শোবিজ জগতের পরিচিত মুখ অ্যানি খান। অভিনয় থেকে বিদায় নিয়ে তিনি এখন ধর্ম-কর্মে মনোনিবেশ করছেন। তারই অংশ হিসেবে স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসার সংক্রান্ত নিজের পছন্দের ১০টি হাদিস সংগ্রহ করেছেন তিনি।

ফেসবুকে তিনি লিখেন, ‘আমার খুব খুব খুব পছন্দের ১০টা হাদিস কালেক্ট করলাম…। যখনই পড়ি হাদিসগুলো আমি যেনো কল্পনায় সেই দুইজনকে দেখতে পাই। তাদের দুইজনের ভালোবাসা অতুলনীয়। কতটা ভালোবাসা নিয়ে একই যায়গা থেকে পানি পান করেন, ঝুটা হাড্ডি চিবিয়ে নেন, মিসওয়াক চিবিয়ে দেন।’

অ্যানি খান লিখেন, ‘নবিজির মৃত্যুর সময়ের ঘটনা যখন আয়েশা (রা.) বর্ণনা করছিলেন, চোখে পানি ধরে রাখতে পারছিলাম না, উনার কষ্টটা জেনো খুব ফিল করছিলাম। খুব কম বয়সে উনি উনার হাবিবকে হারিয়েছেন, উনি প্রতিটা মুহূর্ত কতটা মিস করতেন নবীজীকে? নবীজীর অন্তিম মুহূর্তের কথা ভেবে উনার খুব কান্না আসত না? নবীজী কতটা ভালবাসতেন আয়েশাকে (রা.) ভরা মজলিসে যখন জিজ্ঞেস করা হল উনার সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি কে? উনি বললেন আয়েশা! এই হাদিসের দারসের দিন ম্যাম খুব হেসে বলছিলেন আজকাল কার জামাইরা তো মারাত্মক আয়েব আর কাপুরুষতা মনে করে এই কথা কাউকে বলতে যে আমি আমার বউকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসি!!! অথচ এই শ্রেষ্ঠ মানব একটুও আয়েব মনে করেননি। উনাদের ভালোবাসা প্রত্যেক জন্য শিক্ষণীয় ও আদর্শ।’

যে হাদিসগুলো অ্যানি খান ফেসবুকে দিয়েছেন:

‘আম্‌র ইব্‌নু ‘আস (রা.) বর্ণনা করেছেন তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, মানুষের মধ্যে কে আপনার নিকট সবচেয়ে প্রিয়? তিনি বললেন, ‘আয়িশাহ্! আমি বললাম, পুরুষদের মধ্যে কে? তিনি বললেন, তাঁর পিতা (আবূ বাক্‌র)। আমি জিজ্ঞেস করলাম, অতঃপর কোন লোকটি? তিনি বললেন, ‘উমার ইব্‌নু খাত্তাব অতঃপর আরো কয়েকজনের নাম করলেন।

(সহিহ বুখারী-৩৬৬২)

‘আয়িশা (রা.) বর্ণনা করেছেন তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কোলে হেলান দিয়ে কুরআন তিলাওয়াত করতেন।

(সহিহ বুখারী-২৯৭)

‘আয়িশা (রা.) বর্ণনা করেছেন তিনি বলেন, আমি ও নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই পাত্র হতে গোসল করতাম।সেই পাত্রকে ফারাক বলা হতো। (সহিহ বুখারী- ২৫০)

‘আয়িশাহ (রা.) বর্ণনা করেছেন রসূলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ই’তিকাফ করতেন তখন আমার দিকে তাঁর মাথা ঝুঁকিয়ে দিতেন। আমি তা আঁচড়ে দিতাম। (সহিহ মুসলিম-৫৭১)

‘আয়িশাহ (রা.) বর্ণনা করেছেন তিনি বলেন, আমি ঋতুবতী অবস্থায় পানি পান করতাম এবং পরে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে অবশিষ্টটুকু প্রদান করলে আমি যেখানে মুখ লাগিয়ে পান করতাম তিনিও পাত্রের সে স্থানে মুখ লাগিয়ে পান করতেন। আবার আমি ঋতুবতী অবস্থায় হাড় খেয়ে তা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দিলে আমি যেখানে মুখ লাগিয়েছিলাম তিনি সেখানে মুখ লাগিয়ে খেতেন। (সহিহ মুসলিম- ৫৭৯)

আয়িশাহ (রা.) বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সামনেই আমি পুতুল বানিয়ে খেলতাম। আমার বান্ধবীরাও আমার সাথে খেলা করত। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘরে প্রবেশ করলে তারা দৌড়ে পালাত। তখন তিনি তাদের ডেকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিতেন এবং তারা আমার সঙ্গে খেলত। (সহিহ বুখারী- ৬১৩০)

‘আয়িশাহ (রা.) বর্ণনা করেছেন তিনি এক সফরে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ছিলেন। তিনি বলেন, আমি তাঁর সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা করে তার আগে চলে গেলাম। অতঃপর আমি মোটা হয়ে যাওয়ার পর তার সাথে আবারো দৌড় প্রতিযোগিতা করলাম, এবার তিনি আমাকে পিছে ফেলে দিলেন বিজয়ী হলেন। তিনি বলেন, এই বিজয় সেই বিজয়ের বদলা। (সুনানে আবু দাউদ- ২৫৭৮)

‘আয়িশা (রা.) বর্ণনা করেছেন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে আড়াল করে দাঁড়িয়ে ছিলেন আর আমি হাবশীদের খেলা দেখছিলাম। মসজিদের কাছে তারা যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে খেলা করছিল। (সহিহ বুখারী- ৩৫৩০)

‘আয়িশাহ (রা.) বর্ণনা করেছেন তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিসওয়াক করে তা ধোয়ার জন্য আমাকে দিতেন। আমি নিজে প্রথমে তা দিয়ে মিসওয়াক করতাম, অতঃপর সেটা ধুয়ে তাঁকে দিতাম। (সুনানে আবু দাউদ- ৫২)

১০

‘আয়িশাহ (রা.) বর্ণনা করেছেন মৃত্যু রোগকালীন অবস্থায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করতেন, আমি আগামীকাল কার ঘরে থাকব। আগামীকাল কার ঘরে? এর দ্বারা তিনি ‘আয়িশাহ (রা.)-এর ঘরের পালার ইচ্ছা পোষণ করতেন। সহধর্মিণীগণ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে যার ঘরে ইচ্ছা অবস্থান করার অনুমতি দিলেন। তখন নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর ঘরে ছিলেন। এমনকি তার ঘরেই তিনি ইন্তিকাল করেন।

‘আয়িশাহ (রা.) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার জন্য নির্ধারিত পালার দিন আমার ঘরে ইন্তিকাল করেন এবং আল্লাহ তার রূহ কবজ করেন এ অবস্থায় যে, তাঁর মাথা আমার গণ্ড ও সীনার মধ্যে ছিল এবং আমার থুথু (তার থুথুর সঙ্গে) মিশ্রিত হয়ে যায়। তারপর তিনি বলেন, ‘এ সময় ‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ বকর (রা.) আমার নিকট প্রবেশ করে এবং তার হাতে মিসওয়াক ছিল। আর আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে (আমার বুকে) হেলান অবস্থায় রেখেছিলাম। আমি লক্ষ্য করলাম যে, তিনি ‘আবদুর রহমানের দিকে তাকাচ্ছেন। আমি বুঝলাম যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিসওয়াক চাচ্ছেন। আমি তখন জিজ্ঞেস করলাম, আমি কি আপনার জন্য মিসওয়াক নিব? তিনি মাথা নাড়িয়ে জানালেন যে, হ্যাঁ। তখন আমি মিসওয়াকটি নিলাম। কিন্তু মিসওয়াক ছিল তার জন্য শক্ত, তাই আমি জিজ্ঞেস করলাম, আমি কি এটি আপনার জন্য নরম করে দিব? তখন তিনি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললেন। তখন আমি তা চিবিয়ে নরম করে দিলাম। এরপর তিনি ভালভাবে মিসওয়াক করলেন। তাঁর সম্মুখে পাত্র অথবা পেয়ালা ছিল (রাবী ‘উমারের সন্দেহ) তাতে পানি ছিল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় হস্তদ্বয় পানির মধ্যে প্রবেশ করিয়ে তার দ্বারা তাঁর চেহারা মুছতে লাগলেন। তিনি বলছিলেন…….-আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই, সত্যিই মৃত্যু-যন্ত্রণা কঠিন। তারপর দুহাত উপরের দিকে উঠিয়ে বলছিলেন, আমি উচ্চে সমাসীন বন্ধুর সঙ্গে (মিলিত হতে চাই)। এ অবস্থায় তার ইন্তিকাল হল আর হাত শিথিল হয়ে গেল। (সহিহ বুখারী- ৪৪৪৯)