যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন কক্ষে এক জরুরি বৈঠক করেছেন। ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট স্থায়ী এ বৈঠকে আলোচনার মূল বিষয় ছিল একান্ত মিত্র ইসরায়েলের সঙ্গে মিলে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় দেশটি হামলা চালাবে কি না সেটি।
মার্কিন গণমাধ্যম সিবিএস নিউজ এ তথ্য জানিয়েছে।
ইরানে হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ করা নিয়ে বৈঠকে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের মধ্যে পুরোপুরি মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি বলে জানা গেছে।
কয়েক দিন ধরে ট্রাম্প ইরানকে আলোচনায় ফেরার আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন। এর মধ্যেই দেশটির সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়াবে কি না, সে বিষয়ে বিবেচনা শুরু করেন তিনি।
এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের অনুষ্ঠিত বৈঠকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে আলোচনা হয় বলে জানিয়েছে সিবিএস।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য হামলার লক্ষ্যবস্তুগুলোর একটি হিসেবে ইরানের ফোরদো শহরে অবস্থিত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রের নাম উঠে আসে। এটি ভূগর্ভে অবস্থিত, যা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশেষ ধরনের বোমাই ধ্বংস করতে সক্ষম বলে মনে করা হয়।
সিবিএসের খবর অনুযায়ী, ওই হামলার বিষয়ে ট্রাম্পের উপদেষ্টাদের মধ্যে ঐকমত্য হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানায়, বৈঠক শেষে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন ট্রাম্প। তবে কী নিয়ে তাঁদের কথা হয়েছে, তা জানা যায়নি।
এদিকে গত ৩ দিনে অন্তত ৩০টি মার্কিন সামরিক ট্যাংকার বিমান—যেগুলো আকাশে যুদ্ধবিমান ও বোমারু বিমানে জ্বালানি সরবরাহ করে—ইউরোপে পাঠানো হয়েছে।
গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একাধিক পোস্টে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’ দাবি করেন।
এর জবাবে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিও রাতেই একাধিক পোস্টে জানিয়ে দেন, ‘জায়োনিস্টদের সঙ্গে কোনো আপস নয়। ইরান কখনোই সমঝোতা করবে না।’
এরই মধ্যে গতকাল পর্যন্ত পাঁচ দিনে ইরানের সেনাপ্রধান , আইআরজিসির প্রধানসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েল। ইরানের কয়েকজন পরমাণুবিজ্ঞানীকেও হত্যা করা হয়েছে। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনা। দেশটির আরও ১০টি পারমাণবিক লক্ষ্যবস্তু ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ।
আয়াতুল্লাহ খামেনিকেও হত্যার হুমকি দিয়েছেন কাৎজ। তিনি বলেছেন, ‘ইরানের প্রতিবেশী দেশের স্বৈরশাসকের সঙ্গে কী হয়েছিল, তা স্মরণ করতে পারেন খামেনি।’ এ স্বৈরশাসক বলতে ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট নিহত সাদ্দাম হোসেনের দিকে ইঙ্গিত করেছেন তিনি।
উল্লেখ্য, কয়েক মাস ধরে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। গাজা, লেবানন ও সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। অন্যদিকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘পাল্টা হামলার’ হুমকি দিয়ে আসছিল ইরান। এর মধ্যে ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম নিয়েও পশ্চিমা দেশগুলোর উদ্বেগ বেড়ে যায়।
২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে বিশ্বশক্তিগুলোর সই হওয়া পারমাণবিক চুক্তি থেকে ট্রাম্প প্রশাসনের সময় (২০১৮ সাল) একতরফাভাবে সরে আসে যুক্তরাষ্ট্র। এর পর থেকেই ইরান তার আলোচিত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি জোরালো করতে থাকে। জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএর মতে, ইরান বর্তমানে এমন পর্যায়ে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির খুব কাছাকাছি পৌঁছেছে।
এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইরানে হামলা চালাবে কি না, তা ঘিরে উদ্বেগ ও জল্পনা–কল্পনা তৈরি হয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।