড়া মাটি ভরাটের কাজ এখনও শেষ না হওয়া এবং আগাছা পরিষ্কার না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। দ্রুত এসব কাজ শেষ করতে গণপূর্ত বিভাগকে কয়েকবার চিঠিও দিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দুই হাজার বন্দি ধারণক্ষমতার ‘খুলনা জেলা কারাগার নির্মাণ’ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায় ২০১১ সালে। শুরুতে প্রকল্প ব্যয় ছিল ১৪৪ কোটি টাকা। লক্ষ্য ছিল ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করা। কিন্তু স্থান পরিবর্তন, জমি অধিগ্রহণ জটিলতাসহ নানা কারণে তা সম্ভব হয়নি। ২০১৭ সালের ৬ জুন প্রকল্পটি প্রথম দফা সংশোধন করা হয়। ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৫১ কোটি টাকায়। এবার লক্ষ্য নেওয়া হয় ২০১৯ সালের ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার। এবারও লক্ষ্য অর্জন হয়নি। এর পর তিন দফায় তিন বছর সময় বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ গত মে মাসে প্রকল্প সংশোধন করা হয়েছে। এতে ব্যয় বেড়ে হয় ২৮৮ কোটি টাকা। কাজ শেষ করার নতুন সময় ২০২৩ সালের ৩০ জুন। কিন্তু তারপরও কাজ শেষ হয়নি। সর্বশেষ সময় বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। তবে কারাগারের অনেক কাজ এখনও অসমাপ্ত অবস্থায় রয়েছে।

সূত্রটি জানায়, গত ২৫ মে গণপূর্ত বিভাগের কাছ থেকে নতুন কারাগারটির বুঝে নেওয়ার কথা ছিল কারা কর্তৃপক্ষের। কিছু কাজ অসম্পূর্ণ থাকায় ওইদিন হস্তান্তর হয়নি। এরপর প্রতিবার পরিদর্শনে নতুন নতুন ত্রুটি ধরা পড়েছে। যার কারণে প্রতিবারই হস্তান্তর প্রক্রিয়া পেচাচ্ছে। তবে আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যেই সেখানে বন্দি হস্তান্তরর করা হবে বলে জানা গেছে। যার কারণে ত্রুটি থাকা সত্বেও ভবনগুলো বুঝে নেওয়া শুরু করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। এ পর্যন্ত ১৭টি স্থাপনা বুঝে নিয়েছে তারা।

সরেজমিন পরিদর্শন এবং পরিদর্শনে যাওয়া একাধিক কর্মকর্তা জানান, দীর্ঘদিন আগে নির্মিত অধিকাংশ ভবনের পলেস্তারা খসে পড়েছে। রঙ জলে গেছে। লোহার গ্রিল, দরজা রঙ করলেও কিছু কিছু জায়গায় মরিচা দেখা গেছে। বিশেষ করে কারাগারের সীমানা প্রাচীর ও পেরিমিটার ওয়াল লবণাক্ততা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেতরের হাসপাতাল, স্কুল, প্রশাসনিক ভবনের অনেক ফিটিং মানহীন বলে মন্তব্য তাদের।

তবে খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আমি যোগদানেরও অনেক বছর আগে বেশিরভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ভেতরের কোনো কোনো ভবনের কাজ ৬/৭ বছর আগে শেষ হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই পড়েছিল স্থাপনাগুলো। এজন্য লবণাক্ততার কারণে দু’এক জায়গায় পলেস্তারা উঠে গেছে। তবে আমরা সবকিছু সংস্কার করে দিয়েছে। এখন কোথাও কোনো ত্রুটি নেই। কারা কর্তৃপক্ষ ভবন বুঝে নিতে শুরু করেছে। কোনো সমস্যা ধরা পড়লে সঙ্গে সঙ্গে আমরা মেরামত করে দিচ্ছি।

খুলনার জেল সুপার মো. নাসির উদ্দিন প্রধান বলেন, আমরা শুধু স্থাপনা, লাইট, ফ্যান এগুলো দেখে গুনে নিচ্ছি। কাজের মান যাচাইয়ের অভিজ্ঞতা আমাদের নেই। মাটি ভরাট ও আগাছা পরিষ্কারের কাজ বাকি থাকায় সেগুলো দ্রুত শেষ করতে বলেছি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯১২ সালে নগরীর ভৈরব নদীর তীরে নির্মাণ করা হয় খুলনার প্রথম কারাগার। সেখানে বন্দি ধারণ ক্ষমতা ৬৭৮ জনের। গতকাল রবিবার সেখানে বন্দি ছিল ১ হাজার ৪১২ জন। ১১৩ বছরের পুরাতন কারাগারটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এই কারণেই নতুন কারাগার নির্মাণ করে সরকার।

গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রাশিদুল ইসলাম জানান, কারাগারের ভেতরে পুরুষ, নারী ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের পৃথক ব্যারাক রয়েছে। এর বাইরে কিশোর, শ্রেণিপ্রাপ্ত বন্দিদের জন্য পৃথক ভবন, ফাঁসির মঞ্চ, নারীদের ডে কেয়ার সেন্টার, পৃথক ওয়ার্ক সেড ও বিনোদন কেন্দ্র, ৪টি রান্না ঘর, পুরুষদের মোটিভেশন সেন্টার, জেল লাইব্র্রেরি, স্কুল ও হাসপাতাল রয়েছে। এছাড়া পুরুষ ও নারী কারারক্ষীদের জন্য একাধিক কোয়াটার, প্রশাসনিক ভবন, সেলুন, লন্ড্রিসহ ৫৭টি স্থাপনা রয়েছে।
প্রকল্প অফিস থেকে জানা যায়, নতুন এ কারাগার নির্মাণ হচ্ছে সংশোধনাগার হিসেবে। এখানে বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের পৃথক স্থানে রাখা হবে। কিশোর ও কিশোরী বন্দিদের জন্য রয়েছে পৃথক ব্যারাক। নারীদের জন্য পৃথক হাসপাতাল, মোটিভেশন সেন্টার ও ওয়ার্কশেড আছে। একইভাবে বন্দিদের জন্য ৫০ শয্যার হাসপাতাল থাকবে।
আরও থাকবে কারারক্ষীদের সন্তানদের জন্য স্কুল, বিশাল লাইব্রেরি, ডাইনিং রুম, আধুনিক সেলুন ও লন্ড্রি। কারাগারে শিশুসন্তানসহ নারী বন্দিদের জন্য থাকবে পৃথক ওয়ার্ড ও ডে-কেয়ার সেন্টার। এ ওয়ার্ডটিতে সাধারণ নারী বন্দি থাকতে পারবেন না। সেখানে শিশুদের জন্য লেখাপড়া, খেলাধুলা, বিনোদন ও সংস্কৃতিচর্চার ব্যবস্থা থাকবে। কারাগারে পুরুষ ও নারী বন্দিদের হস্তশিল্পের কাজের জন্য আলাদা আলাদা ওয়ার্কশেড, বিনোদন কেন্দ্র ও নামাজের ঘর থাকবে।