বাংলাদেশে ব্যাংক জালিয়াতি করে প্রশান্ত কুমার ওরফে পি কে হালদার ও তার সঙ্গীরা কমপক্ষে ১০ হাজার কোটি টাকা লেপাত করেছেন বলে এক বিবৃতিতে দাবি করেছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। শুধু তাই নয়, তারা প্রতারণা করে ভারতীয় নথি তৈরি করে পশ্চিমবঙ্গে একাধিক সংস্থাও খুলেছেন। সেসব সংস্থা ভারতের কোথাও কোনো প্রতারণা করেছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এদিকে দ্বিতীয় দফার জেরার সূত্র ধরে তল্লাশি চালিয়ে পি কের তিনটি পাসপোর্ট উদ্ধার করেছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। বাংলাদেশ ও ভারত ছাড়াও তার কাছ থেকে গ্রানাডার একটি পাসপোর্ট পাওয়া গেছে। এটি বৈধ কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট ও বিদেশে পাচারের অভিযোগে গত শনিবার পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদারকে পাঁচ সঙ্গীসহ গ্রেফতার করে ইডি। বর্তমানে সেখানে তাদের দ্বিতীয় দফা রিমান্ড চলছে।প্রথম দফা রিমান্ডে মুখ না খুললেও গত মঙ্গলবার আদালতে তোলার সময় পি কের দেখা হয় বান্ধবী আমানা সুলতানা ওরফে শর্মি হালদারের সঙ্গে। তখন তাকে বেশ হাসিখুশি দেখা যায়। তখনই তিনি জানতে পারেন আদালত শর্মিকে জেলে জেরার অনুমতি দিয়েছে। এর পরই পিকে একটু একটু করে মুখ খুলতে শুরু করেন। আলাদা আলাদা ঘরে জেরার সময় জানা যায়, পি কের তিন দেশের তিন পাসপোর্টের কথাও। পরে তল্লাশি চালিয়ে সেগুলো উদ্ধার করা হয়।ইডি জানিয়েছে, উদ্ধার পাসপোর্ট এবং অন্যান্য নথি থেকে জানা যাচ্ছে ভারতে তিনটি নামে পি কে তার কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেছেন। এগুলো হলো—প্রশান্ত কুমার হালদার, প্রশান্ত হালদার ও শিব শঙ্কর হালদার। নামগুলো ব্যবহার করে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট কিনেছেন বা দীর্ঘমেয়াদি লিজে ভাড়া নিয়েছেন। একইভাবে পি কের পাঁচ সঙ্গীও একাধিক জমি ও বাড়ি কিনেছেন। এরা হলেন—স্বপন মৈত্র ওরফে স্বপন মিস্ত্রি, উত্তম মৈত্র ওরফে উত্তম মিস্ত্রি, ইমাম হোসেন ওরফে ইমন হালদার, আমানা সুলতানা ওরফে শর্মি হালদার ও প্রাণেশ কুমার হালদার। দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে নেওয়ার পর জানা গেছে পি কের সঙ্গীদেরও একাধিক নাম রয়েছে। প্রাণেশ শুরুতে নিজেকে গণেশ বলে পরিচয় দিয়েছিলেন।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তদন্তকারী ইত্তেফাককে বলেন, ‘পি কে নিজেই যেন একটা আস্ত রহস্য। পেঁয়াজের খোসার মতো রহস্যের একটা খোসা ছাড়াতেই আরেকটা এসে হাজির হচ্ছে। প্রথমে একাধিক পাসপোর্টের কথা স্বীকার করেননি। যখন করলেন, তখন দেখা গেল একে বারে তিন, তিনটে পাসপোর্ট রয়েছে। আর এখানেই বেঁধেছে বিপত্তি। তার গ্রানাডার পাসপোর্ট যদি বৈধ হয়, সে ক্ষেত্রে বলতে হবে আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে একাধিক দেশের নাগরিক হয়ে বসে আছেন পি কে। সে ক্ষেত্রে আইনের কোন ধারায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হবে, তা পর্যালোচনা করে দেখতে হবে। আর পি কের সঙ্গীরা তার যোগ্য সহচর। তদন্ত বিপথে চালিত করতে ওস্তাদ।’