এ এইচ হিমালয় ঃ খুলনার শেরে বাংলা সড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয় ২০১৯ সালের ২৭ আগস্ট। এরপরই সড়কের দুইপাশে থাকা প্রায় শতাধিক বিদ্যুতিক খুঁটি স্থানান্তরের জন্য ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিকে (ওজোপাডিকো) চিঠি দেয় সড়ক বিভাগ।
করোনা প্রাদুর্ভাব কমে আসায় ২০২০ সালের অক্টোবর মাস থেকে সড়কের কাজ শুরু হয়। এর আগে খুঁটি অপসারণের আরও দুই দফায় চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু কাজ শুরুর ৫ মাসেও সেই খুঁটি স্থানান্তর হয়নি। ফলে সড়কের পাশে খুঁটি রেখেই কাজ করে যাচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে কাজে সময় লাগছে বেশি। কাজে গতি কম থাকায় নগরবাসীরও দুর্ভোগ বাড়ছে। খুঁটির স্থানে ভবিষ্যতে সড়কের স্থায়িত্বও হুমকিতে পড়বে।
এদিকে সড়ক পুনর্নির্মাণের প্রথম ধাপের সাব বেজের নির্মাণ উপকরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা। সড়কের প্রথম ধাপে এক মিটার বালু ভরাটের পরে প্রথম ধাপের সাববেজ দেওয়া হচ্ছে। সেখানে বালুর সঙ্গে নতুন ও পুরাতন খোয়ার মিশ্রন একসঙ্গে দেওয়ার কথা থাকলেও পুরোটাই পুরাতন খোয়া দেওয়া হচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
সড়ক বিভাগ থেকে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় নগরীর ময়লাপোতা মোড় থেকে জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত সড়কটি ৪ লেনে উন্নীত করা হবে। এজন্য ২০২০ সালের ৮ এপ্রিল ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দিয়েছে সড়ক বিভাগ। কার্যাদেশ মূল্য ধরা হয়েছে ৮০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। চুক্তি অনুযায়ী ৪ কিলোমিটার সড়ক পুনর্নির্মাণ, ৫টি বক্স কালভার্ট এবং ৮ কিলোমিটার কনক্রিটের ড্রেন নির্মাণ করতে হবে। ২০২২ সালের ৭ এপ্রিলের মধ্যে ঠিকাদারকে কাজ শেষ করতে হবে।
সূত্রটি জানায়, বর্তমান শেরে বাংলা সড়কটির গড় প্রশস্ততা ৭ দশমিক ৩ মিটার। প্রকল্পের আওতায় প্রশস্ততা ১৮ দশমিক ৬ মিটারে উন্নীত করা হবে। সড়কের মাঝখানে ১ দশমিক ২ মিটার ডিভাইডার হবে। অর্থাৎ দুই পাশেই সড়ক গড়ে প্রায় ৪ মিটার করে প্রশস্ত হবে।
সড়ক বিভাগের প্রকৌশলীরা জানান, সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পের মূল চ্যালেঞ্জ ছিলো দুইপাশের ২২৮টি অবৈধ স্থাপনা অপসারণ এবং সময়মতো বৈদ্যুদিক খুঁটি স্থানান্তর। খুলনা সিটি করপোরেশন, কেডিএ ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় গত ১৭ জানুয়ারি থেকে অবৈধ স্থাপনা অপসারণের কাজ শুরু হয়। জানুয়ারি মাসের ভেতরেই সড়কের দুই পাশে অসংখ্য বহুতল ভবনের বর্ধিত অংশ ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু খুঁটি স্থানান্তরের বিষয়ে অগ্রগতি হয়নি।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, জিরোপয়েন্ট থেকে গল্লামারী পর্যন্ত সড়কের প্রথম ধাপের কাজ (সাববেজ) শেষ। গল্লামারী থেকে নিরালার দিকে কাজ চলছে। বড় খনন যন্ত্র (স্কেভেটর) দিয়ে পুরাতন সড়ক, নিচের খোয়া, পুরাতন ইট ও মাটি তুলে নিয়ে যাচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরে সেখানে বালু ফেলা হচ্ছে। এরপর সাববেজ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অসংখ্য বিদ্যুতের খুঁটি। বর্তমানে খুঁটি রেখেই সড়কের কাজ চলছে। দেখা গেছে, প্রথম ধাপে সড়ক প্রায় এক মিটার খুঁড়ে সেখানে বালু দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। কিন্তু খুঁটির স্থানে প্রায় দুই মিটার ব্যাসার্ধের জায়গা ফাঁকা রেখে চারপাশ খুঁড়ে বালু ভরাট করা হচ্ছে।
সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আনোয়ার পারভেজ বলেন, ভবিষ্যতে খুঁটি স্থানান্তরের সময় ওই স্থান আবারও খুঁড়তে হবে। এতে সড়কের স্থায়িত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়া খুঁটির কারণে সড়কের কাজ কাক্সিক্ষত গতিতে এগোচ্ছে না। এজন্য কাজ শুরুর আগে দুই দফা ওজোপাডিকোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি তারা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প ব্যবস্থাপক আশরাফ আলী বলেন, বৈদ্যুতিক খুঁটির কারণে কাজ এগোচ্ছে না। যশোর রোডে আমরা একদিনে ১৫০ মিটার কাজ করেছি। কিন্তু এখানে ৫০/৬০ মিটারের বেশি কাজ করা যাচ্ছে না। এতে আমাদের আনুষঙ্গিক খরচ বেড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, পরে খুঁটি সরালে ওই স্থানে আমাদের আবারও কাজ করতে হবে। এতে এক কাজ দুইবার করতে খরচ বাড়বে। খুঁটি অপসারণের জন্য আমরা দুই দফা সড়ক বিভাগকে চিঠি দিয়েছি।
॥ সাববেজের নির্মাণ উপকরণ নিয়ে প্রশ্ন ॥
সড়কের কাজে প্রথম ধাপে একমিটার করে বালু ফেলার কথা রয়েছে। এরপর বালুর সঙ্গে নতুন ও পুরাতন খোয়া মিলিয়ে দেওয়া হবে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়ক খুঁড়ে পুরাতন খোয়া তুলে সেগুলোই বালুর সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে। নতুন কোনো খোয়া মেশানো হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে সড়ক বিভাগ খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান মাসুদ বলেন, চুক্তি অনুযায়ী এখন সাববেজে বালুর সঙ্গে নতুন ও পুরাতন খোয়া দেওয়ার কথা। নির্মাণ কাজ আমরা নিয়মিত তদারকি করেছি। ইতোপূর্বে ৩টি ট্রাক ইট-বালুর মিশ্রন ফেরত পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রকল্প পাশের আগে একবার এবং পরে দুই বার ওজোপাডিকোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। নিয়মিত ফোনে যোগাযোগ করা হচ্ছে। কিন্তু একবছরেও তারা খুঁটি সরায়নি। তিনি বলেন, সড়কের কাজ ফেলে রাখা যাচ্ছে না। বাধ্য হয়েই খুঁটি রেখে কাজ করতে হচ্ছে। পরে খুঁটি সরালে ওইসব স্থানে কাজ করা হবে।
এ ব্যাপারে ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) নির্বাহী পরিচালক (প্রকৌশল) মোঃ আবু হাসান বলেন, বিদ্যুতের খুঁটি স্থানান্তরের জন্য খরচের একটি প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। এটি ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলে সড়ক বিভাগকে টাকা জমা দিতে বলা হবে। তারা টাকা দিলে দরপত্র হবে। দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ হতে ৫৭ দিন সময় লাগবে। এরপর খুঁটি সরানো হবে।