খুলনায় গণশুনানীতে দুদক কমিশনার আজিজী
দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক) আয়োজিত গণশুনানীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী বলেছেন, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে শীঘ্রই খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। হাসপাতালে সেবা গ্রহীতাদের অভিযোগ দিতে প্রকাশ্যে মোবাইল নম্বর দেওয়া হবে। যাতে সেবা প্রত্যাশীরা সহজেই অভিযোগ জানাতে পারেন। ঘুষ বাণিজ্য বন্ধের আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, টাকা দিয়ে চাকরী নিলে স্টেশনেতো টোল আদায় করবেই। তিনি ঈমানদারীর সাথে সরকারি চাকরীজীবীদের দায়িত্ব পালনের আহবান জানিয়ে বলেন, জনগণের দেয়া ট্যাক্সের টাকায় সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন হয়। যাদের টাকায় আমাদের বেতন হয়, আমরাই আবার তাদের প্রভু সেজে যাই। এগুলো বন্ধ করতে হবে।
সরকারি দপ্তরসমূহে সেবাবঞ্চিত ও হয়রানির শিকার নাগরিকদের অভিযোগ বিষয়ে সরাসরি এ গণশুনানি গতকাল রবিবার সকালে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।
গণশুনানীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহসান ফরিদ।
খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত জানান দুদকের খুলনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মোঃ আবদুল ওয়াদুদ। এসময় বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ফিরোজ সরকার, দুদকের মহাপরিচালক(প্রতিরোধ) মোঃ আক্তার হোসেন, পুলিশের খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি মোঃ রেজাউল হক, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ জুলফিকার আলী হায়দার ও পুলিশ সুপার টি এম মোশাররফ হোসেন বক্তৃতা করেন।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী আরও বলেন, যে সৃষ্টিকর্তাকে ভয় করে, সে জ্ঞানত অন্যায় করতে পারে না। কমিশনার বলেন, আমরা নিজ নিজ অবস্থানে প্রত্যেকেই বিচারক। যদি আমরা আমাদের পরিবারে নিজের আয়ের চেয়ে বেশি উপহার বা তৈজষপত্র দেই তবে সন্তানদের সামনে কিভাবে জবাবদিহি করবো। আমরা নিজে সৎ থাকবো এবং পরিবারবর্গকে সৎপথে রাখবো।
তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তোমরা হতাশ হবেনা। পরিবারকে যেমন সেবা করতে হবে, তেমনি লব্ধজ্ঞান প্রজাতন্ত্রের কাজে ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে উদ্যোক্তা হতে হবে’।
সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই দুর্নীতি বন্ধে প্রতিশ্রæতি দিচ্ছি, একই সাথে মানসম্মত সেবা প্রদানের নিশ্চয়তাও দিতে হবে’।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় দুদকের মহাপরিচালক(প্রতিরোধ) মোঃ আক্তার হোসেন এক বছরের মধ্যে খুলনাকে ঘুষমুক্ত ঘোষণার আহবান জানালে সভাপতির বক্তৃতায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, ‘এক বছর নয়, আগামী এক মাসের মধ্যেই খুলনাকে ঘুষমুক্ত করা হবে ইনশাআল্লাহ’।
উল্লেখ্য, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারুণ্যের একতা, গড়বো আগামীর শুদ্ধতা’ এই শ্লোগান নিয়ে খুলনা মহানগরে সেবা বঞ্চিত ও হয়রানির শিকার নাগরিকদের অভিযোগ সরাসরি শুনতেই এ গণশুনানীর আয়োজন করে দুদক। বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে সেবা পেতে ঘুষ, দুর্নীতি, হয়রানির শিকার ব্যক্তিরা অনুষ্ঠানে তাদের অভিযোগ তুলে ধরেন।
এসময় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ডাচবাংলা ব্যাংক, পরিবেশ অধিদপ্তর, জেনাল সেটেলমেন্ট অফিস, বন বিভাগ, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, নির্বাচন অফিস, বিআরটিএ, খুলনা সদর সাব রেজিষ্ট্রি অফিস, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, খুলনা ওয়াসা, জেলা পুলিশসহ বিভিন্ন দপ্তর সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়। এসময় কিছু তাৎক্ষনিক সমাধান করা হয় এবং কিছু খারিজ করার পাশাপাশি কিছু অভিযোগ আমলে নিয়ে দুদককে তদন্তের নির্দেশ দেন দুদকের এই কমিশনার।