খুলনার অন্যতম ব্যস্ত সড়ক রূপসা ট্রাফিক মোড় থেকে খানজাহান আলী (রূপসা) সেতু পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার পথ যেন এক মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ ১৫ বছরেও সংস্কার না হওয়ায় বড় গর্ত, উঁচু-নিচু ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। অবশেষে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী রাজপথে নেমে এ পরিস্থিতির প্রতিবাদে শুক্রবার (২৫ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।
৩১ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামীর আয়োজনে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে এলাকার ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী নেতাসহ সহস্রাধিক মানুষ অংশ নেন। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য ও নগর সেক্রেটারি সাবেক কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল।
তিনি বলেন, “একটি সড়ক সংস্কারে যদি কেউ চাঁদা চায়, তাহলে এলাকাবাসীই তা প্রতিহত করবে ইনশাআল্লাহ। দ্রুত সংস্কার শুরু না হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণা দেব।”
এ সড়কে প্রতিদিন স্কুলগামী শিক্ষার্থী, গর্ভবতী নারী, কর্মজীবী মানুষ, শ্রমিক—সবার জন্য চলাচল রীতিমতো এক যুদ্ধ। বৃষ্টিতে ডুবে যাওয়া গর্তে যানবাহন উল্টে যায়, ঘটছে দুর্ঘটনা। স্থানীয়দের ভাষায়, “রাস্তায় গাড়ি নয়, যেন নৌকা লাগে।’’
চার বছর আগে ইজিবাইকের দুর্ঘটনায় এক গর্ভবতী নারীর গর্ভেই সন্তান মারা যাওয়ার ঘটনাও মানববন্ধনে উঠে আসে।
সড়কটি খুলনা সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত হলেও ২০১০ সালে চার লেনে উন্নয়নের জন্য প্রকল্প নেয় খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ)। প্রকল্পের নাম‘খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্প’।
২০১৩ সালে একনেক সভায় অনুমোদিত এই প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৫ সালে। বারবার মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে ২০২২ সালেও কাজ শেষ হয়নি। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৯৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫৯ কোটি ২১ লাখ টাকায়। তা-ও এখনও কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।
সিটি করপোরেশন দাবি করছে, সড়কটি কেডিএর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে তাদের কিছু করার নেই। অন্যদিকে কেডিএ বলছে, প্রকল্পে কেবল চার লেনের কাজ অন্তর্ভুক্ত; সংস্কারের বরাদ্দ নেই, তাই তারা কিছু করতে পারছে না। ফলে উভয় পক্ষ হাত গুটিয়ে বসে থাকলেও জনদুর্ভোগ ক্রমেই বেড়েছে।
এই সড়ক দিয়ে শহরে প্রবেশ করে বান্দাবাজার, চানমারী, শিপইয়ার্ড এলাকা, দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরি, সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, আধুনিক রাইস মিল ও চিংড়ি প্রসেসিং জোনের কয়েক হাজার শ্রমিক। রয়েছে বাসস্থান ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত। অথচ প্রায় প্রতিদিন কেউ না কেউ সড়কের গর্তে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।
ইজিবাইক চালক হাসান আলী বলেন, “এই রাস্তায় ইজিবাইক চালানো মানে নিজের জীবন নিয়ে খেলা। সোজা রাস্তা খুঁজে ঘুরপথে যেতে হয়।”
মানববন্ধনে ৩১ নম্বর ওয়ার্ড আমীর নূর হুসাইন বাবুলের সভাপতিত্বে এবং ফিরোজ মাহমুদের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, ওলামা পরিষদ, শ্রমিক নেতা, সাবেক সেনা কর্মকর্তা, আইনজীবীসহ পঞ্চাশেরও বেশি ব্যক্তি। বক্তারা বলেন, “জনগণ সড়কের মালিকানা চায় না, চায় রাস্তাটি হোক। কারণ একটাই—এটা জীবন-মৃত্যুর প্রশ্ন।”